স্বদেশের উপকারে
নেই যার মন
কে বলে মানুষ তারে
পশু সেইজন
মাসুম ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর
সহিংসতায় নিহত হয়েছে অন্তত ২১ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক। ভোট চলাকালীন সময়ে জামাত-বিএনপির
নেতাকর্মীরা নির্বাচন বানচাল করতে সারা দেশে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে। এতোদিন
সহিংসতার অংশ হিসেবে পোড়ানো হয়েছিল মানুষ, যানবাহন, দোকানপাট। আর এবার পোড়ানো হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নির্বাচন ঠেকানো ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের নামে কি না করা হয়েছে? কুরআন শরিফ পোড়ানো
হয়েছে, শহীদ মিনার ভাঙা হয়েছে, মন্দির ভাঙা হয়েছে, জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয়েছে , আর প্রতিনিয়ত
মানুষ মারা হচ্ছে অস্ত্রে, আগুনে। রাজনীতির দগদগে আগুনে পুড়ছে সময়, শ্রম, অর্থ, পুড়ছে
জীবন্ত মানুষ। বাকি ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া!
গত তিন মাস ধরে অব্যাহতভাবে এ নারকীয় তান্ডব চলছে। আর এসবকেই
অভিহিত করা হচ্ছে গণতন্ত্র ও জনগণের সংগ্রাম বলে! দেশের মানুষকে গৃহবন্দী করে তাদের
স্বাভাবিক জীবনের গতিরোধ করে এবং তাদের জীবন ও সম্পদকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে সামান্যসংখ্যক
রাজনীতিকের এ নারকীয় উৎসবকে আর যাই হোক, গণতন্ত্রের সংগ্রাম বলা যায় না। গণতন্ত্র মানে
জনগণের শাসন।
জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার নামে জনগণের জীবন ও সম্পদের ধ্বংস
করা গণতন্ত্রের সংগ্রাম হতে পারে না কিছুতেই।
আক্ষরিক অর্থে, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুড়েছে সেগুলোর
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হয়তো বেশি না। কিন্তু প্রতিকী অর্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে
মানুষ নিমার্ণের পবিত্র স্থান। শিক্ষা জাতির মেরুদ-। আর সেই মেরুদ-ের নির্মাণকেন্দ্র
হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভোটকেন্দ্র নয়। ৫ বছরে ১ দিন ভোটকেন্দ্র হিসেবে
ব্যবহৃত হয় মাত্র। ভোটকেন্দ্রে আগুন দিয়ে ভোট বন্ধ করা যায় না, স্থগিত করা যায় মাত্র।
স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে আবার ভোট হবে। তাহলে কি লাভ হলো এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে?
এর মাধ্যমে বিরোধী দল কী ফায়দা তুলে নিতে চায়? নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে
যতই বিবাদ থাকুক, নির্বাচন ঠেকাতে বিরোধী দল
যতই হরতাল-অবরোধ ডাকুক, তাই বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন, শিার্থীদের বই ও আসবাবপত্র
পুড়িয়ে দেয়া কোন্ ধরনের রাজনীতি?
এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক সরকার বা বিরোধী দল নয়। এগুলোর
মালিক জনগণ। যারা আমাদের বিদ্যালয় পুড়িয়ে দেয়, তারা রাজনীতিক দলের কর্মী হতে পারে বটে
কিন্তু তারা মানুষ না। তারা পশু। এক বাঙালি কবি বলে লিখেছিলেন - 'দেশের উপকারে নেই
যার মন কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন'। মায়ের প্রতি যেমন আমাদের দায়িত্ব আছে তেমনি
দায়িত্ব আছে মাতৃভূমির প্রতি। যে যেই দলেরই হোক না কেন যাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই, দেশের
সম্পদ ও মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই তারা পশুতুল্য, রাজনীতি করার কোন অধিকার তাদের
নেই।
সরকার নয়, বিরোধী দল বুঝি না, এসব মানব রূপী পশুদের প্রতিহত
করতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। যারাই নাশকতা করবে তাদেরকেই প্রতিরোধ করতে হবে।
সাধারণ মানুষ জেগে না ওঠলে বাড়তে থাকবে নাশকতা, বাড়তে থাকবে অগ্নিদগ্ধ মানুষ আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের
সংখ্যা। দেশকে সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে হবে প্রতিটি নাগরিককে। কোনো বৈদশিক শক্তি আমাদের স্বাধীন দেশের স্বাধীনতার মান-সম্মানে আঘাত করলে যেমন প্রতিহত
করতে হবে তেমনি আপন মাটিকে রাখতে হবে রাহুমুক্ত। মায়ের অসুখ হলে আমরা যেমন বসে থাকতে পারি না, মায়ের ইজ্জতের উপর আঘাত
এলে আমরা যেমন দাঁড়িয়ে তামাশা দেখতে পারি না, তেমনি মাতৃভূমি অসুস্থ হলে, এর পরিবেশ
নষ্ট হলে, জুলুম-অত্যাচার, দেশদ্রোহীদের স্পর্ধার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে এ মাটির
সন্তান বসে তামাশা
দেখতে পারে না। নিজেদের ত্যাগের বিনিময়ে যেভাবে আমরা মায়ের প্রতি কর্তব্যপরায়ণ
হই, অনুরূপভাবে দেশের মাটির প্রতিও আমাদের হতে হবে ত্যাগী, কর্তব্যপরায়ণ। সঠিক সময়ে
যথাযথ দায়িত্ব ও ভূমিকা পালন করে প্রকৃত দেশপ্রেমের পরিচয় রাখতে হবে। তবেই মাতৃভূমির
কাছে আমাদের ঋণের ভার একটু হালকা হতে পারে, আমরা মানুষ হয়ে ওঠতে পারি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন