বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৭

প্রচেষ্টায় অপচেষ্টা নিয়ন্ত্রণ

প্রচেষ্টায় অপচেষ্টা নিয়ন্ত্রণ

সংলাপ ॥ বিশ্রাম কাজের অঙ্গ একসাথে গাঁথা, নয়নের অংশ যেমন নয়নের পাতা, ঠিক তেমনি সরকারী আদালতের সাথেও আইন জিনিসটা একসাথে গাঁথা। আদালত থেকে আইন আলাদা করার কথা কল্পনাই করা যায় না। আইনের বৈশিষ্ট্যই হল, ওটা প্রয়োগে একটা বৈধ প্রতিষ্ঠানের বৈধ অধিকার এবং বৈধ পদ্ধতি থাকে। যে কেউ যে কোন জায়গায় ইচ্ছে মত যে কারো ওপর প্রয়োগ করলে সেটা কোন আইনই নয়।
অতীত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, কুরআনের ব্যাখ্যার ব্যাপারে কোন কোন সময় প্রচুর মতভেদ হবার উদাহরণ আছে। কোন কোন সময় একই ব্যাপারে সাত বা আট রকমের আইনগত বিভিন্ন মতামত দেয়া হয়েছে। এই মতামতের সবগুলোই ধর্মের অঙ্গ নয় ও বাধ্যতামূলক নয়। এগুলো সঠিক বা ভ্রান্ত হতে পারে, কিন্তু মতামতের এই বিভিন্নতা দেশ পরিচালনার ক্ষমতাকে জনকল্যাণের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী মতটি বাছাই করার সুযোগ দেয়।
ইসলামি চিন্তাবিদরা শুধু কুরআন থেকে মতামত দেন, শাসক পছন্দ মতো তার যে কোন মত একটা আইন হিসেবে প্রয়োগ করেন। ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের শারিয়া প্রয়োগের অধিকার নেই। ইসলামি খেলাফতের কোন বিশেষ শারিয়া ছিল না। তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী আইন করেছেন, কখনো কখনো স্পষ্টতই কুরআনের বাইরেও গেছেন। বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর ধারণা মুসলমানদের জন্যই যে কি আত্মঘাতী ভয়াবহ তা পই পই করে বিশ্বে মুসলমানদেরকে এক এক করে অনেক চিন্তাবিদ দেখিয়েছেন অনেক বার। ইসলামের নামে ক্রমাগত পাইকারী হারে অবৈধ ধর্মজীবী দ্বারা জাতির ধীশক্তিকে মৃত্যুদন্ডের ফতোয়ার বা গ্রাম্য শারিয়া-আদালতে বিচারের রায়ে নারীর জীবন ছিন্ন-ভিন্ন করার মহা কলঙ্ক এই উপমহাদেশ ছাড়া আর কোন দেশে নেই। কিন্তু ইসলামি সরকার কবে হবে সে জন্য ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ইসলাম বসে থাকতে রাজি নয়, শারিয়া প্রয়োগের ওই মৌলিক পদ্ধতিতেও সে ইতোমধ্যেই একটা ফুটো বের করে ফেলেছে। সেটা হলো, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনেও যেন তেন প্রকারে শারিয়া প্রয়োগ করে সমাজকে ‘ধীরে ধীরে ক্রমশঃ’ তথাকথিত বানানো শারিয়ায় অভ্যস্ত করা। এ জন্যই ধর্মান্ধরা শারীয়ার নামে ঐ অত্যাচার-কলঙ্কগুলোর প্রতিবাদ করে না।

কুরআনের নাম করে কুরআনের, নবীজীর নাম করে নবীজীর আর শারিয়ার নাম করে শারিয়ার মৌলিক নীতিমালা লংঘন করতে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ইসলামের জুড়ি মেলা ভার। এক সাংঘাতিক গতিময়তার ভেতর দুই বিরুদ্ধ শক্তির আবির্ভাব হচ্ছে বিশ্বময়, মানব জাতির দ্রুত মেরুকরণ হচ্ছে আফ্রো-এশিয়ায় এবং পাশ্চাত্যে। বিশেষ করে এই উপমহাদেশে। বাংলাদেশের সম্পদ লুটে নেয়ার জন্য দেশের মধ্যে বিদেশী তথাকথিত দাতাসংস্থাগুলোর যোগসাজসে একদিকে ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়া হচ্ছে অপরদিকে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির জন্যে, যাতে সরকার নতজানু হয়ে তাদের হুকুম তামিল করে। আজ পর্যন্ত কোনো সরকার এর ফাঁদ থেকে বের হতে পারেনি। এই সরকার পারবে কি নিজের পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়ায়ে বিশ্বজুড়ে সত্য প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য স্থান দখল করতে? 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন