মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

জঙ্গীবাদের হুমকি মোকাবিলা সময়ের দাবি

জঙ্গীবাদের হুমকি
মোকাবিলা সময়ের দাবি

সাদিকুল হক ॥ সারা দুনিয়ায় নৃশংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টিকারী শীর্ষ জঙ্গী-সংগঠন এবার ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের শাখা স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। ইন্টারনেটে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় সংগঠনটির প্রধান শীর্ষ নেতা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে তাদের কর্মকা- ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ভারত ওই শীর্ষ নেতার বার্তাকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দেশজুড়ে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। বাংলাদেশও এই বিষয়কে খাটো করে দেখছে না। কয়েক মাস আগেও এক অডিও বার্তায় ওই নেতা বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। অনেক দিন থেকেই এই শীর্ষ জঙ্গী সংগঠন বাংলাদেশে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে চলেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এবারের হুমকি তারই ধারাবাহিকতা। তাদের মতে, এ ধরনের হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হতে হবে।
পাকিস্তান থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত অনেক দেশেই এখন এই জঙ্গী সংগঠনের পরিচয়, সাধারণ মানুষের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, লেবানন, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া, মিসর, নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ মুসলমান অধ্যুষিত অনেক দেশেই তারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। জিহাদের পতাকা ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ধুয়া তুলে সক্রিয় এ সংগঠনটি প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও মানবতার দুশমন হিসেবেই পরিচিত। তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে পবিত্র ইসলাম ধর্মের শান্তি ও সহিষ্ণুতার সুমহান আদর্শের কোনো মিল নেই। জঙ্গিবাদের নামে চরম নিষ্ঠুর ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা দুনিয়াব্যাপী ইসলামের ভাবমূর্তি কেবল ক্ষুণ্নই করছে না, বরং বিপদগ্রস্ত করে তুলছে।
বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন ডজনেরও বেশি জঙ্গী সংগঠনের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা জঙ্গীদের দেয়া তথ্যেও বলা হয়েছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসারুল্লাহ সুন্নাহ, জামাতুল মুসলিমিন, জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহ্‌রীরসহ আরো কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে ওই শীর্ষ জঙ্গী সংগঠনের যেমন মতাদর্শের মিল রয়েছে, তেমনি তাদের অনেকের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগও রয়েছে। এছাড়া ২০০২ সালে ওই প্রধান শীর্ষ জঙ্গী নেতা বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন বলেও জানা যায়। ফলে বাংলাদেশে তাদের নতুন ঘোষণাকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশই নেই।
শাখা খোলার ঘোষণা থেকে ধারণা করা যায় যে, তারা ইতোমধ্যে এখানকার কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এদের চিহ্নিত করে নির্মূল করা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে বর্তায়। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে সন্ত্রাসী ধর্মীয় চরমপন্থি সংগঠনগুলোর তৎপরতা মোকাবেলায় সরকার সফলতার পরিচয় দিয়েছে। এ কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করার বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বে দূরদৃষ্টির পরিচয় সময়ের দাবি। সমাজে বিদ্যমান পশ্চাৎপদতা, কুসংস্কার ও দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে নিজেদের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে সচেষ্ট থাকে এই উগ্র জোটটি। তারা ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টিতেও পারঙ্গম। সরকার জঙ্গীগোষ্ঠীর নেটওয়ার্ক সফলতার সঙ্গে ভেঙে দিতে পারলেও এ নিয়ে আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। শীর্ষ ওই জঙ্গী সংগঠনটি যদি সত্যিই ভারত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের সাংগঠনিক ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে থাকে, সেটাকে সর্বাত্মক আঘাত হেনে অঙ্কুরেই বিনাশ করা জরুরি। জঙ্গী সংগঠনগুলো ওই ভিডিও বার্তার পর সক্রিয়তা বাড়াতে এবং তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে উৎসাহী হবে। গোড়াতেই এদের ছিন্নভিন্ন করে দেয়া চাই। সরকার, গণতান্ত্রিক শক্তি এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকের জন্যই এটা চ্যালেঞ্জ। তারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত হয় এমন কাজ কোনো মহল থেকেই কাম্য নয়। এই সন্ত্রাসী অপশক্তিকে মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতারও প্রয়োজন রয়েছে। সম্প্রতি ভিডিও বার্তা প্রকাশের কয়েকদিন আগেই ঢাকায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধনকালে বহুমাত্রিক সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলায় একে অন্যের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন। উগ্র জঙ্গী হামলা মোকাবিলায় চ্যালেঞ্জিং মিশনে এটা অবশ্যই কার্যকর পন্থা।
বাংলাদেশে সামপ্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এখানেই থামলে হবে না। এখনো আমাদের গোয়েন্দা কর্মকা- যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। জেলখানায় বসেও জঙ্গীরা নজরদারি এড়িয়ে বাইরে যোগাযোগ রাখতে পারে। সীমান্তপথে জঙ্গীরা প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক ও আধুনিক অস্ত্র আনতে পারছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গীবাদের আর্থিক উৎস নিয়ন্ত্রণেও আমাদের ব্যর্থতা রয়েছে। এসব দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবে। পাশাপাশি ভারত ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদের হুমকি মোকাবিলায় যৌথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে নিজেদের অস্তিত্ব ও ইসলাম রক্ষার প্রয়োজনেই।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন