বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৫

যুগোপযোগী গণতন্ত্র সময়ের দাবী

যুগোপযোগী গণতন্ত্র সময়ের দাবী

সংলাপ ॥ জোর আবেদন সর্ব মহল থেকে বর্তমান সরকারের কাছে। সংলাপ শুরু করুন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। কারণ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। রাজনীতির মাঠে যারা আছেন তারা তো অবশ্যই, বুদ্ধিজীবী, বিশ্লেষক, গবেষক সকলেরই এক কথা - সমাজে সর্বস্তরে দ্রুত সংলাপের ব্যবস্থা নেয়া। বিদেশী বন্ধুরাও পিছিয়ে নেই। তারাও যথারীতি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তা বেশ জোরের সাথে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে জনসমর্থন সংলাপের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। সকলের একই কথা দ্রুত নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে যদিও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন আছে কোন গণতন্ত্র ? সরকারী মহলেও প্রচ্ছন্ন নমনিয়তা সংলাপ আয়োজনে। সর্বদিক থেকে বিষয়টি ইতিবাচক। রাজনৈতিক দল ছাড়া যেহেতু রাজনীতি চলবে না আর রাজনীতি না থাকলে যে কোন পদ্ধতির গণতন্ত্র থাকবে কোথায়? নিঃসন্দেহে এর চেয়ে যৌক্তিক বিবেচনা আর কি হতে পারে? এমন সরল সমীকরণ অস্বীকার করবে কে?
সংলাপ বা আলোচনা যেহেতু গণতন্ত্রের একটি ভীত, সুতরাং তাকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্র মনষ্কতা নিশ্চয়ই সুচিন্তার নয়। কাজেই সর্বস্তরে সংলাপ হোক। আমাদের গণতন্ত্র ছিলো, একসময় আমরা হারিয়েছি, এখন আমরা আবার হাঁটি হাঁটি করে সেখানে ফিরে যাচ্ছি। আর সে যাওয়ার পথে দেশ ও জাতির উপযোগী গণতান্ত্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়নের দায় বর্তমান সরকারের। তারা হাত ধরে জাতিকে গণতন্ত্রেও পথে নিয়ে যাবেন।
বর্তমান সরকার জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার। দেশে যুগোপযোগী গণতন্ত্রে ফিরতে এই সরকার কর্তৃক বিভিন্ন আঙ্গিকে সংস্কার ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে যা বাংলার ও বাঙালি জাতির ঐতিহ্য রাখতে পারে। তাই আবার ফিরতে হবে শিঁকড়ের সন্ধানে এবং যাদের দ্বারা তা কার্যকর হবে তাদেরই কাছে অর্থাৎ নতুন প্রজন্মেও হাতেই তুলে দিতে হবে দেশকে গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরিয়ে আনতে। তাই সর্বস্তরে সংলাপ জরুরি।
কোনো সন্দেহ নেই গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচন অবশ্যই অপরিহার্য আর সে নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দল তো থাকতেই হবে। কিন্তু যে দলগুলো বিগত সাড়ে তিন দশক রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করে গণতন্ত্রের নামে যে বন্যতা, বর্বরতা উপহার দিয়েছিলো আমরা কি আবার তাদেরই কাছে ফিরে যাবো গণতন্ত্রের জন্য? যদিও গ্রহণযোগ্যতায় এই সরকার কর্তৃক নির্বাচন আইনগত বৈধতা আছে। সরকারী চিন্তাভাবে স্পষ্ট না হলেও কর্মকান্ডে মোটামুটি প্রতীয়মান যে খুব বেশি হার্ডলাইনে তারাও আর অবস্থান নিতে চাচ্ছেন না।
গণতন্ত্রে দেশ আছে কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য যুগপোযোগী গণতন্ত্র আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জনসমর্থন পেয়ে বছর অতিক্রান্ত করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বর্তমান সরকার। কিন্তু সেই জনগণতান্ত্রিক গণতন্ত্র এবং জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে রাজনীতির অঙ্গনে খোলনলচে পাল্টাতে হবে স্বদেশী ধারায়। এক কথায় যারা ছিলো দেশ ধ্বংসকারী, মানবাধিকার লংঘনকারী, দানবীয় রাজনীতির প্রবর্তনকারী, দুর্বৃত্তায়িত চিন্তা পরিবেষ্টিত হিংস্র শ্বাপদ তারা যেন আবার অপরিহার্য হয়ে উঠতে না পারে দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্রের নামে।
শুধুমাত্র নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার পরিচালনা করতে পারবে না। সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ায় গণদাবি, ন্যায়বিচারকে পাশ কাটিয়ে চলা, সেই সব দুর্বৃত্ত রাজনীতিকদেরকে রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার হীনচক্রান্ত রুখতে হবে। গত এক বৎসরের অভিজ্ঞতা বলছে ন্যায়বিচারের দরজা এখনো যথারীতি রুদ্ধ হয়ে যায়নি। ইঁদুর-বিড়ালের খেলা আর মিডিয়ায় নানা নাটক, সংস্কারের মৌলিকত্বকে এখন যে চোরা গলিপথের দিকেই ঠেলে দিতে চাচ্ছে, তা কি সচেতন রাজনীতিকরা অনুধাবন করতে পারছেন না? শুরুতে দৃঢ়তা না থাকলে লক্ষ্যের স্থিরতা থাকবে না, লক্ষ্যে পৌঁছানোও যাবে না।

গণতন্ত্র কোনো পণ্য নয়, যা মুদি দোকানে বিক্রি হতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলেই অমনি তা জনগণ প্রয়োজন মতো মুদি দোকান থেকে কিনতে পারবে। এর কোনো অলৌকিকত্বও নেই যা আলাদিনের প্রদীপ হয়ে আমাদেরকে গণতান্ত্রিক বানিয়ে ফেলবে কিংবা আমাদের রাজনীতিকদেরকে সত্যি সত্যিই গণতান্ত্রিক চিন্তাধারায় বদলে দেবে। এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন না। স্বাধীনতার উত্তরকালে ক্ষমতায় থাকাকালীন সব দলের রাজনীতিকদের চরিত্রগুলো দেশবাসীর কাছে একেবারেই অপরিচিত নয়। এদের মধ্যে থেকে পাঁচ শতাংশ বের করা যাবে না যাদের ন্যূনতম দেশপ্রেম ছিলো বা আছে। তাই দেশ ও জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় এনে যুগোপযোগী গণতান্ত্রিক পদ্ধতি প্রণয়ন করে নতুন প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে না দিতে পারলে বর্তমান সরকারকেও পিছু হঠতে হবে যা কোনভাবেই আকাঙ্খিত নয়। তাই সময়ের সাথে সাথে সত্য প্রতিষ্ঠার কাণ্ডারি হওয়া বর্তমান সরকারের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন