বুধবার, ৪ জুন, ২০১৪

সঙ্গীত ও আত্ম-সংস্কার


সঙ্গীত ও আত্ম-সংস্কার

॥ ড. সাইম রানা ॥

ইন্দ্রিয়কে বশ্যতায় রেখে আত্মার উন্নতি করা হয় একথা সকলেই জানেন। কিন্তু তাকে সবসময় নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হয় না। কারণ রিপুর ফাঁদে পড়ে কোনো কোনো ইন্দ্রিয় হঠাৎ চঞ্চল হয়ে ওঠে এবং আত্মাকেই বিপথে পরিচালিত করে। ইন্দ্রিয়ের নিজস্ব খাদ্য চাহিদা আছে, যেহেতু তারা দেহ ও মনের গঠনে কাজ করে। কিন্তু কখনো কখনো দেহ-মনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়ে যায় এমন চাহিদা লক্ষ্য করা যায়। রিপু সেই চাহিদার জোগান দেয়। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান থেকে খাদ্য নির্বাচন করে রিপু তার দায়িত্ব পালন করে। ফলে ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজনাতিরিক্ত চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে রিপু বিপদগামী হয়ে পড়ে। উন্নত ও স্থির মানুষ এই খাদ্য জোগানকে ভারসাম্যতার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করে। জ্ঞান ও প্রজ্ঞা কিংবা পরিচর্যাশীল মানুষই এই ভারসাম্য রাখতে পারেন। যারা পারেন না তাদের কোনো না কোনো ইন্দ্রিয় ফুঁসে ওঠে, বিপথে ধাবিত হয় রিপুর তাড়নায়। তখন নীতি ও মহৎ অনুশীলন থেকে মন ধীরে ধীরে সরে দাঁড়ায়।
ইন্দ্রিয় তিন প্রকার। কর্মেন্দ্রিয়, জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং অন্তরেন্দ্রিয়। কর্মেন্দ্রিয় পরিচালিত হয় বাক্‌ (কণ্ঠ), পাণি (হাত), পাদ (পা), পায়ু (মলদ্বার), উপস্থ (লিঙ্গ) এই পাঁচটি নিয়ে, জ্ঞানেন্দ্রিয় পরিচালিত হয় চোখ কান নাক জিহবা ও ত্বক এই পাঁচটি দিয়ে এবং অন্তরেন্দ্রিয় পরিচালিত হয় মন বুদ্ধি অহংকার ও চিত্ত এই চারটি নিয়ে (সংসদ : ৮৯)। ইন্দ্রিয়ের প্রত্যেকের নিজস্ব কর্মপ্রক্রিয়া থাকলেও তারা যেহেতু যৌথভাবে কাজ করতে অভ্যস্থ, ফলে যৌথকর্মে যে যত ঐকতানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে সে তত সার্থক বিবেচিত হয়। শিল্প মাধ্যমের ভিতরে সঙ্গীত এ সবচেয়ে বেশি ইন্দ্রিয়ের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। যে কোনো শিল্পমাধ্যমেরই নিজস্ব গুণ রয়েছে, তা সত্ত্বেও সঙ্গীতের বিশেষ গুণ হলো অল্প কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আনন্দ দিতে সক্ষম হয়, বিষাদে ভরিয়ে তুলতে পারে এবং মুহূর্তেই স্রোতার মন ইহজগতে থাকে না এবং তার চেতনার স্তর উন্নত হয়, মহাকালের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। (সুচেতা : ১১৯) এর পিছনের কারণ হলো অধিক সংখ্যক ইন্দ্রিয়ের ঐকতানিক কর্মপ্রক্রিয়া। গায়ক কিংবা বাদক সংগীত পরিবেশনের কালে বাক, পাণি, পাদ, চোখ, নাক, কান, জিহ্বা, মন, বুদ্ধি, অহংকার, চিত্ত এতগুলো ইন্দ্রিয়কে সমন্বয় করেন। যা চিত্রকলা বা কবিতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আবার স্রোতার কাছে  হয়তো বাক কিংবা পাদ, পাণির প্রয়োজন হচ্ছে না, তা সত্ত্বেও অন্য শিল্পের তুলনায় ইন্দ্রিয় সম্পৃক্তি বেশি থাকে।
মানুষ প্রতিনিয়ত যে নতুন নতুন সংকটের মুখোমুখি হয়, অভিজ্ঞতার আলোকে তা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। যে যত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে সে তত নিজেকে উন্নত ও পরিব্যপ্ত করতে পারে। শিল্পবোধ ও শিল্পের পরিচর্যায় যে অভিজ্ঞতা হয়, তা দিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত সঠিক হলো কি হলোনা তা পরিমাপ করা সহজ হয়ে থাকে। এ কারণে দেখা যায় গ্রামীণ জনগণের অধিকাংশই নিরক্ষর হয়ে থাকলেও চিরন্তন সত্য প্রবাদ বা বচন সৃষ্টি করতে পারে বিভিন্ন ধরনের লোকপরিবেশনা করে বা দেখে। প্রাচীন গ্রীসের মানুষেরা শত শত মাইল অতিক্রম করে নাটক দেখার জন্য রোম শহরে আসতো। হেগেল বলেছেন কলাক্রিয়া বিপরীত ভাবসমূহকে জয় করে মূল উদ্দেশ্যকে তুলে ধরে, এখানে বিপরীত ভাব বলতে ইন্দ্রিয়ের কথা বলা হয়েছে। একারণে শ্রীআনন্দ স্বামী কোনো মানুষকেই সামাজিক মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেন যদি না সে কোনো ভাবে শিল্পী হন। (সুচেতা : ১৭৮-৭৯)
ধর্ম যখন সংস্কৃতির প্রবাহমানতা থেকে দূরে সরে যায়, তখনই কুসংস্কার এসে ভর করে। বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম খুব বেশিদিনের নয়। কিন্তু তার আগেও মানুষ সভ্য ছিল। সভ্য ছিল বলেই ধর্মবোধ সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাচীন সভ্যতায় মানুষদের সভ্যভাবনার ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে গুহাচিত্র, ভাষ্কর্য কিংবা সঙ্গীতের অপরিহার্যতা প্রমাণিত হয়, কারণ কোনো ধর্মই সুর বিচ্যুত থেকে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে নি। ড. স্যামুয়েল জে ফ্লেচার বলেছেন 'ক্রোম্যাগনান বা আদিমানব শ্রেণীভুক্ত নিয়ানডারথালদের হাতেই প্রথম সঙ্গীতের নথিকরণ' (প্রসেনজিৎ, ভূমিকা-৭)। সে কারণে বলা যায় হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা ইসলাম সবই আরোপিত ধর্ম আর সঙ্গীত, নৃত্য, অভিনয় এগুলো সহজাত ধর্ম। সহজাত ধর্মের চর্চার মধ্য দিয়েই আরোপিত ধর্ম টিকে থাকে। এই কারণে সংস্কৃতিতে আরোপিত ধর্ম কোনো কারণে কখনো প্রভাব বিস্তার করলেও মানুষের মনন থেকে মুছে ফেলতে পারে না এবং এক পর্যায়ে শিল্পেরই জয় হয়। এ কারনে শিল্পকে আরোপিত ধর্মের অনুসারীগণ গুরুত্বহীন করে তুলতে বা বিনোদনের উপাদান করে তুলতে সচেষ্ট থাকে।
আত্মা এবং সংস্কার। এই দুটি বিষয় আজকের উপপাদ্য বিষয় হলেও আত্মা সম্পর্কে দার্শনিক ও ধর্মবেত্তাগণ যতধরনের ব্যাখ্যা হাজির করেছেন, তা থেকে এখনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি যে, আত্মা আসলে কী। কী রকম তার রূপ। কিন্তু সকলেই এটা অনুধাবণ করতে পারে যে মানুষের অভাবনীয় শক্তি আছে, প্রাণবায়ু থাকা পর্যন্ত তার প্রয়োগ করতে পারে সে। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে গেলে তার সবকিছুই থেমে যায়। এক্ষেত্রে আত্মা নামক শক্তিই দেহকে পরিচালিত করে । কিন্তু তার মুক্তি ও সুস্থতার জন্য আত্মাকে বিশুদ্ধ রাখা সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। কারণ আত্মা অশুদ্ধ হলেই মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারায়। যত ধর্ম, জ্ঞান, দর্শন, শিল্প, প্রজ্ঞা সবই আত্মাকে সংস্কারের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছে।
এই বিচারে সঙ্গীত আত্মমুখীনতা তৈরি করে। বারবার পরিবেশনার মধ্য দিয়ে আত্মমুখীনতাকে সুশৃঙ্খল করতে হয়। একারণে যেখা গেছে সিন্ধু প্রদেশে আবদুল লতিফ শাহ'র মাজারে শতবর্ষ ধরে একটানা সঙ্গীত চলছে। মানুষ যখন আত্মমুখীনতা থেকে বিচ্যুত হয় তখন প্রকৃতির যাবতীয় শক্তি দুর্বল চিত্তকে প্রভাবিত করে এবং ভয় পেয়ে কাচুমাচু করে ওঠে। তখনই কু-সংস্কার এসে দানা বাঁধে। সত্যান্বেষণ অপেক্ষা পুরোনো দৈব ধারণার প্রতি ঝুঁকে পড়ে।
আরেকটি বিষয় হলো অতীন্দ্রিয়বাদ। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির আকাঙ্খা রয়েছে। যেমন ঈশ্বরকে পাওয়ার আকাঙ্খা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এই ঈশ্বর সন্ধানের উদ্দেশে নানা পথ ও মত সৃষ্টি করেছে। অনেকে বলেন ঈশ্বর নাই, সে ক্ষেত্রেও বলা যায়, তার দেখার আকঙ্খা থেকেই এই কথাটি বলেন। কিন্তু যিনি বলেন দেখেছেন, তিনি কিভাবে দেখলেন, কেমন তার রূপ। বা কোন প্রক্রিয়ার মধ্যে  দিয়ে ইশ্বর ধরা দিতে পারে। সম্ভাব্য উপায়ের মধ্যে সঙ্গীতই মুখ্য। সূফীদের জিকির, ইসলাম অনুসারীদের ক্বাসিদা, হাম্‌দ-নাত, কাওয়ালি, আসুরা, তাজিয়া; হিন্দুদের বেদপাঠ, ধ্রুপদ, মন্ত্রজপ; ইহুদিদের সেফারডিক সঙ্গীত; সিন্তোদের কাগুরা; খ্রিষ্টানদের গ্রেগরিয়ান চ্যান্ট; রাস্তাফারাইদের রেগে মিউজিক ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মচর্চা ও আত্মিক উন্নতি ঘটায়।
আত্ম নিয়ন্ত্রন ও উন্নতির মাধ্যমেই আত্ম-সংস্কার হয়। নিয়ন্ত্রনের জন্য আরো অনেক পথই কালে কালে তৈরি হতে দেখা গেছে, যেমন তন্ত্রসাধনা, জাদুবিদ্যা, যোগবিদ্যা, সিলভা মেথড, মেডিটেশন, বাউল-সন্ন্যাস জীবন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে তারা নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। কিন্তু কোন পথই আনন্দময় নয় বরং কঠিন কষ্টসাধ্য, পরম ধৈর্য্যসহিষ্ণু ও পরীক্ষালব্ধ। সঙ্গীতও তপস্যার। তবে তা আনন্দময়। ফলে কোনো সাধক বা সাধন পথের অনুসারীগণ সাধনার উন্নতির জন্য এই শিল্পমাধ্যমের আশ্রয় গ্রহণ করেন নি, এমনটি বিরল।
মানুষ প্রতিনিয়তই সংস্কারিত হয়। শিক্ষা-বিদ্যা-প্রজ্ঞা যার মধ্যে আছে, সেই ব্যক্তি নিজেই সংস্কারের পথ খুঁজে পায়। যারা পায় না তাদের জীবনের সার্থকতার স্বাদকে দ্বিধায় পরিণত করে, ঘোরপাকে পড়ে অর্থহীন করে তোলে। ধর্মানুশীলনকারীদের মধ্যে এই ঘোরপাকে পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বিশ্বাস ও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থেকে জীবন-জিজ্ঞাসার উত্তরমালা খুঁজতে তারা ভয় পায়। জরিপ করলে দেখা যাবে, যারা সংস্কৃতির চর্চা থেকে দূরে থাকে, তারাই এই দূর্বিপাকে নিমজ্জিত থাকে। প্রদীপের শিখাকে তুচ্ছজ্ঞান করে প্রদীপদানী নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে। কিতাবের অমূল্য বাণী যে সুরের মাধ্যমে স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়, তা থেকে দূরে থেকে কিতাবকে সযতনে রাখাটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং অদ্ভূত কথা হলো, তারা বলে তারা ঈশ্বরের গুণে গুণান্বিত হতে চায়। অথচ প্রভুর গুণকে ধারণ করতে ভয় পায়।
প্রভু সৃজনশীল। সেই গুণ তিনি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। সৃজনশীল মানুষ ছাড়া সৃষ্টির মূল্যকে কতটুকু বোঝা যায়। আবার প্রভু অধরা। তাকে ধরার জন্যে, দেখার জন্যে মানুষ প্রতিনিয়ত অন্বেষায় থাকে। কিন্তু প্রভু বলেছেন তোমরা আমাকে পাবে আমার সৃষ্টির মধ্যে। অতএব সৃষ্টির উপলব্ধি স্রষ্টা ছাড়া কে বেশি বুঝতে পারে? সৃজনশীল মানুষই পারে সৃষ্টির মাহাত্ম্য উপলব্ধি ও বর্ণনা করতে পারে। এক্ষেত্রে চিত্রকর সৃষ্টির রঙ ও রূপকে            তুলে আনেন ক্যানভাসে। আর সঙ্গীত শিল্পী প্রকৃতির ধ্বনিকে আয়ত্ত করেন, সেই ধ্বনি যে রূপের প্রতিনিধিত্ব করে, সেই রূপকে মনের আকাশে ছড়িয়ে দেন অবারিত সুরের বিস্তারে। একারণে অপরিণত মানুষের কাছে গানের কথায় মাখানো অর্থগুলো ভালো লাগলেও পরিণত মানুষ এটুকুতে খুব বেশি কিছু আস্বাদনের উপাদান খুঁজে পায় না। তখন সে খোঁজে বিমূর্ত ও অশেষ সুরের জানালা। সমুদ্র থেকে ভেসে আসা গর্জনের মতো কিংবা মহাকাশ থেকে নক্ষত্রের বিস্ফারিত শব্দকে কান পেতে শুনতে চায়। পিথাগোরাসের মিউজিক স্ফিয়ার্স বা রবীন্দ্রনাথের বিশ্বতানের অন্বেষা করে।
'যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি বিশ্বতানে
মেলাবো তাই জীবন গানে।'
অথবা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানে-
'ঐ মহাসিন্ধুর ওপার থেকে
কী সংগীত ভেসে আসে।'
সেই সঙ্গীতের রূপরেখা আমাদের রাগ-রাগিনী, তারানা-তেলেনার মধ্যে রয়ে গেছে।  

ইশ্বর যদি সারাবিশ্বের প্রতিপালক হয়ে থাকেন, যদি একটি নির্দিষ্ট কৌম বা আচার-কৃত্যের না হয়ে থাকেন তাহলে তিনি সার্বজনীন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি এই সার্বজনীনতার মর্মার্থ বোঝে না বলে প্রতিনিয়ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এবং অন্য কৌমের সাথে বিবাদে জড়ায়। সঙ্গীত সার্বজনীন শিল্পমাধ্যম। চিত্রকলা বা ভাস্কর্যের ন্যায় এর ভাষা সার্বজনীন। ফলে দেখা যায় মহান কবি ও সঙ্গীতজ্ঞরা প্রেম ও প্রকৃতির কবিতা-গান রচনা করেছেন এবং তারই মধ্যদিয়ে অন্তরকে পবিত্র করেছেন। এই পথে তাঁরা উপাসনা করেছেন। 'এক একজন কবি, এক একজন চিত্রকর কিংবা কোনও কোনও ভাস্কর জন্মগ্রহণ করেন কোনও ধর্মমতের দ্বারা। দেশকাল পরিবেশের দ্বারা আচ্ছন্ন হন না তাঁদের কোনও ধর্মমতের দ্বারা এবং তাঁদের শিল্পসৃষ্টির মধ্য দিয়েই তাঁরা পৃথিবীর সর্বপ্রকার কুশ্রীতা, কুসংস্কারাচ্ছন্নতা এবং নানা রকম ক্ষুদ্রতা থেকে মুক্ত হন এবং ধীরে ধীরে তাঁদের অজান্তে সেই অনন্ত উপলব্ধির পথে পৌঁছে যান। ঈশ্বরকে একান্তভাবে অবলম্বন করেছেন অথচ কোনও সামপ্রদায়িকতার মধ্যে জড়িয়ে পড়েন নি, কোনও সংস্কার ছিল না অথচ মনে ছিল সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ করার প্রবণতা।' (সুচেতা : ২২৪) এই ধরনের মহামানব পৃথিবীতে অসংখ্য। হাফিজ, জালালুদ্দিন রুমি, ওমর খৈয়াম, কবীর, তানসেন, মঈন উদ্দিন চিশতি, নিজাম উদ্দিন, দাদু, লালন, মনমোহন, নজরুলের মতো মহামানবের নাম বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের দায়িত্ব এখন শুধু তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করা এবং তাদের সৃজন কর্মকে উপলব্ধি করা। প্রতিটি মানুষের ভিতরেই সৃজনশীলতা রয়েছে। কিন্তু সংস্কার সকল রাস্তাকে বন্ধ করে রেখেছে। তা থেকেই আমাদের মুক্ত হওয়া। 'অরূপবীণা রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে' তা শোনার জন্য কান পাততে হবে। ধুয়ে মুছে মন পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া নিস্তার কোথায়?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন