জাতি সত্যের পথ ধরে শান্তি চায়
আমরা তাহাদিগকে কর্ণ, চক্ষু এবং হৃদয়
দান করিয়াছিলাম। কিন্তু
তাহাদের কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়
কোন কিছুই তাহাদের উপকারে
আসিল না; কারণ তাহারা অস্বীকার
করিত এবং যে আযাব
লইয়া তাহারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করিত
উহাই তাহাদিগকে পরিবেষ্টন করিয়া
ফেলিল। ৪৬:২৭। সত্যকে মিথ্যা
বলিয়া প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য দুর্ভোগ। ৮৩:১১।
চেষ্টা বলে শোর তুলছে। যদিও এটা নতুন নয় মোটেও। সীমাহীন ঘুষ-দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের
অবাধ লুণ্ঠন, ক্ষমতার চরম স্বেচ্ছাচারিতা,
সর্বোপরি লুটপাট ও ক্ষমতার
প্রয়োজনে ধর্মকে খেয়াল খুশিমত ব্যবহার করা এবং ধর্ম
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত ও ধর্মান্ধতাকে
প্রশ্রয় লালন-পালনে মোটেও
পিছিয়ে নেই রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষত বড়ো রাজনৈতিক
দলগুলোর মধ্যে এ প্রশ্নে
দেখা যাচ্ছে দারুণ মিল। বর্তমানে বিবেক, নৈতিকতা, মূল্যবোধ শব্দগুলোকে
সম্পূর্ণরূপে বিসর্জন দিতে একটুও
বাধেনা রাজনীতিকদের। মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা আর ধর্মীয় চেতনার
লেশ মাত্র খুঁজে পাওয়া
যাবে না এদের কর্মকান্ড, বক্তৃতা, আচার-আচরণে। আদর্শভিত্তিক একরৈখিক চিন্তাপ্রবাহের মাঝে বিবেকের অবস্থান। আর বিবেক
থেকে উদ্ভব হয় চেতনা। চেতনাকে সুদৃঢ় করে যুক্তি। চেতনা স্থান-কাল-পাত্রের উপর নির্ভরশীল। ধর্মীয় দর্শনের বিষয়বস্তুসমূহ পরস্পর
সম্পর্কযুক্ত ও নির্ভরশীল। মানুষের
সমাজ যেমন গতিশীল ও প্রতিনিয়ত
পরিবর্তনশীল ঠিক তেমনি মানুষের
ধর্মও ছিল-আছে-থাকবে গতিশীল
ও পরিবর্তনশীল। সদা সর্বদাই
পুরাতন থেকে নতুনের উত্তরণ
এবং সম্মুখমুখী। ধর্ম
সব সময়ে বর্তমান। যেহেতু
ইসলামের বাংলা নামই 'শান্তি' এবং শান্তি
বর্তমানে অন্ত:র্নিহিত। মানব
সমাজে ধর্ম কোন বিচ্ছিন্ন
ব্যবস্থা নয়। প্রাকৃতিক
সম্পদের উপর অন্যায় আধিপত্য
বিস্তার আর সংস্কার ও সংকীর্ণতার
মূল খুঁজতে গেলেই ধর্মের
উৎপত্তি পাওয়া সহজ হয়। ধর্মকে যখন আধিপত্যবাদীরা (তা সমাজের
যে অঙ্গনে বা স্তরেই
হোক না কেন) হাতিয়ার করে ফেলে
তখন ধর্মের ভয়াবহ রূপ ধরা পড়ে মানবসমাজে
উগ্র ধর্মান্ধতা হয়ে।
আধিপত্যবাদীরা সব সময়েই
ধর্মকে ছলে-বলে-কলে কৌশলে
এমনভাবে মোড়ক দিয়ে রেখে
আসছে যাতে সাধারণ মানুষের
কাছে ধর্মের আসল রূপ 'শান্তি' ও 'সত্য' না বেরিয়ে
পড়ে। তাই ধর্ম
প্রগতিশীল হয়ে মেহনতী মানুষের
হাতিয়ার হতে পারেনি, এখনও পারছে
না। এজন্য প্রয়োজন
সর্বাগ্রে ব্যক্তিস্বার্থের উর্দ্ধে
একনিষ্ঠ, শান্তিপ্রিয়, সত্যবাদী, নির্ভীক, দেশপ্রেমিক রাজনীতিক
সব দলের মধ্যে।
শ্রমজীবী মানুষ হলো ধর্মভীরু, সংগ্রামী
বিশেষ করে বাংলাদেশে। সমাজ
কাঠামো পরিবর্তন করে প্রগতির
পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার
জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন-ধর্ম সত্য
ও শান্তির আধার তা ব্যাপকভাবে
প্রচার করা। আনুষ্ঠানিকতায়
বা জীবন চলার পথে তথাকথিত
ধর্ম মানুষের প্রগতির পথে কোন পরিবর্তন
আনছে না এটা পরিষ্কার
করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য
রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে যারা
সত্যিকার রাজনীতিক হয়ে দেশ ও জাতির
জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে চায় তাদের
প্রথমে সত্যকে ধারণ-লালন-পালন করতে
হবে। ধর্মীয় গ্রন্থ
থেকে সত্যের উদ্ধৃতি দিয়ে
সার্বিক শক্তি দিয়ে মোকাবেলা
করতে হবে আধিপত্যবাদীদের - এটাই প্রকৃত
ধার্মিকের কাজ।
বাংলাদেশের বড়ো বড়ো রাজনৈতিক
দলগুলোর মধ্যে ধর্ম-ব্যবসায়ী, ধর্মবেত্তারা এমনভাবে
ঢুকে পড়ে প্রভাব বিস্তার
করে বসে আছে যাতে
মনে হয় রাজনীতিকরা আফিমের
নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। দীর্ঘ ৪০ বছরে শ্রমজীবী
মানুষকে তারা ধর্মের দোহাই
দিয়ে, প্রলোভন দেখিয়ে, ভবিষ্যতের কথা বলে মিথ্যাচারের
মাধ্যমে শোষণ এবং শাসন
করে যাচ্ছে। এদের
সঙ্গে যোগ দিয়েছে উঠতি
লুটেরা শ্রেণী। সাধারণ
খেটে খাওয়া মানুষ আজ বাংলাদেশের
রাজনীতিকদের উপর থেকে আস্থা
হারাতে হারাতে এমন এক পর্যায়ে
এসেছে যে, যে কোন সময়ে
যে কোন অঙ্গনে ধ্বংসযজ্ঞ
চললে অবাক হওয়ার কিছু
নেই। এটাই বাস্তবতা। যার কিছু কিছু নমুনা
মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে।
তাই এখনও সময় আছে। মিথ্যাচার ছেড়ে দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য রাজনীতিকরা রাজনীতি করুন। ধর্ম-ব্যবসায়ী ধর্মবেত্তারাও সত্যকে তুলে ধরুন, নচেৎ আপনাদের কথাও কেউ কানে নেবে না। বাংলাদেশে আপনাদের চেহারা জনসম্মুখে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আপনারা নবী মুহাম্মদ (সঃ) এঁর ধর্ম ইসলাম (শান্তি) প্রতিষ্ঠার জন্য কোন কর্মকান্ড করছেন না বরং সৌদী আরবের অর্থায়নে ওহাবী-এজিদি-মওদুদী পন্থা অনুসরণ করে মুখে ইসলামের কথা বলে সম্পদের পাহাড় বানানোয় ব্যস্ত। কিন্তু ভুলে যাবেন না দেশবাসী আপনাদের সব সম্পদের খবর জানে। জনগণ রুখে দাঁড়ালে মধ্যপ্রাচ্যের পোশাক সংস্কৃতি, দাড়ি-টুপি-জোব্বা আপনাদের জন্য কাজে লাগবে না। তাই তওবা করুন এবং নিজেকে চেনার জন্য সজাগ হোন। সত্য কাউকে ছাড় দেয় না। কেউই আল্লাহ্র আইনের বাইরে নয়। এটাই স্মরণ রাখার চেষ্টা করুন তাহলে দেশ ও জাতি বাঁচবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন