মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ইসলাম পথ খুঁজছে!


ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ইসলাম পথ খুঁজছে!

সংলাপ ॥ রাজনৈতিক অরাজকতার পরও গণতন্ত্রের চারাগাছটি এ দেশের মাটিতে ধীরে ধীরে শিকড় মেলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ যতই বিকশিত হচ্ছে এ দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতি বিকাশের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে। আজ পর্যন্ত গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার রাজনীতি এ দেশে যতটা প্রসার লাভ করেছে, সেটা সম্ভব হয়েছে শুধু এ দেশের গণতন্ত্রকে সঠিক গতিতে বিকশিত করে তোলার ব্যাপারে গণতন্ত্র চর্চায় সংকীর্ণ রাজনীতিকদের ব্যর্থতার জন্যই। তাই এটা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত একটা আদর্শিক দল সরকার গঠন করবে। সে ক্ষেত্রে ধর্মান্ধতা ও গোঁড়ামিতে আক্রান্ত বা সম্পৃক্ত দলগুলোর রাজনীতি শুধু গলাবাজি ও তর্জন-গর্জনেই পর্যবসিত হবে।
বিগত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে এ কথাটি বেশ স্পষ্ট হয়েই ফুটে ওঠে। ১৯৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে সে ব্যাপারটি সাধারণ জনগণের কাছে ততটা স্পষ্ট ছিল না। যেসব অঞ্চলে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মনগড়া ধর্মের নাম করে জনপ্রিয় অবস্থানে ছিল সেখানকার ধর্মভীরু মানুষেরা ভেবেছিল যে, সারা দেশেই বুঝি তারা একই রকমভাবে জনপ্রিয়। তাই তাদের কাছে মনে হয়েছিল যে, ধর্মান্ধরাই হয়তো সরকার গঠন করবে। জনগণের এই বিভ্রান্তির সুযোগ নিয়ে তাই ’৯১-এর জাতীয় নির্বাচনে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো বেশ কয়টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
কিন্তু ’৯৬-এর গণভোটের ফলাফল প্রকাশিত হবার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে বাংলার বুকে সরকার গঠন করার কোন সম্ভাবনা নেই। ২০০১-এর নির্বাচনে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক ইসলামপন্থী দলগুলো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে গাটছড়া বেঁধে বিএনপিকে সমর্থন জানায়।
ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো বুঝে ফেলেছে যে, যতদিন বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসাবে টিকে থাকবে, ততদিন প্রতিক্রিয়াশীল ভোটাররা বিএনপিকেই সমর্থন দিবে, ধর্মান্ধদের কেউ সমর্থন করবে না। তাই ক্ষমতায় যেতে হলে প্রথমেই তাদেরকে যে কাজটি করতে হয়েছে তা হলো ধর্মের নামে জাপা ও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। যাতে ধর্মান্ধ ও প্রতিক্রিয়াশীল ভোটারদের সামনে সমর্থন দেয়ার জন্য একমাত্র ধর্মান্ধ দলগুলো ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দল অবশিষ্ট না থাকে।
ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো এ কাজটি খুব সুষ্ঠুভাবে করে আসছিল। তারা বন্ধু সেজে, চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে, বিএনপির ভিতরে চর-অনুচর ঢুকিয়ে দিয়ে, তার প্রশংসা করে এবং দুর্বলতাগুলোর সুযোগ নিয়ে, তাকে খুব চালাকির সাথে প্ররোচিত করে, নানান রকম কুটিল শলা-পরামর্শ দিয়ে, বিএনপিকে এমন একটা রাজনৈতিক চোরাবালির মধ্যে ফেলে দিয়েছে যার মধ্য থেকে উঠে আসা তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।
হঠাৎ করে বিএনপির অভ্যন্তরস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ঘুম ভাঙ্গার ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, বিএনপিকে এই মুহূর্তে আর পরিপূর্ণভাবে ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে যে পথ ধরে ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে চলছিল, এখন থেকে সে পথ ধরে এগিয়ে চলা তাদের পক্ষে আর লাভজনক হচ্ছে না। কারণ জনগণের কাছে তাদের ধর্মীয় মুখোশ খুলে পড়েছে এমনকি বিএনপির কাছেও। এখন থেকে তাই তারা চেষ্টা করছে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি করা, যার ফলে এ দেশের বর্তমান বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এ দেশে ভবিষ্যতে নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে অসম্ভব হয়ে  পড়ে। এই রকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে তারা গোপনে সশস্ত্র আন্দোলনের পথ ধরে এ দেশের মানুষকে শঙ্কিত করে শাসনযন্ত্র দখল করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই ধরনের সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের জন্য এ দেশের ধর্মান্ধ রাজনৈতিক দলগুলো বহুদিন ধরে তাদের কর্মীবাহিনীর একাংশকে দেশে এবং বিদেশে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলেছে। দেশে একটা অরাজকতাপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করতে পারলেই তারা তাদের সামরিক কায়দায় ও সামরিক বাহিনী পুলিশ ও বিডিআর বাহিনী এবং আমলাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা চরদের সহযোগিতায় গণতন্ত্র ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে ধর্মের নামে মিথ্যাচারের সৌদি শাসন যাতে মুহাম্মদী (সাঃ) ইসলাম এবং গণতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দেশের মানুষ শান্তি (ইসলাম) নিয়ে না থাকতে পারে।
সরকারকে আরো কঠোর হবার সময় এসেছে। সাপকে দয়া দেখালে অথবা অসাবধান থাকলে ছোবল মারবেই। স্মরণ রাখতে হবে সাপের বাচ্চা সাপই হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন