বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিজ্ঞাসা - পাকিস্তান প্রশ্নে বেগম জিয়া চুপ কেন?



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিজ্ঞাসা -
পাকিস্তান প্রশ্নে বেগম জিয়া চুপ কেন?

ফয়সাল ॥ পাকিস্তান প্রশ্নে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া নিশ্চুপ কেন তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত 'নিন্দা প্রস্তাব'র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চললেও আপনি (খালেদা জিয়া) নিশ্চুপ রয়েছেন কেন? শুনছি আপনি নাকি আন্দোলনের মাঠে নামবেন! তবে আন্দোলনে মাঠে নামার আগে জনগণের কাছে এই প্রশ্নের জবাব  দেবেন। নইলে দেশবাসী আপনাকে সমুচিত জবাব দেবে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়া এতদিন মুখোশ পরে থাকলেও পাকিস্তানের অবস্থান প্রশ্নে নীরব থাকার কারণে তার আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। মানুষ বুঝতে পারছে বিএনপি কিসের জন্য রাজনীতি করে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা বলতে উনার (খালেদা জিয়া) লজ্জা হয়! পাকিস্তানের জন্যই ওনার এত দরদ, এত কষ্ট। তাহলে আর বাংলাদেশে থাকার দরকার কী? পাকিস্তানে চলে গেলেই তো পারেন। এখানে থেকে জনগণকে কষ্ট দিয়ে লাভ কী? এ সময় প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
 প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে বিজয়ী দেখতে পছন্দ করেন না। বাংলাদেশ বিজয়ী জাতি হিসেবে থাকুক এটা ওনার (খালেদা জিয়া) মোটেও পছন্দ নয়। এ কারণে কাদের মোল্লার ফাঁসির বিরুদ্ধে পাকিস্তান পার্লামেন্টে নেয়া নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে তাঁর মুখ দিয়ে 'টু' শব্দ বের হলো না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের একজন সাবেক রিটায়ার্ড (অবসরপ্রাপ্ত) সেনা কর্মকর্তা জানজুয়া মারা গেলে আপনি (খালেদা জিয়া) শোকবার্তা পাঠান। এর রহস্যটা কী? এটা আমি জানি না, জানতে চাই। পাকিস্তানের যেসব দল নিন্দা প্রস্তাবে সমর্থন করেনি তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কাদের মোল্লার পক্ষে বিবৃতি দেয়ায় নিয়াজির ভাতিজা সাবেক তারকা ক্রিকেটার ইমরান খান নিয়াজিরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের রেখে যাওয়া ভাঙ্গা স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জি থেকে কীভাবে এত অর্থ-সম্পদের মালিক হলেন তার জবাব জনগণকে দেয়ার জন্য বিরোধী দলের নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য নয়। নিজের লাভ-লোকসানের বা ক্ষমতায় আসার জন্য নয়। আমার কাছে ক্ষমতা মানেই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ করা।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। এ কারণে খালেদা জিয়ার হূদয় ব্যথিত হচ্ছে। কাদের মোল্লার ফাঁসি স্থগিতের জন্য বিভিন্ন বড় জায়গা থেকে ফোন এসেছে। আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তবে আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাদের কাছেই আমার জবাবদিহিতা। জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছি তা বাস্তবায়ন করেছি। ক্ষমতার লোভ কিংবা মোহ আমার নেই, ছিলও না। আমি মৃত্যুকে পরোয়া করি না, পরোয়া করি শুধু জনগণের। কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সুদের টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে এমন ব্যক্তির সমালোচনা করে বলেন, এ খেলা আমরা খেলতে দেব না। প্রত্যেক মানুষ তার নিজের পায়ে দাঁড়াবে। এটা তার মৌলিক অধিকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দোসর যে স্বাধীনতাবিরোধীরা তা আজ জাতির সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে আন্দোলনের নামে তারা মানুষ হত্যা করছে, হাজার হাজার গাছ কাটছে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত একাত্তরের মতোই মানুষ হত্যায় মেতেছে। খুনীদের মদদ দেয়া, লালন-পালন করাই বিএনপির চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুকে সাহস নিয়ে চলতে হবে। সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সজাগ থাকতে হবে। তারা একাত্তরের মতো মানুষ হত্যা করছে। আরও হত্যা করবে। নতুন প্রজন্মের যারা একাত্তর দেখেনি। তারা নতুন করে দেখল স্বাধীনতাবিরোধীরা কিভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে তুলে দেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্তও বানান। সে সময় হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯টি ক্যু হয়েছে। একেকটা ক্যুর পর জেনারেল জিয়া হাজার হাজার সেনা অফিসারকে নির্বিচারে হত্যা করেন। শুধু বিমানবাহিনীর ৬৬২ জন অফিসারকে হত্যা করা হয়। দেশে ভোট কারচুপি, ঋণ খেলাপিসহ বিভিন্ন অনিয়ম তিনি চালু করে যান। আর জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসেও যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-এমপি বানান।
যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে গৃহীত 'নিন্দা প্রস্তাব'র বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ চললেও  বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া নিশ্চুপ কেন - এই প্রশ্ন শুধু প্রধানমন্ত্রীর নয়, গোটা বাঙালি জাতির। বিরোধী দলীয় নেত্রী এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন কি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন