বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

বাংলার গণমানুষ সত্যের পথ ধরে চলছে


বাংলার গণমানুষ সত্যের পথধরে চলছে

সংলাপ ॥ বিএনপির গত সাত বছরে জনসমর্থন বাড়েনি, তবে তাদের চাটুকারের সংখ্যা বেড়েছে। এর কৃতিত্ব সরকারি দল আওয়ামী লীগের। সরকারের কাছে ঘুরে কিছু না পাওয়ার ব্যর্থতায় হতাশাগ্রস্তরা বিএনপির পাল্লায়। বিএনপির মধ্যে চলছে দলাদলি, বিশৃঙ্খলা, সংঘর্ষ। চলছে নেতৃত্বের কোন্দল। এখনো ধর্মীয় উগ্রবাদীদের মধ্য থেকে দলের কলকাঠি নাড়ানো হচ্ছে। চাটুকারিতা চলছে, কে হবে বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। বিএনপির তিন বছর গেছে স্থবিরতা কাটাতে। শুধু গতানুগতিক ধারায় রাজনীতিটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করেছে।
অতীতে নির্বাচনী ইশতেহারে বিএনপি যা বলেছিল আজ পর্যন্ত ওরা ঠিক বিপরীত কাজটিই করছে। এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি তলানিতে। প্রতীয়মান হয়েছে রাজনীতির নামে মিথ্যাচার। দূর্নীতির দায়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান, আরাফাত রহমান থেকে শুরু করে নেতা-কর্মীদের এক বিরাট অংশের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। ধরপাকড় চলছে। বিএনপির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব একটি বড় সমস্যা।
নিকট অতীতে বিএনপি প্রথম হরতাল করে ২৭ জুন, ২০১০। অনেকটা আকস্মিকভাবে। এরপর থেমে থেমে হরতাল করেছে নয় দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে হরতাল করেছে। কোনোটাই সর্বাত্মক সফল হয়নি। হরতালে মানুষের আগ্রহ কম। খালেদা জিয়া ১৪টি জনসভা, মহাসমাবেশ, বিভাগীয় সমাবেশ করেছেন এই তিন বছরে। রোডমার্চ হয়েছে এ পর্যন্ত চারটি। রোডমার্চে গড়ে তিন হাজার করে তোরণ নির্মিত হয়েছে।
এতে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সিলেট অভিমুখে রোডমার্চে শুধু হবিগঞ্জ অংশের ৮৭ কিলোমিটার রাস্তায় তোরণ বানানো হয়েছিল দেড় শতাধিক। এলাকাবাসীরা বলছে, ভবিষ্যতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী ব্যক্তিরা এসব তোরণ বানানোর খরচ দিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী, যাদের টাকার উৎস প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়।
সস্তার রাজনীতি রোডমার্চের গাড়ি বহর। বিভিন্ন সেতুতে টোল প্রদানের হিসাব অনুযায়ী সিলেট অভিমুখে প্রায় তিন হাজার, উত্তরাঞ্চল অভিমুখে প্রায় আট শ এবং খুলনা অভিমুখে প্রায় পাঁচ শ গাড়ি ছিল। রোডর্মাচের গাড়ির নম্বর টুকে রাখার কথা উঠলে শেষ দুটি রোডমার্চে গাড়িবহরের আকার লক্ষণীয় ছোট হয়ে যায়। তাদের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ঢাকা, সিলেটসহ কয়েকটি বড় শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ককটেল বিস্ফোরণে ঢাকায় একজন ও বাসে আগুনে পুড়ে সিলেটে একজন নিহত হন। এসব ঘটনায় বিএনপি ও জামাতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। জামাতের পরামর্শ ও বিএনপির মধ্যম সারির নেতাদের দিয়ে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করিয়ে ঢাকা অবরোধের পরিকল্পনা ছিল। এ খবর বিএনপির মূল নেতাদের অনেকেই জানতেন না। ফলে এর পেছনে জামাতি এক ধরনের চক্রান্তমূলক তৎপরতা ছিল বলে বিএনপির মধ্যেও অনেকে মনে করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বিএনপি-জামাতের প্রায় আড়াইশ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। মামলা চলছে। বিএনপি  এখন গণমানুষের কাছে অনেকটা বেকায়দায়।
নিকট অতীতে বিএনপির কার্যক্রমে বিরক্ত হয়ে মানুষ সরকারের দিকে যাচ্ছে। জনমত বিএনপির সংসদে অনুপস্থিতি পছন্দ করেনি এখনও করছে না। সংসদের বর্তমান বিরোধী দল কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে টিকে থাকতে হলে বিএনপির সামনে এখন দুটো পথ খোলা আছে একটি হলো সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে বিরোধী রাজনীতির শান্তিপূর্ণ পথে এগিয়ে যাওয়া। অন্য পথটি হলো মিথ্যাচারের মাধ্যমে সরকারের ব্যর্থতা দেখিয়ে সরকার পতনের জন্য রাজপথ উত্তপ্ত করা। এই দুই পথের দ্বন্দ্বের পরিণতিই নির্ধারণ করবে বিএনপির ভবিষ্যৎ।
বাংলার মানুষ বিএনপির ধ্বংসাত্মক রাজনীতিকে বয়কট করে করুণার দৃষ্টিতে দেখেন। চিন্তাবিদদের কাছে, বিনএনপি সঠিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি রাজনীতিকরা জনস্বার্থে ও জাতীয় স্বার্থে তাদের উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে পারেননি এবং রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির রাজনীতিতে গুণগত কোনো পরিবর্তন আসেনি-রাজপথ উত্তপ্ত করার হুমকি এবং সরকার পতনের আহ্বান ছাড়া। রাজনৈতিক দল হিসেবে যে দায়িত্বশীল ভূমিকা দরকার, বিএনপির রাজনীতিতে তা অনুপস্থিত। গণমানুষ মনে করে বিএনপিকে আন্দোলন করতে হবে গণমানুষের জন্যে, সত্যের পথে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল পুনর্মূল্যায়ন না করলে জামা ইসলামের ষড়যন্ত্রে রাজনীতির ময়দানে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতে হবে যেহেতু গণমানুষ রাজনীতির মাঠে সত্যের পথ ধরে চলছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন