বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

যার দেখতে নারি তার চলন বাঁকা



যার দেখতে নারি তার চলন বাঁকা

সংলাপ ॥ কথায় আছে ‘যার দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। আমলা আর রাজনীতিক দুই স্বভাবের কাছে সমর্পিত। আমলা কোনদিন রাজনীতিক হয় না আবার রাজনীতিক কোনদিন আমলা হয় না। হলেই ব্যতিক্রম। সেখানে সংকীর্ণতা না হয় দুর্বলতা/উদারতা থাকবে। সংকীর্ণতা বা দুর্বলতা/উদারতা যেটাই থাক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়, সেটাই দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। বিবেক কাজ করে না। পান্ডিত্যের অহংবোধ ব্যবস্থাপনাকে আদর্শ ও লক্ষ্য বিচ্যুতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। আমলা আর রাজনীতিকরা সব সময় স্মরণে রেখে কাজ করেন না যে ‘রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা আর রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এক নয়
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যাওয়া যাবে না, আমন্ত্রণ করলে বা ডাকলে যাওয়া যাবে - এটা হচ্ছে বর্তমান দেশের সংসদীয় রাজনীতির এক বিশেষ আমলাতন্ত্র। তবে নিকট অতীতে সচিবালয়ে বিচারকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে দুজন বিচারককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এবং পরে তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে সংসদীয় কমিটিতে তলব করা নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছিল। বিশেষ করে পত্র-পত্রিকা ও?বৈদ্যুতিন (ইলেকট্রনিক) মাধ্যমগুলো এ নিয়ে বেশি মাতামাতি করায় সরকারকেই বিব্রত অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গণতন্ত্রে যেখানে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতার মালিক জনগণ সেখানে সংসদীয় কমিটির যে কোন আহ্বান বা প্রশ্নের জবাব দিতে কোনো মন্ত্রী বা উপদেষ্টার বা সাংসদের বিব্রত হওয়ার কারণ কি ছিল তা আজও জনগণ জানতে পারেনি।?আমলাদের মধ্যে ‘ইগো(অহংবোধ বা আত্মকেন্দ্রিকতা) কাজ করে থাকে এবং তাই স্বাভাবিক। ঔপনিবেশিকদের   ফেলে যাওয়া এই আমলাতন্ত্রের সাথে দেশের সাধারণ জনগণ এবং তাদের আশা-আকাঙ্খা, আবেগ-অনুভূতি বা চাওয়া-পাওয়ার রয়েছে বিস্তর ফারাক।?ফলে কিছু না কিছুতেই অহমিকা জনিত সংকীর্ণতায় ভোগা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু যেখানে দেশের আপামর জনগণের স্বার্থ, গণতন্ত্রের স্বার্থ সেখানে এইসব অহমিকাবোধ জাতির জন্য কোনভাবেই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। আর সে কারণেই এইসব অহমিকায় আচ্ছন্ন আমলাদের প্রয়োজন ছিল রাজনীতিতে না এসে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মত জনগুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়ে ক্ষমতার মোহে না বসে স্রেফ বাসায় বসে আরাম-আয়েশের অবসর জীবন কাটানো, যে জীবনটা এর আগে তারা কাটিয়েছেন সরকারের উঁচু উঁচু পদগুলোতে অবস্থান করে।
অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে জনগণের বিশাল সমর্থন নিয়ে জাতীয় সংসদ ও সরকার দেশের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পালন করে চলেছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আমলা ও রাজনীতিকদের  জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হলে সংসদে উপস্থিত হয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়ার মানসিকতার মধ্যে যে শুভ লক্ষণ আছে তা রাজনীতিকরা আজও উপলব্ধি?করতে পারছেন না দেখে জাতি হতবাক। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটিয়ে সরকারকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। গণতন্ত্রমনা ও দেশের কল্যাণকামী প্রতিটি মানুষই সরকারের এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সকল কর্মকান্ডে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা দেখতে চেয়েছিল কিন্তু সেখানে জনগণকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে রাজনীতিকরা আজও। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে প্রতিটি বাংলাদেশীই সমান মর্যাদার অধিকারী। নিজের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ না থাকলেই যে কোন রাজনীতিক  জাতির সামনে তার মিথ্যাচারের জন্য  বিব্রত হতেই পারেন এটাই বাস্তবতা।
এটা সব আমলা ও সব রাজনীতিকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও জাতির কাছে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক। দুঃখের ব্যাপার যে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় কলঙ্কের দাগ লেগেই চলেছে। এ দাগ সহজে মুছবে বলে কেউই আশা করছে না। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে এই প্রবাদ বাক্যটা যতই দিন যাচ্ছে ততই প্রযোজ্য হয়ে উঠছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন