বুধবার, ৮ মে, ২০১৩

গণজাগরণ মঞ্চই জাতির প্রত্যাশা


গণজাগরণ মঞ্চই জাতির প্রত্যাশা

 

সংলাপ ॥

 

আওয়ামী লীগের মত বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি কি বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হতে চলেছে? বাংলার বিবেকবান, সত্যপ্রিয় ও শান্তিবাদী মানুষদের তাই আজ প্রশ্ন আওয়ামী লীগের আজকের এই ব্যর্থতা ও পরিণতির জন্য দায়ী কে?

বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনগণের জীবনে ভয়াবহ দুঃসহ পরিস্থিতি নিয়ে আসছে। সেই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে বিএনপি-জামাত জোটকে সন্ত্রাসী আন্দোলনের মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে কেন? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে চায় আজ বাংলার মানুষ বিশেষ করে যারা দেশকে ভালবাসে, দেশে  শান্তি ও সত্য দেখতে চায়।

চিন্তা শক্তিকে একটু কাজে লাগালেই দেখা যাবে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় অনেক নীতি-নির্ধারকের অদূরদর্শিতা, মিথ্যাচার, দেশ ও জনগণের প্রতি আন্তরিকতার অভাব, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জামাত-বিএনপির এজেন্টদের তৎপরতা এবং বিশেষ করে নগদ অর্থ-প্রতিপত্তি বাড়ানোর সীমাহীন লোভ দেশ ও দলটির আজকের পরিণতির জন্য দায়ী। বঙ্গবন্ধুর নাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের মতো ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে ব্যবহার করা হচ্ছে শুধুমাত্র কিছু নেতার ব্যক্তি ও পরিবারের কায়েমী স্বার্থ হাসিলের কাজে। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্ভরশীল এতবড় দলের যাত্রাপথ আজ যেন অত্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। দলের সুবিধাভোগীরা এ পরিস্থিতিতে চাটুকারিতা করে দেশ ও জনগণের কাছে সত্য প্রকাশ করতে দ্বিধা করছেন বলেই দলটি তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতেও ব্যর্থ হচ্ছে। তাহলে কি এমন দিন সমাগত যখন আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য কোন দল ও নেতৃত্বের পেছনে ছুটবে বাংলার জনগণ? -   প্রশ্নই আজ দেখা দিচ্ছে বাংলার আকাশে-বাতাসে।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সামরিক ও স্বৈরশাসক বলে পরিচিত এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণ কত স্বপ্নই না দেখেছিল। সাধারণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে এদেশের সচেতন ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিক-রাজনীতিক ও সংস্কৃতি কর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাটা ছিল স্বভাবতই একটু বেশী। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় নির্বাচন। সব জল্পনা-কল্পনা হিসাব-নিকাশ, আশা-আকাঙ্ক্ষার জলাঞ্জলি দিয়ে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অপ্রত্যাশিতভাবেই ক্ষমতায় চলে এলো জাতীয়তাবাদী দল ও খালেদা জিয়ার বিএনপি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ওই নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ আনলেও তার দলের ও কাছের কোন কোন নেতা যে তখন প্রার্থী মনোনয়নের বাণিজ্য প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে দলের সমর্থক তথা জনগণের আশা জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন সে ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি বলে পরিচিতদের পরাজয় এবং বিপরীতে বিএনপির ক্ষমতারোহন, বাংলার জনগণের সার্বিক অগ্রগতির পথে বিরাট এক প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কিছু ছিল না। রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপিকে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের জন্য নিবেদিত দল হিসাবে কেউই বিবেচনায় নেয় না। দলটির জাতীয়তাবাদী নামের মধ্যেই রয়েছে বিশাল পাকি দোসর ও ষড়যন্ত্রের ফাঁদ। এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ স্বভাবতই প্রগতিশীল, মুক্তমনা, সত্যান্বেষী শক্তিরই ক্ষমতায় দেখার আশা করেছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধী বিচার নিয়ে যখন আপোষকামী ষড়যন্ত্র শুরু হলো তখন নতুন প্রজন্ম জীবন বাজি রেখে মাঠে নামল। শপথ নিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না হলে ঘরে ফিরবে না। বাংলার আপামর জনগণ তাদের সাথে একাত্ম হলো। সংগ্রামী যুব ছাত্রসমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের ফসল আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারকদের সংকীর্ণতায় বাংলার ঘরে তুলে আনা আজও সম্ভব হয়নি। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জেনে ও শুনে গণজাগরণ মঞ্চের দাবী সরকারের নীতি-নির্ধারকদের দেশ পরিচালনায় তাদের অভিপ্রায় ও দৃষ্টিভঙ্গী ইতোমধ্যে আঁচ করতে পেরেছে বাংলার মানুষ। গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলা থেকেই শুরু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পেছন থেকে ছুরি মেরে সম্মুখ যাত্রা স্থবির করার প্রচেষ্টা। যার চুড়ান্ত চিত্র ফুটে উঠেছে ইতোমধ্যে। বাংলার মানুষ জানে প্রজন্ম চত্ত্বর থেকেই অহিংস গণজাগরণ মঞ্চই পারে দেশ ও জাতিকে সত্যের পথ দেখাতে। সরকার সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠে গণজাগরণ মঞ্চের সার্বিক সত্যের সহযোগীতা নিক এটাই জাতির প্রত্যাশা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন