বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০১৭

বৈষম্যহীন মিলনোৎসব ঈদ-উল-ফিতর


ফিরোজ আহমাদ ॥ আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তির খুশি উদযাপনই হলো ঈদ। সিয়াম পালন করতে পারার বড় আনন্দে রোজাদার মাতোয়ারা হবেন এটিই স্বাভাবিক। যে প্রভুর সন্তুষ্টির জন্যে এতো আরাধনা, উপবাস, সেহরী, ইফতার, তাহাজ্জুদ, ইতেক্বাফ,  সে প্রভুর দেয়া পুরস্কার গ্রহণ করার সৌভাগ্যেই বা ক’জনের হয়। সেই পুরস্কার হলো ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর পশ্চিমের আকাশে শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজাদারের ঘরে আনন্দের বন্যা বইতে থাকে। এছাড়া ঈদ-উল ফিতরের রাত দোয়া কবুলের রাত। সুনানে বায়হাকী শরীফের ৩/৩১৯ নং হাদিসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের যে পাঁচটি বিশেষ রাতের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচটি রাতের প্রথমটি হলো জুমার রাত, ২য় হলো ঈদুল ফিতরের রাত, ৩য় হলো ঈদুল আযহার রাত, ৪র্থ হলো রজব মাসের চাঁদ উদয়ের প্রথম রাত, ৫ম হলো মাহে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত।
আইয়্যামে জাহেলীয়াতের যুগে আজকের মদীনায় তৎকালিন সময়ের ইয়াসরিবে কাফের মুশরেকরা ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ নামে দু’টো আনন্দ উৎসব পালন করতো। ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরজান’ উৎসব দু’টো বিভিন্ন নাচ, গান, কৃষ্টি-আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত হতো। আল্লাহ্ তায়ালা ঈমানদারদের খুশি উদ্যাপনের জন্য বরকতময় উপহার হিসেবে দিলেন ঈদ। ঈদ-উল ফিতর এর মধ্যে ইসলামের সুমহান আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা, সহনশীলতা,  সহানুভূতি ও বিশেষ মূল্যবোধ রয়েছে। ঈদ-উল ফিতর উদ্যাপিত হয় ঈদের নামাজ আদায় করা, দোয়া দুরূদ পড়া, তাসবিহ তাহলীল পাঠ করা ও মিষ্টান্ন ও নানাবিধ রুচিসম্মত খাদ্য ও পানাহারের মাধ্যমে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা ঈদ-উল ফিতরের দিন এতিম অসহায় দু:স্থদের ভালো খাবার ও নতুন জামা-কাপড় উপহার দেন। দেশের সকল এতিমখানা ও কারাগারগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। অসহায় দু:স্থদের মধ্যে ফিতরার টাকা বাড়তি আনন্দ প্রদান করে।
ঈদ-উল ফিতর মুসলমানদের বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার প্রতীক। সেদিন ধনী দরিদ্ররা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পরস্পর পরস্পরের সাথে  ভাব ও মত বিনিময় করার সুযোগ পান। করেন। ঈদের দিন মুসলমান অধ্যুষিত দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ তার দেশের সাধারণ জনতা ও  উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মুসলমান অধ্যুষিত দেশেবিষয়গুলো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেশের সবক’টি শিশু পার্ক, সমুদ্র সৈকত, চিড়িয়াখানা ও দর্শনীয় স্থান গুলোতে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল শ্রেণী, পেশার মানুষের ঢল নামে। ঈদ উপলক্ষে সরকারী বেরসকারী অফিস আদালত শিল্প কারখানা গুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। শহরে বসবাসরত চাকুরীজীবিরা বাবা-মা আত্মীয় স্বজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ির দিকে ছুটে যান। রেল বাস, নৌ পথে বাড়তি ভোগান্তি উপেক্ষা করে যথা সময়ে প্রিয়জনের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্য থাকে। ঈদের দিন নতুন টাকা ছোটদের বাড়তি আনন্দ প্রদান করে।

ঈদ-উল ফিতরের আনন্দকে অর্থবহ করতে অশ্লীল নাচ গানের আসর বসানো, তাস খেলা, মদ জুয়ার আসর বসানো, হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি, ব্যাভিচার ও পরনিন্দার মতো অশ্লীল মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করা, ফজরের সালাত আদায় করা, বাবা-মাকে সালাম করা, আতর ব্যবহার করা, নীরবে তাকবীর বলতে বলতে ঈদ গাঁহে প্রবেশ করা উত্তম। ঈদের   নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধকে আমাদের ব্যক্তি, সমাজ জীবনে কাজে লাগতে পারলে বাংলাদেশ একটি সুখী সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন