বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা একে অপরের বিপরীত


সময়ের সাফ কথা ....
ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা একে অপরের বিপরীত


আরিফিন হক ॥ যে কোন আধুনিক চিন্তাশীল মানুষের কাছে অবধারিত ভাবে সত্য যে, সকল সম্প্রদায় মানব সৃষ্ট। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে একদিকে কিছু যুক্তিশীল ও বিশ্লেষণধর্মী মানুষ ক্রমাগত সৃষ্টি করে চলেছে নতুন নতুন উন্নত প্রযুক্তি, অন্যদিকে অধিকাংশ মানুষ অযৌক্তিক অন্ধ বিশ্বাসের অনুসারী এবং পশ্চাতমুখী হচ্ছে। এর কারণ হলো, মাত্র কয়েকজন মানুষের পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও একরৈখিকতায় সৃষ্টি হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এখনো প্রোথিত হয়ে আছে আদিম কল্পনাশ্রয়ী চেতনায়। অধিকাংশ মানুষ কয়েকজন মানুষের আবিষ্কারের সুফলভোগী মাত্র। এইসব মানুষ এখনও আদিম মানুষের মতোই হাবুডুবু খাচ্ছে অজানার সমুদ্রে। আদিম মানুষের সৃষ্ট সম্প্রদায় এখনও এইসব মূর্খ মানুষের অন্ধত্ব টিকিয়ে রাখছে। সাম্প্রদায়িক শিক্ষা মানুষের যৌক্তিক বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটিয়ে মানুষকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পরিচালিত করার পরিবর্তে অবৈজ্ঞানিক, অন্ধবিশ্বাস আর নিয়তি-নিভর্রশীল এক নিশ্চল মানুষে পরিণত করছে, এবং মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টিতে সাম্প্রদায়িক পুস্তিকা ও বক্তব্য প্রচার বিশেষ নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
সাম্প্রদায়িক পুস্তিকাগুলো মূলত আজগুবি মনগড়া কল্প-কাহিনীতে ভরপুর। এসব পুস্তিকায় কোন ধর্ম শিক্ষা নেই। অবশ্য অনেক পন্ডিত ব্যক্তিরাও ভুল বুঝে সাম্প্রদায়িক পুস্তিকাকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে মানুষের ধর্মবোধের সাথে তথাকথিত সাম্প্রদায়িকতার কোন সম্পর্ক নেই। ধর্মের কাজ সত্যকে উন্মোচিত করা আর সাম্প্রদায়িকতা করে তার ঠিক উল্টোটা! সাম্প্রদায়িকতা অযৌক্তিক কল্প-কাহিনীর রচনা দ্বারা অন্ধতা ও অজ্ঞতার বিস্তার করে এবং সত্যকে আড়াল করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। যৌক্তিক কোন পরিণতির দিকে মানুষের চেতনাকে পরিচালিত করার পরিবর্তে তাকে অযৌক্তিক ও হিংসার জগতে নিক্ষেপ করে। সাম্প্রদায়িকতার প্রভাবে মানুষ বাস্তবতার পরিবর্তে অবাস্তবকে গ্রহণ করে। এই পরিণতিতে দেহের বল আর মস্তিষ্কের বুদ্ধি খাটিয়ে জীবন আর জগতের উন্নতি সাধন করার পরিবর্তে মানুষ পরস্পরের সাথে হানাহানি ও কাটাকাটিতে ব্যস্ত থাকে। সাম্প্রদায়িকতা নিজেকে ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ার পরিবর্তে পশ্চাতমুখী করে তোলে! মানুষের অগ্রগতি ব্যাহত হয় পদে পদে !
মানব ইতিহাসের অতি শৈশব কালেই যখন ব্যক্তিস্বার্থের মধ্যে দ্বন্দ্ব  দেখা দিয়েছে তখন দ্বন্দ্বের নিষ্পত্তি করতে ধর্মের উদ্ভব ঘটেছে। ধর্মের উদ্ভব মানুষের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই। এই প্রয়োজন কখনো শেষ হবে না। মানব জাতি পৃথিবীতে যতদিন টিকে থাকবে ততদিন মানব সমাজে ধর্মের প্রয়োজন থাকবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থেই প্রয়োজন হয়ে উঠে একে অন্যের সহযোগিতা করার ! আধুনিক মানুষের কাছে ধর্ম শিক্ষার ভিত্তি হবে তাদের উন্নত মস্তিষ্কের বুদ্ধি, বিবেচনা খাটিয়ে - 'সকল মানুষ এক ও অভিন্ন প্রজাতি' - এই বৈজ্ঞানিক সত্যটি মনে রেখে এমন ন্যায় নীতি প্রতিষ্ঠা ও পালন করা যা সকলের জন্য একটি শান্তিময় পৃথিবী নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
সাম্প্রদায়িক পুস্তিকার পঠন ও আবৃত্তি এবং কোন বিচার বিশ্লেষণ ছাড়াই এই সকল পুস্তিকাগুলোর সবকিছুই গ্রহণ আর পালনের মাধ্যমে কেউ সত্যিকারের মানুষ হতে পারে না, কারণ এর অনেককিছুই অবৈজ্ঞানিক এবং কল্পনা প্রসূত এবং মানুষে মানুষে মিলনের পরিপন্থী ! মানব ধর্মই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ধর্ম। মানবজাতি একই প্রজাতি। জাত-পাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এই পৃথিবীর সকল মানুষের কল্যাণ হয় এমন নীতি-আদর্শ গ্রহণ ও পালন করা হচ্ছে মানব ধর্মের মূল। মানব ধর্মের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই এই পৃথিবী সকলের জন্য কল্যাণময় আবাসস্থল হতে পারে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন