মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সময়ের সাফ কথা .... গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা জরুরি

সময়ের সাফ কথা ....
গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখা জরুরি

শামসুর রহমান ॥ গত ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় প্রতি বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর 'আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত হয়। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রস্তাবে বলা হয়, গণতন্ত্রের কোনো একক মডেল নেই। কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সীমানায় আবদ্ধ না থেকে সার্বত্রিক বিরাজমানতা বজায় রেখেছে। গণতন্ত্রে জনগণ নিজেরাই নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছার বহি:প্রকাশ হিসেবে নিজ নিজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর সাথে সাথে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার গুলোর প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি যে গতিতে এগিয়ে চলেছে তাতে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হচ্ছে। গণতন্ত্র কি শুধুই নির্বাচন নির্বাচন খেলা না আস্থা অনাস্থার জায়গাও কিছু বাকি আছে! রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কুড়িদলীয় জোট, তৃতীয় শক্তি কিংবা সাম্প্রদায়িক শক্তির মিথ্যা আর দ্বৈতনীতির অবস্থান থেকে পরিচালিত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের জনগণকে নিজেদের কাছে টানতে ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে সরকারের দৃঢ়তা, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স', যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে অনমনীয় অবস্থানের পাশাপাশি জনকল্যাণমুখী কর্মকাণ্ড জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ও সমর্থন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দৃশ্যত ৯ মাস বয়সী বর্তমান সরকার সম্পর্কে জনগণের সমর্থনের গুণগত এই পরিবর্তনের ভিত্তি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
সম্প্রতি পরিচালিত জনমত জরিপে বর্তমান সরকার এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলগুলোর বাস্তব অবস্থান উঠে এসেছে। জরিপে বর্তমান সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে দেশের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ সন্তুষ্ট। সরকারের প্রথম ছয় মাসের কর্মকাণ্ডে দেশের ৭৫ দশমিক তিন শতাংশ মানুষ সন্তুষ্ট। দেশের  ৬৯ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ মনে করে সরকার সঠিক পথেই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। আর দেশের অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৫৩ শতাংশ মানুষ মনে করে বর্তমান সরকার তার পুরো মেয়াদ শেষ করা উচিত।
জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৫৫ ভাগ মানুষ মনে করে এই মুহূর্তেই ধর্মের লেবাসধারী দলের সংসর্গ পরিত্যাগ করা উচিত বিএনপির। আর ৭৭ ভাগেরও বেশি জনগণ মনে করে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বর্তমান সরকারের ভূমিকায় তারা সবচেয়ে সন্তুষ্ট।
শুধু ওই পরিসংখ্যানই নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি রিপোর্টেও সরকারের জনপ্রিয়তার এই উর্ধ্ব ব্যারোমিটার উঠে এসেছে। সাবেক বিরোধি জোটসহ বর্তমানে রাজনীতির মাঠে নানাভাবে সক্রিয় ওই তিন ফ্রন্টের কাছেও বিষয়টি স্পষ্ট যে, আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। আর সে কারণে রাজপথের আন্দোলনে ন্যূনতম জনসমর্থন আদায় হচ্ছেনা বলেই দলে ও জোটের ভেতরেই নানা মতের তৈরি হচ্ছে।
এই বাস্তবতা থেকেই নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। আর এতে সরকারের পালাবদল ঘটলেও সাধারণ জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হবে কতটুকু এমন প্রশ্ন সকলের। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ পরিচালনায় ধারাবাহিকতায়  মোট উন্নয়ন ধারাকে অব্যাহত রাখে।

সবদিক বিচারে গণতন্ত্রের প্রসারে দেশের সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে কি না, তা আরো বেশি করে ভেবে দেখার সময় এসেছে। সংবিধানের সংশোধনী কিংবা বিচারিক আইনের রক্ষাকর্তারা কী ভুমিকা রাখছেন তারও একটা স্বচ্ছ চিত্র থাকা জরুরী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। আর যারা প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাশকতা করছেন তাদের বিচার দেশের প্রচলিত আইনেই হবে, এমনটা না হয়ে যেন প্রতিহিংসা প্রকাশ না পায় কোনো কাজে সেটাই এখন সময়ের দাবি। গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে এ বিষয় গুলো নজর রাখা জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন