মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪

জামাত-হেফাজত নির্ভরতায় বিএনপি ডুবেছে



জামাত-হেফাজত নির্ভরতায়
বিএনপি ডুবেছে

সংলাপ॥ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এখন মহাসংকটে। বিএনপির আন্দোলন কেবল ভুল পথে পরিচালিত হয়নি, রাজনীতির মূলধারা থেকেও দলটি প্রায় ছিটকে  পড়েছে। ডান দিকে ঝুঁকতে ঝুঁকতে ডানদিকের ডোবাতেই পতিত হয়েছে বিএনপি। এখন বিএনপিকে সাধারণ মানুষ জামাত-হেফাজতের সহযোগী দল হিসেবে গণ্য করে। গত পাঁচ বছরে জনগণের কোন সমস্যা নিয়ে তারা কথা বলেনি। উগ্রবাদী জামাত ও ধর্মান্ধ হেফাজতের ওপর ভরসা রেখে তারা কেবল সরকার পতনের আন্দোলন ও ষড়যন্ত্র করেছে। নিজস্ব শক্তি-সামর্থ্য নয়, দুই চরম প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির কাঁধে ভর করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রয়াস ছিল বিএনপির জন্য আত্মঘাতি। বিএনপি একদিকে গণজাগরণ মঞ্চকে 'নাস্তিক' বলে দূরে ঠেলে দিয়েছে অন্যদিকে হেফাজতের ১৩ দফা কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করেছে। সমপ্রতি তারেক রহমান লন্ডনে বসে '৭২ সালে প্রণীত সংবিধানকে জন-আকাঙ্খার বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। তারেক রহমান এই বিবৃতির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ্য রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। এইসব কারণে বিএনপির উপর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থানকারী সাধারণ মানুষের সমর্থন ওঠে গেছে।
জামাতের কারণে আন্তর্জাতিক বিশ্বের কূটনৈতিক সমর্থন লাভের ক্ষেত্রেও বিএনপিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আজ যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে তার অন্যতম প্রধান কারণও এই জামাত। ভারত জামাতকে শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীই নয়, বরং আপদমস্তক একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবেই মনে করে। তারপরও ২০১২ সালের ২৭ অক্টোবর ভারত সফরকালে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা ও সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি ব্যাপক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, দেশটির জাতীয় প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শংকর মেনন, বিরোধীদলীয় নেতা সুষমা স্বরাজ থেকে শুরু করে বিজেপি প্রধানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করে তার এবং তার দলের সঙ্গে আবারও কাজ করার ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। সফরের শেষ দিন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ৩ নভেম্বর ঢাকায় ফেরার প্রাক্কালে বেগম জিয়া তাকে বাংলাদেশ সফরের জন্য তার দল ও জনগণের পক্ষ থেকে উষ্ণ আমন্ত্রণও জানিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফরে এলে হরতালের অজুহাতে তিনি ঢাকায় থেকেও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করতে যাননি। আর সেক্ষেত্রে জামাতকে খুশি করার জন্যই এটি করেছেন বলে জানা যায়। এসব মিলে জঙ্গিবাদী এ সংগঠনটির কারণেই ভারতের সঙ্গে বিএনপি প্রধানসহ তার দলের সম্পর্কটি আরও নেতিবাচক ও তিক্ত হয়েছে।
রাজনৈতিক যুদ্ধে কৌশল ও মিত্রের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন ও নির্বাচনবিরোধী রণকৌশলে বিএনপি হেরে গেছে, এটা স্বীকার করেই তাকে নতুন পথচলার কথা ভাবতে হবে। অবরোধ-হরতালের নামে গাড়ি পোড়ানো কিংবা মানুষ মারার আন্দোলন করে যে জনসমর্থন পাওয়া যায় না, সে কথা বিএনপির নেতৃত্ব যত দ্রুত অনুধাবন করবে, ততই বিএনপির মঙ্গল। বিএনপি নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতেই হবে - তারা রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারায় আসবে না কি জামাতের ফাঁদে পা দিয়ে ধর্মভিত্তিক জঙ্গী সংগঠনে রূপান্তরিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন