প্রজন্মের বিজয়
জয়ন্ত ॥ চেতনার আগুন দাউ দাউ করে ছড়িয়ে
পড়লো সবখানে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া - গোটা বাংলাদেশ পরিণত হলো দেশপ্রেমের এক মহাসমুদ্রে।
দাবি একটাই, 'কসাই কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই।' শুরুটা হয়েছিল সেই
৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরবেলায়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া জামাতের সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগে ফুঁসে উঠেছিল
বিক্ষুব্ধ জনতা। রায় মানি না - দাবিতে তরুণ প্রজন্মের ডাকে ঘর ছেড়ে রাজপথে ছুটে এসেছিল
লাখ লাখ দেশপ্রেমিক মানুষ। প্রজন্ম চত্বরের ওই আন্দোলনের ঢেউ লেগেছিল সারা বাংলায়।
প্রত্যন্ত জনপদ থেকে জাতীয় সংসদ সর্বত্র আলোড়িত হচ্ছিল তরুণদের প্রাণের দাবি, যুদ্ধাপরাধীর
ফাঁসির বিকল্প নেই। তরুণদের ঘুমহীন আন্দোলনের মুখে ১৭ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেলে আন্তর্জাতিক
অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। পাস হওয়া এ সংশোধনীতে
বাদী ও বিবাদীর আপিলের সমান সুযোগ রাখা হয়। একই সঙ্গে রাখা হয় ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে
দল বা সংগঠনের অপরাধের বিচারের সুযোগও। এর ফলে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে
রাষ্ট্রপক্ষ। যার প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ আদালতে আপিলের রায়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কাদের
মোল্লার মৃত্যুদন্ডের আদেশ হয়।
এর
আড়াই মাসের মাথায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে সরকারের পক্ষ থেকে দন্ড কার্যকরে সব প্রস্তুতির
পর শেষ মুহূর্তে আসামিপক্ষের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি ফাঁসি কার্যকরে
স্থগিতাদেশ দেন। এরপর সংক্ষুব্ধ হয়ে ওই রাত ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে আবার অবস্থান নেন
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকরা। কয়েক দফায় ওই এলাকায় হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও শাহবাগ
মোড়েই লাগাতার অবস্থান চালিয়ে আসেন জাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। কাদের মোল্লার ফাঁসি
কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন তারা। অবশেষে ১২ ডিসেম্বর রাত ১০.০১ মিনিটে কাদের মোল্লার
মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর হয়।
আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে বাংলা বসন্ত নামে পরিচিত শাহবাগ গণ-বিস্ফোরণের ফসল কাদের মোল্লার ফাঁসি। এটি
গণজাগরণ মঞ্চের বিজয়। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের শুরু করা আন্দোলনের বিজয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন