নতুন দিনের ভাবনা
....
জঙ্গিবাদ দমনে চাই
গণপ্রতিরোধ
মাসুম ॥ সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক সহিংসতার
কারণে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষসহ আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন
খাতের উপর আসছে বড় আঘাত। হরতাল-অবরোধের নামে যে তাণ্ডব চলেছে তা কখনোই গণতান্ত্রিক
হতে পারে না। এখন অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে বড় প্রতিবন্ধক হলো জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে
এখনই ঐক্যবদ্ধভাবে বাধা দেয়া না গেলে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। জঙ্গিবাদ ও রাজনৈতিক
সহিংসতা বন্ধে এখন জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণপ্রতিরোধের বিকল্প নেই।
মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল এমন একটি সমাজ গঠিত হবে যেখানে
প্রত্যেক ব্যক্তি মানব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হবে। বঞ্চিত মানুষদের মুক্তি পেতে হলে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা পুনর্জীবিত করতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না তাদেরকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। তা না হলে এ সমাজ মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার আলোকে প্রতিষ্ঠিত হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সব শক্তিকে একত্রিত করতে হবে। দেশের
রাজনীতি হতে হবে জনকল্যাণমুখী।
বাংলাদেশ কারও একার পেশীশক্তির দেশ নয়, সকল ধর্ম, বর্ণ,
জাতিগোষ্ঠীর মানুষের। এদেশ যতটুকুই মুসলমানদের ততটুকুই হিন্দুর, বৌদ্ধের, খ্রীস্টানের।
সামপ্রদায়িক হামলার পেছনে মূল কারণ দুটি- ধর্মভিত্তিক রাজনীতি
আর বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। যতদিন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে ততদিন এ ধরনের
হামলা বন্ধ হবে না। এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা মাধ্যম, ইংরেজী মাধ্যম আর আরবী মাধ্যমে
তিন ধরনের চিন্তার মানুষ সৃষ্টি হচ্ছে। অসামপ্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত
করতে হলে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন অপরিহার্য।
এবার আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী যে দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছে তাতে
দেশবাসী হতবাক ও মর্মাহত। এ ধরনের ঘটনা বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা ও সংবিধানের পরিপন্থী। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস
করে না। এদের মোকাবেলা করতে হলে দেশের তরুণ সমাজকে সংগঠিত করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক
আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে যদি প্রতিরোধ
গড়া না যায় তবে সামনে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এক হিংস্র সমাজ অপেক্ষা করছে
আমাদের সামনে। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই সামপ্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।
যশোরের অভয়নগরে হামলার ঘটনায় মূল কারণ সম্পদ লুণ্ঠন নয়,
মূল কারণ রাজনৈতিক। কেননা, যারা ভোট দিতে যাচ্ছিল তাদের বার বার নিষেধ করা হচ্ছিল,
বাধা দেয়া হচ্ছিল যাতে তারা ভোট দিতে না যায়। ভোটের পর সে গ্রামে দু'দিক থেকে হামলা
চালানো হয়েছে। যারা আক্রমণভাগে ছিল তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। যাদের মুখ ঢাকা ছিল
না তারা স্থানীয় ছিল না। বহিরাগতদের দিয়ে এ আক্রমণ করানো হয়েছে, এমনকি হামলাকারীদের
মধ্যে নারীও ছিল। যারা এ সামপ্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
দিতে হবে যাতে তারা আর কখনও এ ধরনের কাজ করতে সাহস না পায়। তবেই আক্রান্তরা সাহস ফিরে
পাবে, আবার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাবে।
পুলিশ দিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইল নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়,
গণমানুষকে এগিয়ে আসতে হবে নিজ থেকে। যারা
অভয়নগর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরার সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা অচেনা
নয়। আমাদের সমাজেরই লোক। আমরা যদি তাদের নিবৃত্ত করতে না পারি তাহলে দুর্বৃত্তদের রাজত্বই
কায়েম হবে। তাই আসুন, সবাই মিলে এই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করি। সব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে
গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন