‘ব্যাপক হিংসার ছক জামাতের': আনন্দবাজার
পত্রিকা
সংলাপ
॥ ‘ভোটের আগে বাংলাদেশে হিংসা ও নাশকতার বন্যা বইয়ে দেয়ার তোড়জোড় করছে জামাত-শিবির।
এ জন্য একটি বিশাল তহবিল গড়া হয়েছে।' এই দাবি করেছে ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার
পত্রিকা।
‘ব্যাপক হিংসার ছক জামাতের, বলছে
রিপোর্ট' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পত্রিকাটি দাবি করেছে, দিল্লির চিন্তা বাড়িয়ে
নতুন যে একটি রিপোর্ট দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে এসেছে তাতে এ কথা বলা হয়েছে।
এমনিতে
ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশ নিয়ে খুব কমই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তবে সম্প্রতি এর ব্যতিক্রম
লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভারতের জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকগুলোতে প্রতিদিনই বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেদন,
সম্পাদকীয়, বিশ্লেষণ ছাপা হচ্ছে। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “রিপোর্টে বলা
হয়েছে, শুধু জামাত-ই নয়, সন্ত্রাস-নাশকতার কাজে তাদের সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের আনাচে
কানাচে গোপনে বেড়ে ওঠা অন্তত ১০৮টি মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন। সাউথ ব্লকের দুশ্চিন্তা আরও
বাড়িয়ে, রিপোর্টে এ কথাও বলা হচ্ছে, রাস্তায় লড়ার জন্য কিশোরদের নিয়ে বিশেষ একটি কর্মীবাহিনী
গড়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বাছাই করা একটি অংশকে ফিদায়েঁ হওয়ার মতো মানসিক প্রশিক্ষণও দেওয়া
হচ্ছে।”
আনন্দবাজার
বলছে, “বাংলাদেশে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক সঙ্কট তীব্র হয়ে ক্রমশ
বাড়ছে হিংসার পরিবেশ। আদালত জামাতে ইসলামির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করায় তারা নিজেদের প্রতীক
নিয়ে ভোটে লড়তে পারবে না। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের বহু প্রথম সারির নেতা ফাঁসির আসামি।
এর বদলা হিসেবেই তারা হিংসা ছাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয়
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, জামাতের পরিকল্পনা কার্যকর হলে এক ধাক্কায় অনুপ্রবেশ
বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে সন্ত্রাস আমদানির ঘটনাও বেড়ে
যেতে পারে। এর ফলে সব চেয়ে বেশি ধাক্কা লাগবে বাংলাদেশ-সংলগ্ন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে।”
পত্রিকাটি
লিখেছে, “মার্চ মাসে জামাতে ইসলামি যখন প্রথম একক ভাবে ঢাকায় সফল হরতাল করে, চমকে গিয়েছিলেন
অনেকেই। তখনই তাদের সাংগঠনিক শক্তি এবং সংহত ক্যাডার বাহিনীর একটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।
জামাতের প্রধান রণকৌশল, পুলিশবাহিনীর ওপর হঠাৎ আক্রমণ ও মারধর করে গ্রেফতার হওয়ার আগেই
ভিড়ে মিলিয়ে যাওয়া। সে জন্য টুপি-দাড়ি ছেড়ে জিনস ও টি শার্ট-এ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে জামাতের
ছাত্র শাখা ইসলামি ছাত্র শিবির। রিপোর্ট বলছে, নির্বাচনের আগে এই হামলা আরও বাড়বে।
এক বিএনপি নেতাকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, একটি বাহিনীকে সন্ত্রাস ছড়ানোর বিশেষ
প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। নাশকতার সময়ে পুলিশের গুলিতে মারা পড়া কর্মীদের পরিবারকে আর্থিক
মদত দিতেও তৈরি জামাত নেতারা।”
আনন্দবাজার
বলছে, “রিপোর্ট অনুযায়ী, সমগ্র পরিকল্পনাটি রূপায়ণের জন্য বাংলাদেশের শতাধিক বাণিজ্য
সংস্থার মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে যেমন রয়েছে বেশ কিছু ইসলামি
ব্যাঙ্ক, রয়েছে বহু হাসপাতালও। এই হাসপাতালগুলি বকলমে জামাত পরিচালিত। জামাত নেতৃত্ব
অবশ্য প্রকাশ্যে বলছে, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করার জন্যই তারা সদস্যদের থেকে চাঁদা তোলে।
সেই চাঁদার অঙ্ক মাসে অন্তত দশ কোটি টাকা! তবে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের থেকে টাকা নেওয়ার
বিষয়টি জামাত অস্বীকার করে।”
কলকাতার
পত্রিকাটি আরো লিখেছে, “রিপোর্টে বলা হচ্ছে ১৯৮০ সাল থেকেই একটি সুবিশাল বাণিজ্যিক
সাম্রাজ্য গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিল জামাতে ইসলামি। জামাতের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী
সংস্থা ও কর্পোরেট সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতের বাজেট পুরোটাই খরচ হয় মৌলবাদী সংগঠনগুলির
‘আদর্শগত' প্রশিক্ষণের জন্য। এই অঙ্কটাও বেশ কয়েক কোটির।”
আনন্দবাজার
দাবি করেছে, “রিপোর্ট কয়েকটি ঠিকানার একটি বিস্তারিত তালিকাও রয়েছে, যেখানে জামাত-সহ
ইসলামি সংগঠনগুলির সশস্ত্র কর্মীরা গোপনে আশ্রয় নিচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় ২৭০টি এমন
ঠিকানার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ি, মতিঝিল, ধানমন্ডি, মীরপুর
ও চকবাজার থানার নানা এলাকা। জামাতের সঙ্গী মোট ১০৮টি ইসলামি সংগঠনের কথা বলা হয়েছে
রিপোর্টে, যাদের মধ্যে রয়েছে আফগানি পরিষদ, ইসলামি বিপ্লব পরিষদ, ইসলামি জিহাদ গ্রুপ,
জাগ্রত জনতা, মুজাহাদিন তায়েব, রোহিঙ্গিয়া ইসলামিক ফ্রন্ট, রোহিঙ্গিয়া প্যাট্রিয়টিক
ফ্রন্ট ইত্যাদি। এদের অনেকগুলিই অত্যন্ত গোপনে সংগঠন বাড়াচ্ছে। ”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন