বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৫

সত্য বলতে মানা....

সত্য বলতে মানা....

নজরুল ইশতিয়াক ॥ আওয়ামীলীগ দলীয় কর্মী সমর্থকদের কয়েকটি মন্তব্য বেশ জোরে সোরে শোনা যায়। আন্দোলন সংগ্রামে সফল হলেও প্রতিবারই দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়। অতি কথন, অহংকার, দাম্ভিকতা মানুষকে তুচ্ছ করা, বোকা বানানো, যা ইচ্ছা তাই ব্যবহার করা, মিথ্যাচার, গায়ের জোরে কথা বলা, অভদ্র আচরণের হাজারো অভিযোগ দলীয় সমর্থক কর্মীদের। টিভি টকশো বক্তব্য বিবৃতিতে স্ববিরোধী, অতি অপকৌশলী, অতি অদ্ভুত, অতি কাল্পনিক অতিশয় অবার্চীন মন্তব্য করে দল ও সরকারের ক্ষতি করে এবং দেশের মানুষকে অসহায় অবস্থায় নিয়ে যায়। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলা, এক এক মন্ত্রীর এক এক কথা, যার যা বলার কথা নয় তা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত ঐতিহ্যবাহী দলটি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আওয়াজ, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অস্বাস্থ্যকর বাকোয়াজ, যোগাযোগ মন্ত্রীর হাওয়াই বার্তা, অর্থমন্ত্রীর অনার্থালাপ, দলীয় কোন কোন নেতার কান্ডজ্ঞানহীন বিকৃত বাক্যালাপ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
কর্মীদের অভিযোগ ক্ষমতায় আসার পর আমলা, ব্যবসায়ীসহ মোসাহেব আনকোরা এমন সব লোকজন ক্ষমতার চতুর্দিকে ঘুর ঘুর করতে থাকেন এবং প্রিয়ও হয়ে উঠেন যাদেরকে দলের কোন কর্মকান্ডে দেখা যায় না, সব জায়গায় এদের জয় জয়কার। এদের প্রাধান্য বাড়ে আর দলীয় কর্মীদের কমে। এমপি মন্ত্রীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা কর্মীদের সংঘাত, অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ে। আওয়ামী লীগের শত্রু  যে আওয়ামী লীগরা নিজেই এটিই সত্যে পরিণত হয়ে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে।
দলীয় সমর্থক কর্মীদের এসব অভিযোগ যে অমূলক নয় তা সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন। এতে করে সহজেই প্রমাণ হয় দলের অভ্যন্তরে ও সরকার পরিচালনায় ত্রুটি রয়েছে। পরিস্কারভাবে বললে নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে জবাবদিহীতা, দায়বদ্ধতা ও দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে। নেতৃত্ব যাচাই বাছাইয়ে ভুল রয়েছে। দলের বাইরে চিন্তাবিদদের সরল মন্তব্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ আমাদের সর্মথন প্রত্যাশা করে পরামর্শ নয়। কোন বিকল্প না থাকায় পাহাড় সমান দোষের পরও আওয়ামী লীগকেই সর্মথন করি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে।
প্রশ্ন হচ্ছে এসব অভিযোগ কি মূল নেতৃত্ব জানেন? জানলে দ্রুত সমাধান না করার কি কোন কারণ থাকতে পারে? না কি একদল মাকড়সার জালে আটকা পড়ছে দলটি?
গাছের উঁচু ডালে বসে চাটুকারিতার মিথস্ক্রিয়ায় কেবলই বন্দনা গীত গাইলেই চলবে আর নিচে নামা লাগবে না, কেউ ধরতেও পারবে না এমনটি ভাবলে দলের দ্বারা দেশ পরিচালনা হবে কিভাবে? সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন শান্তি স্থাপন কোনটাই হয় না।
অনুসন্ধানে ষ্পষ্টতই ধরা পড়ছে কর্মীদের এসব অভিযোগ অমূলক নয়। দেশ পরিচালনায় দলটির কাছে মানুষের সত্য প্রত্যাশার বিপরীতে কোথাও কোথাও আঘাত প্রাপ্তি হতাশজনক। সবচেয়ে জনসম্মুখে বড় হয়ে দেখা যাচ্ছে নেতাদের মিথ্যাচারিতা, যার ফলে দলীয় বাড়ছে ব্যর্থতা এবং কেটে যাচ্ছে গণমানুষের সাথে সংযোগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলে নেতৃত্বের  মান উদ্বেগজনক। কর্মী সর্মথক সাধারণ জনতার কাছে দারুণ হাস্য রসাত্মক হয়ে উঠছেন অধিকাংশ নেতা! টেবিলচারিতায় ফেসবুকে অনেক নেতা মন্ত্রীদের নিয়ে রীতিমত কৌতুক করে খোদ নিজ দলীয় কর্মী সমর্থকগণ। টিভি টকশো, মাঠে ময়দানের বক্তব্য প্রমান করে দারুণ খরায় কাঙাল নেতাদের চিন্তা জগত।
আওয়ামী লীগ এখনও চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে রাজনীতিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে। সবাই ছুটছে কেবলই ছুটছে, ছুটতে ছুটতে পালাতে পালাতে, অঙ্গহানি সৌন্দর্যহানি হতে হতে তারা ভুলে বসে আছেন রাজনীতি দেহটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি দেহটা শক্তিশালী না হলে কার লাভ হবে, কারা রাজনীতি দেহটাকে ধ্বংস করতে মরিয়া এটা এখনও আওয়ামী রাজনীতিকরা অনুধাবন করতে পারছেন না। স্রোতে গা ভাসিয়ে চলছেন অন্যদের মতই; যাদেরকে তারাই অবৈধ উগ্র নষ্ট ভ্রষ্ট বিশেষণে বিশেষায়িত করেন। রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা, নিজের এবং দলের মধ্যে সত্য প্রতিষ্ঠায় আদর্শিক পথ চলা এবং গণমানুষের মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া বলতে যা বোঝায়, যা বাংলার মানুষ জানে এবং জেনে এসেছে তা থেকে বহু দূরের পথে হাঁটছেন আওয়ামী রাজনীতিকরা আত্ম অহংকারের ফানুশ উড়ায়ে।
রাজনীতি যে আগের স্থানে নাই তার প্রমাণ পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক অফিস, ছাত্র রাজনীতির সুতীকাগার মধুর ক্যান্টিন কর্মী শূন্য হয়ে পড়ছে। দু-একজন নেতা এবং তাদের পক্ষের কিছু কর্মীর দেখা মিললেও রাজনীতি নেই। মুড়ি চানাচুর চা খেতে যতক্ষন সময় লাগে ততক্ষন হাজিরা দিয়ে চলে যায়। মন্ত্রী পাড়ায়, সচিবালয়ে দিবসের প্রথম প্রহরে সাধারণ দর্শনার্থীর চিত্র হতাশজনক। খোঁজ নিয়ে জানা যায় হতাশ হয়েই দলীয় কর্মী সমর্থকরা আসেন না। অধিকাংশ মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর এপিএসের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ ত্যাগী নেতা কর্মীরা। মন্ত্রী পাড়ায় খুব সকালে মফস্বল থেকে যারা মন্ত্রী মহোদয়ের সাক্ষাৎ লাভের আশায় আসেন তারা দীর্ঘক্ষন অপেক্ষার পর মন্ত্রী মহোদয়ের সাক্ষাত পেলেও সহযোগিতার আশ্বাস তেমন একটা পান না। আওয়ামী লীগের কর্মীদের সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে পয়সা খেতে পারবেন না বলে রাজাকার পূণর্বাসনেও আপত্তি দেখান না তারা। 
সাধারণ মানুষ বরং আরো এক ধাপ এগিয়ে। সাধারণ মানুষ মনে করেন গাধাকে স্বচ্ছ জল দিলেও সে জল ঘোলা করেই খাবে। উট মনে করে বালুতে মুখ লুকিয়ে রাখলে তাকে দেখা যাবে না, আর আওয়ামী মন্ত্রী-এমপিরা ভাবে গদ গদ যে তারা ছাড়া দেশ চলবে না! তাদের বোধোদয়ের সময় এসেছে যে আওয়ামী লীগ কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয় এটি একটি সংস্কৃতির উৎস থেকে জন্ম নেয়া সংগঠন। যেখানে দেশ ও দশের আত্মপরিচয় জড়িয়ে রয়েছে। বৃহত্তর স্বার্থেই দেশপ্রেমিক গণমানুষ তাদের প্রতি সহমর্মিতা সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে থাকেন। যা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হলে মহাকাল তার জবাব দেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন