মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

শুরু হয়েছে প্রতিরোধ পর্ব!



শুরু হয়েছে প্রতিরোধ পর্ব!

সংলাপ ॥ বিরোধী দলের ডাকা অবরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহন শ্রমিকরা গত সোমবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশে একটি মিছিল বের করে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে এই মিছিল শুরু হয়। টানা অবরোধে যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পরিবহন চালক-শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রতিবাদে 'সম্মিলিত গাড়ি চালক সমিতি' ও 'সম্মিলিত গাড়িচালক সমাজ'-এর ব্যানারে কয়েক হাজার পরিবহন শ্রমিক এই মিছিল বের করে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর বিরোধী নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে তারা মিছিল নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাড়ির উদ্দেশে এগোতে থাকে। মিছিলটি কাকলি মোড় পার হয়ে গুলশান ২ নম্বর মোড়ে পৌঁছানোর পর পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় মিছিলকারীরা পুলিশের বাধা ডিঙ্গিয়ে এগোতে চাইলেও ব্যর্থ হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। পরে পুলিশ তাদের দুজন প্রতিনিধিকে স্মারকলিপি নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতার কাছে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে চাইলেও তাতে রাজি না হয়ে তারা আবার মহাখালীর দিকে ফিরে যায়।
পুলিশী বাধার মুখে অবস্থান নিয়ে বিক্ষুব্ধ বাস-ট্রাক-সিএনজির মালিক ও সমিতির নেতৃবৃন্দ তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, হরতাল-অবরোধে পরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাত আসছে। আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন মালিক-শ্রমিকরা। এর ওপরে পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে রাস্তায় বের হলে নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, পেট্রোল বোমা ও ককটেলের আঘাতে সাধারণ মানুষসহ পরিবহন শ্রমিকরা অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করছে, আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বলেন, আমরা কোন দলের না, আমরা মালিক-শ্রমিক। আমাদের কেউ আগুনে পুড়ে মারা গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো পরিবারকে ভুগতে হয়। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আমাদের ওপর আক্রমণ কেন? কেন আমাদের পথে বসানো হচ্ছে? হরতাল বা অবরোধের আগের দিন কেন গাড়ি পোড়ানো হয়? আমরা এর জবাব চাই। মানুষের জীবন চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। এ কারণে হরতাল-অবরোধের প্রতিবাদ ও চলমান অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে বাধ্য হয়েই আমরা রাজপথে নেমেছি।
মিছিলে অংশ নেয়া ক'জন বাস ও ট্যাক্সিক্যাবচালক ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, কর্মসূচীর নামে নেতারা বাসায় বসে থাকবেন, আর রাস্তায় সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের সর্বস্বান্ত করবেন, গায়ে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে হত্যা করবেন- এটা সহ্য করার মতো নয়। হরতাল-অবরোধের নামে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা ও সহিংসতা বন্ধ করতে আমরা এ আন্দোলন শুরু করেছি। যতক্ষণ সহিংসতা বন্ধ না হচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
এদিকে, দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের দাবিতে গত সোমবার রাস্তায় নামলেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে সহিংসতা বন্ধ এবং স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা।
গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দিনমজুররা আন্দোলনের ধরন পাল্টানোর আহ্বান জানিয়ে মিছিল নিয়ে খালেদা জিয়ার বাসভবনের দিকে যায়। মিছিলটি গুলশান ২ নম্বর এলাকা পার হওয়ার পর পুলিশ তাদের আটকে  দেয়। পরে একটি স্মারকলিপি নিয়ে শ্রমজীবীদের একটি প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার বাসভবনে যায়। প্রতিনিধিদলে থাকা ফাহমিদা নামের একজন জানান, পুলিশ তাদের বাসায় ঢুকতে  দেয়নি এবং তাদের স্মারকলিপিও গ্রহণ করা হয়নি। মিছিল করেছেন গুলশান-বনানী এলাকার খেটে খাওয়া একদল দিনমজুর। একই সঙ্গে তারা একটি স্মারকলিপি দিতে  গেলে খালেদা জিয়ার বাসভবনে তাঁদের ঢুকতে  দেয়া হয়নি।
গোলাম মোস্তফা নামের একজন  পোশাক ব্যবসায়ী দুই নেত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘দেশ চুরমার হয়ে যাচ্ছে। সত্যিকারের মা হয়ে থাকলে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ করুন।' আরেক ব্যবসায়ী জাহানারা আক্তার বলেন, ‘দুই দল  দেশকে নিয়ে খেলা শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের পরিবারে সব মিলিয়ে পাঁচ কোটি লোক আছে। আমাদের শক্তিও কম না। আমরা রাস্তায় নামলে দুই নেত্রী  কোথায় ভেসে যাবেন, খুঁজেও পাওয়া যাবে না।' মিতালী ফ্যাশনের মালিক সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের পিঠ  দেয়ালে  ঠেকে গেছে। আমরা বন্দরে পণ্য পাঠাতে পারছি না।' বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘দুই দল দেশকে দিনে দিনে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে দেশের জন্য নয়, তারা নিজেদের স্বার্থের জন্যই রাজনীতি করে।'
সহিংস রাজনীতিতে দেশের অর্থনীতি শেষ  হয়ে যাচ্ছে। পোশাকশিল্পের অনেক ক্রয়াদেশ ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে চলে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে আন্দোলন, কিন্তু ঘটছে আগুনে পুড়িয়ে বা ককটেল মেরে মানুষ মারার বর্বরতম ঘটনা। আগুন দেয়া হচ্ছে যাত্রীবাহী বাসে, রেললাইনের নাট-বল্টু খুলে লাইনচ্যুত করা হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন। বিনা কারণে পথে-ঘাটে, যানবাহনে জীবন্ত পুড়িয়ে, আগুনে ঝলসে মারা হচ্ছে। এই নির্মম বর্বরতা মেনে নেবে না দেশের সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষই জীবন রক্ষার তাগিদে প্রতিরোধ করবে এই বর্বরতা। ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে প্রতিরোধ পর্ব!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন