ভাবমূর্তি
সংকটে বাংলাদেশ !
সংলাপ ॥
ভাবমূর্তি সঙ্কটে বাংলাদেশ।
একটি উদার ও সহিষ্ণু রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জন্ম। জন্মলগ্নে
ধর্মনিরপেক্ষতা দেশটির নীতি থাকলেও চল্লিশ বছরে ধীরে ধীরে দেশটি ধর্মান্ধতা এবং ধর্মীয়
উগ্রতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। ধর্মীয় উগ্রবাদী অপশক্তি আজ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
সমাজ তথা জাতির জন্য এটি শুধু হুমকি নয় বরং গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে চিন্তাবিদরা
মনে করছেন।
ধর্ম মানুষের কল্যাণের
জন্য। যুগে যুগে এ পৃথিবীর বুকে অনেক নবী-রাসুল, আউলিয়া এবং সাধক পুরুষ
এসেছেন শুধু ধর্ম প্রচার এবং কল্যাণকর সমাজ গঠনের জন্য। ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়
- সত্যের পথ দেখায়। ব্যক্তি জীবনে - সমাজ জীবনে তথা সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায়
সাধকরা ছিলেন ও আছেন নিবেদিত প্রাণ।
বাংলাদেশের মানুষ শতকরা
৯৫ ভাগ ধর্মভীরু। আর বাকি পাঁচ ভাগের সাড়ে চার ভাগ মানুষ ধর্মান্ধদের পথের যাত্রী হয়ে
আজ ধর্মজীবী। আর এই ধর্মান্ধ উগ্রবাদীরা দেশের
রাজনীতিতে একটি মজবুত স্থান দখল করতে
উন্মাদ। ক্ষমতার লোভে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মান্ধদের বিভিন্নভাবে প্রশ্রয় দিয়ে
যাচ্ছে। ধর্মজীবীরা ধর্মকে অসৎ পথে পুঁজি করে দেশে বিভিন্ন বিশৃঙ্খলা এবং সন্ত্রাস
সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক স্বার্থে তাদেরকে ব্যবহার করার জন্য দেশে এক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদীরা দেশে তথাকথিত ইসলাম রক্ষার নামে বিভিন্ন অমানবিক তৎপরতা চালাচ্ছে।
তাদের এরূপ আচরণের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি শুধু ক্ষুণ্নই হচ্ছে না বরং শান্তি ধর্ম
ইসলাম এর প্রতি অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে সাধারণ মানুষের।
ধর্মজীবীরা আল্লাহ্র
বাণীর অন্তর্নিহিত অর্থের চেয়ে এর বাহ্যিক অর্থের ব্যাপারেই বেশি সচেতন। তাই ধর্ম ও
ধর্মান্ধতার পার্থক্য সুস্পষ্ট। ইসলাম মানুষের শান্তি ও কল্যাণের জন্য, কিন্তু ধর্মান্ধতার কারণে ধারাবাহিক উন্নতির পথটি বিপদজনক ভাবে রুদ্ধ হয়ে উঠছে।
সব দেশে ধর্মের ক্ষেত্রেই এটি এখন প্রযোজ্য। আমেরিকা-ইসরায়েল-ভারতেও ধর্মান্ধ ও উগ্রতার
ভয়াবহ পরিণতি আমরা দেখেছি। তথাকথিত ধর্মীয় রাজনীতি যে একটি দেশকে কতটা বিপর্যস্ত করতে
পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ পাকিস্তান। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশও অনুরূপ ঘটনার বর্তমান
শিকার। বাংলাদেশও এই দেশগুলোর মতো ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে।
বর্তমান সরকার বারবার
বিবৃতি দিচ্ছে এ দেশে ধর্মান্ধ উগ্রাবাদীদের ঘাঁটি নেই। অথচ দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকায়
ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে তাদের ভয়াবহ তৎপরতার খবর ছাপা হচ্ছে। অস্ত্রসহ কোনো কোনো সংগঠনের
নেতা ধরাও পড়ছে এবং ছাড়াও পাচ্ছে। বিরোধী দলীয় রাজনীতিকরা তাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে
তাদের কর্তব্য শেষ করছে। ওই বিবৃতি ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে আরও
ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মান্ধ উগ্রবাদীরাই আজ ক্ষমতার
তখ্তে কে বসবে তার জন্য উন্মাদ। দেশের রাজনৈতিক মূল ধারাকে বিনাশ করার জন্য তারা আজ
বদ্ধপরিকর। তারা মধ্যস্বত্বভোগীর কায়দায় নিজেদের অস্তিত্বকে পাকাপোক্ত করে নিচ্ছে।
ইচ্ছে মতো সংবিধান কর্তন করা হয়েছে ও হচ্ছে। বিকৃত হচ্ছে ইতিহাস আর গণতন্ত্র গণযুদ্ধে
পরিণত হতে যাচ্ছে।
যে দেশে নিজস্ব সংস্কৃতি
ও জাতীয়তা বোধের বদলে শুধু মাত্র আনুষ্ঠানিকতার ধর্মের সাথে মানুষকে বিচার করে ধর্মীয়
মূল্যবোধ ব্যতিরেকে এবং বাঙালি জাতীয়তাবোধের বাঁধনে তাকে বাঁধতে পারে না, সে দেশ হতভাগ্য। যে জাতি স্ব-ধর্মকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সেটাই
সবচেয়ে সর্বনেশে বিভেদ। মানুষ বলেই মানুষের যে মূল্য সেটাকেই সহজভাবে মানবতার দৃষ্টিকোণ
থেকে স্বীকার করাই প্রকৃত ধর্ম - সেটা ধর্মান্ধ উগ্রবাদীরা ভুলে যায় গোষ্ঠীস্বার্থে।
আমরা সেই রকম হতভাগ্য
দেশ ও জাতি হতে চাই না। জাতি আজ এ অবস্থা হতে মুক্তি পেতে চায়। জাতি প্রস্তুত। রাজনীতিক
মিথ্যাচার আর সার্বিক ধর্মান্ধ উগ্রবাদীদের সন্ত্রাসের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ক্ষেত্রও
তৈরি। কিন্তু কান্ডারী!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন