গুজব থেকে সাবধান!
আরিফীন হক ॥ আল্লাহ্ আমাদেরকে গুজব থেকে সাবধান থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেন - “যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, তা অনুসরণ করো না। চোখ, কান ও অন্তঃকরণ প্রত্যেকের
কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (১৭ সুরা বনী ইসরাইল
: ৩৬)।
কুরআনের নির্দেশ, যে বিষয়ে তোমার জানা নেই তা অনুসরণ করো না। জানা হচ্ছে কোন বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে
পুরোপুরি নিশ্চয়তার স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া। কোন তথ্য অকাট্য ও নিশ্চিত সূত্রে সমর্থিত
না হলে তা অনুসরণ করা কুরআন নিষিদ্ধ। যদি কেউ কানে শুনে গুজবের অনুসরণ করে তবে তার
কানকে শেষ বিচারের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে - ‘তুমি কেন গুজবে কান দিয়েছিলে’? যদি কেউ কোন অসমর্থিত সূত্রের (যেমন, বদনবই বা ফেসবুক) চিত্র
দেখে গুজবের অনুসরণ করে তবে তার চোখকে জিজ্ঞাসা করা হবে - ‘তুমি কেন গুজবে চোখ রেখেছিলে’? তারপর প্রশ্ন করা হবে অন্তঃকরণকে - ‘আমি কি তোমাকে বিবেক-বুদ্ধি দেইনি? তোমাকে কি সত্য-মিথ্যা
পার্থক্য করার জন্য চিন্তাশক্তি দেওয়া হয়নি? তাহলে কেন তুমি চিন্তা-ভাবনা
না করে কানের শুনা, চোখের দেখার উপর নির্ভর করে গুজবের অনুসরণ করেছিলে’? তারপর গুজব অনুসরণ করার শাস্তি প্রদান করা হবে।
অথচ আশ্চর্যের বিষয়!
কুরআনের এই সুস্পষ্ট নির্দেশকে অমান্য করে ইসলামকে হেফাজতের নামে বাংলাদেশ এখন গুজবের
দেশে পরিণত হয়েছে। বগুড়া, ফটিকছড়ি, জয়পুরহাট, কানসাট, সাতক্ষীরা, গাজীপুরসহ সারাদেশে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে
সহিংসতায় অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। গত আড়াই মাসে দেশের ২৪ জেলার ৪২টি
স্থানে গুজব ছড়িয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেক হতাহাত এবং কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয়
সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। ফটিকছড়িতে মসজিদে আগুন লাগানোর গুজব ছড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে
কয়েকজন নিরাপরাধ যুবককে, চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখার গুজব ছড়িয়ে সৃষ্ট ভয়াবহ নৈরাজ্য প্রাণ
গেছে কয়েকজনের,
কাবা শরীফে সাঈদীর মুক্তির জন্য মোনাজাতের গুজব ছড়িয়ে কাবার
অবমাননা করা হয়েছে, আহমদ শফীকে আটক করার গুজবে নিহত হয়েছে ৭ জন। গত ৫ মে শাপলা চত্বরে
৩ হাজার মানুষের প্রাণহাণীর গুজবে হরতাল হয়েছে দুইদিন, আরো কতো কি হবে কে জানে?
গুজব ছড়ানোর মনস্তাত্বিক
কারণ সম্পর্কে দীর্ঘ গবেষণার পর মনোবিজ্ঞানী অলপোর্ট ও পোস্টম্যান সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন
যে - “গুজব মানুষের চাহিদা বা আশা-আকাঙ্খার প্রকাশ”। অর্থাৎ, যে যেই গুজব ছড়ায় সে চায় যেন সত্যই এমন কিছু ঘটুক। যেমন, যারা সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়েছে তাদের আশা যদি সত্যই সাঈদীকে চাঁদে দেখা
যেতো তবে কতোই না উত্তম হতো! যদি সত্যই কাবাঘরে সাঈদীর জন্য মোনাজাত করা হতো তবে কতোই
না উত্তম হতো! একইভাবে যারা শাপলা চত্বরে ৩ হাজার নিরীহ মানুষ হত্যার গুজব ছড়িয়েছে
তাদের চাহিদা বা আশা-আকাঙ্খা হলো - ‘আহা! যদি এমন হতো যে ৩ হাজার মানুষকেই হত্যা
করা হয়েছে তবে কতোই না উত্তম হতো’!
৩ হাজার মানুষের লাশের উপর দিয়ে উল্লাস করতে করতে তারা ক্ষমতায়
যেতে পারতো! যদিও রাজনীতিকরা মানুষের মৃত্যুতে লোক দেখানো মায়াকান্না করে, প্রতিবাদে
হরতাল দেয় কিন্তু আসলে তাদের সুপ্ত বাসনা হলো আরো মৃত্যু! হায়রে পাতকি ক্ষমতা! হায়রে ক্ষমতার রাজনীতি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন