মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৪

নতুন মন্ত্রিসভা অপবাদ ঘুচাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লার!



নতুন মন্ত্রিসভা অপবাদ ঘুচাবে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লার!

শেখ উল্লাস ॥ ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লার জনগণ গৌরবোজ্বল ভূমিকা পালন করলেও ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর জাতীয়ভাবে এ অঞ্চল কালিমালিপ্ত হয় কিছু কিছু 'নেতৃস্থানীয়' ব্যক্তিবর্গের কারণে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল হৃদয়ের উদারতার সুযোগ নিয়ে তারই দলে এমন কিছু লোক (উদাহরণস্বরূপ: খোন্দকার মোশতাক) আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসীন হয়েছিল যারা পরবর্তীকালে দেশ, জাতি ও নিজ নিজ এলাকার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। বস্তুত ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে যারা এ অঞ্চল থেকে এমএনএ ও এমপিএ নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের অনেকেই ছিল খোন্দকার মোশতাকের পছন্দের লোক এবং তারা নিজেরাও খোন্দকার মোশতাককেই পছন্দ করতো। বঙ্গবন্ধুর আমলের তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী তাহের ঠাকুরের নাম এ ক্ষেত্রে বেশি উল্লেখযোগ্য। ৭৫'র ১৫ আগষ্টের পর তাই তাদের অনেককেই আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে একাত্ম হতে দেখা যায়নি বরং বিরুদ্ধ পথে যাওয়ার চেষ্টা করেছে অনেকে। এছাড়া, জামাতের প্রধান নেতা গোলাম আজম, বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনী রশিদ- এদের জন্মস্থানও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায়।
এসব কারণে এক ধরনের অপবাদের মুখোমুখি হতে  হয়েছে সমগ্র এলাকাবাসীকেই।  অনেক ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হতে থাকে আওয়ামী লীগের মধ্যে। জাতীয় রাজনীতি এবং স্থানীয় প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রেও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় তৈরি হয়েছে শূন্যতা। অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল মানুষেরা পিছিয়ে গেছে। এর পরিণতিতে '৭৩ এর নির্বাচনের পর অধিকাংশ এলাকাতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয়লাভ করা সম্ভব হয়নি, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার কোনো নেতার পক্ষে পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া তো ছিল দূরের ব্যাপার। শুধু এবারের মন্ত্রিসভায় ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার তিন জন পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এরা হলেন -আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (কসবা নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপি), মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক (নাসিরনগর নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপি) এবং খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম (ঢাকার একটি আসন থেকে নির্বাচিত হলেও তার জন্মস্থান ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া)। এর মধ্যে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে অভিজাত ও পুরোনো আওয়ামী লীগার হিসেবে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া তথা সমগ্র বাংলাদেশে সুপরিচিত। এই আভিজাত্য ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় তিন পূর্ণমন্ত্রী নিয়োগে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার প্রগতিশীল ও সচেতন মহল উদ্দীপ্ত। এই দায়িত্ব সুচারু রূপে পালনের মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে আওয়ামী লীগের সাথে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার যে একটি ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তার অবসান হবে বলে আশা করছে বিবেকবান ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়াবাসী। নতুন মন্ত্রিসভায় অবদান রাখার মাধ্যমে তারা অপবাদ ঘুচাবে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন