বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ এর আহবানে

৮ ফাল্গুন প্রতীকি পদযাত্রা হলো
ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ এর আহবানে

সংলাপ ॥  বাংলাদেশ, বাংলা সন ও বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে ১১-দফা প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে এবারের ৮ই ফাল্গুন, ২০শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি গেটের সামনে থেকে প্রতীকি পদযাত্রার আয়োজন করে ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ। ১১-দফা দাবির মধ্যে রয়েছে * জাতিসংঘের দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ও বাংলা তারিখ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আরও জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহবান। * সর্বস্তরে বাংলা সন চালু করা এবং তারিখ ব্যবহারে বাংলা সন ও তারিখ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হোক। ২১ ফেব্রুয়ারি ৮ ফাল্গুন ঠিক রাখার আহ্বান। * মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের বীরশ্রেষ্ঠ জাতীয় বীরের মর্যাদা প্রদান এবং ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এবং একই সাথে ভাষা শহীদদের বীরত্বগাঁথা পাঠ্যসূচিভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান।
* বিদেশীদের বাংলা শেখার কারিকুলাম প্রস্তুত করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।  * প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা-এর জন্য অভিন্ন বাংলা সফটওয়্যার গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হোক। * ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি-বিজড়িত রশিদ বিল্ডিং, ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার গেট, শহীদমিনার হয়ে আজিমপুর কবরস্থান পর্যন্ত সড়কটিকে ‘শহীদ স্মরণী/ভাষা আন্দোলন স্মৃতি সড়ক’ নামকরণ করা ও নাম ফলক লাগানো হোক। * ভাষা শহীদ ও ভাষা সৈনিকদের নামে চত্বর, তোরণ, বিভিন্ন স্থাপনা, স্থান, সড়ক নির্মাণ ও নামকরণের উদ্যোগ নেয়া হোক। নাম না জানা ভাষা শহীদদের কবর বিশেষ করে ভাষা শহীদ রফিক, ভাষা শহীদ সালাম, ভাষা শহীদ অহিউল্লাহ, ভাষা শহীদ আব্দুল আউয়াল এর কবর সনাক্ত করা হোক। * ভাষা আন্দোলন স্মৃতিজড়িত স্থানসমূহ চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ভাষা আন্দোলন স্মৃতি দিবসগুলো যথাযথভাবে পালন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। * শহীদ মিনারকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করার জন্য আহবান জানানো যাচ্ছে। শহীদ মিনারের পরিধি বিস্তৃতি পবিত্রতা রক্ষা ও নিরাপত্তা বিধান করা হোক। * সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার জন্য জাতীয় সংসদে পাশকৃত আইনটি যথাযথভাবে কার্যকর করা এবং আদালতের যাবতীয় কার্যকর বাংলা ভাষায় চালু করা হোক। * ১৯৬১ সালে ১৯ মে ভারতের আসাম রাজ্যে বাংলা ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের যথাযথ সম্মান জানানোর আহ্বান।

ভাষা আন্দোলনের ঠিক ৬৪ বছর পরে হলেও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক আমতলা-সংলগ্ন কলা ভবনের গেইটে সমবেত জনতা ক্ষণিকের জন্য হলেও হারিয়ে গিয়েছিলেন ফাল্গুনের সেই দিনটিতে যেদিন ভাষার মর্যাদা রক্ষার দাবিতে রক্ত দিয়ে সম্বিত ফিরে পেয়েছিল যে, তারা বাঙালি, বাংলা তাদের মায়ের ভাষা। প্রতীকি পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন ভাষা সৈনিক ও রাজধানীর সচেতন নাগরিকবৃন্দ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লী, শিলিগুড়ি ও আসামের বাঙালি সম্প্রদায়ের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। পদযাত্রার শুরু এবং সমাপনীতে পৃথক দুটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভাষা সৈনিক অধ্যাপক ফুলে হোসেন, ভাষা সৈনিক ডাক্তার মির্জা মাজহারুল ইসলাম, ভাষা সৈনিক রওশন আরা বাচ্চু, ভাষা আন্দোলন যাদুঘরের পরিচালক এম আর মাহবুব, আসাম থেকে আগত অধ্যাপিকা মন্দিরা নন্দী, দিল্লীর ‘যমুনা নন্দীনি’ সাহিত্য ও পাঠচক্রের সাধারণ সম্পাদক শৈলেন সাহা, গঙ্গা নন্দিনী মহানগর কলকাতার সভাপতি বরুণ চক্রবর্তী। উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যে স্থানটি থেকে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা কুখ্যাত নূরুল আমিন সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাঙালি জাতি তথা বিশ্বের ইতিহাসে অমর কাব্য রচনা করেছিল সে স্থানটিই হচ্ছে আজকের দিনের ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি (ইমারজেন্সি) গেইট। প্রতীকি পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘বাংলা ভাষার আলো, ঘরে ঘরে জ্বালো’, ‘শহীদ দিবস, শহীদ দিবস, অমর হোক অমর হোক’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলে ঢাকা মেডিক্যালের সামনের গেইট। পদযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন