মুক্তিযুদ্ধ হয়নি শেষ
গর্জে ওঠো বাংলাদেশ
সংলাপ ॥ একাত্তরের পর বিজয়ের এত আনন্দ
এবং নতুন প্রজন্মের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস আর দেখা যায়নি। বিয়াল্লিশতম বিজয় দিবসে গোটা
দেশই মেতে উঠেছিল বাঁধভাঙ্গা বিজয় উৎসবে। নেচে-গেয়ে উঠেছিল বিজয়ের আনন্দে। বিজয়ের আনন্দে
রাজপথে নেমে আসা লাখ লাখ শিশু-কিশোর থেকে আবাল বৃদ্ধ-বনিতার চোখে-মুখে যেমন ছিল বিজয়ের
আনন্দ, ঠিক তেমনি ছিল একাত্তরের সব যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের
দাবি। মানবতাবিরোধী সব অপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এবং জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ
গড়ে তোলার শপথ নিয়ে গত সোমবার বিজয়ের ৪২ বছর পূর্তি উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ।
৪২
বছর ধরে যার জন্য অপেক্ষা করেছিল গোটা দেশ, সেই একাত্তরের ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী কাদের
মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় বাঙালির জীবনে এবার যেন নতুন করে এসেছিল বিজয় দিবস।
সব যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির রায় ঘোষণা ও কার্যকর, স্বাধীনতাবিরোধী জামাতের
নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর একাত্তরের মতো আবারও পাকিস্তানকে পরাজিত করে সবচেয়ে বড় 'মানবপতাকা'
তৈরি ও জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেস বুকে রেকর্ড করে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর এবার নতুন রূপে
বিজয় উদ্যাপন ও বিশ্বরেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ।
এবারের
বিজয় দিবসে লাখো মানুষের চোখে-মুখে ছিল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের
তীব্র ঘৃণা, ধিক্কার আর দেশবিরোধী ধ্বংসাত্মক কর্মকা- প্রতিরোধের দৃঢ় অঙ্গীকার। বিজয়োৎসবে
মাঠে নামা লাখো মানুষ একদিকে ছিল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত আর অন্যদিকে চোখে
ছিল একাত্তরের ঘাতক রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীদের নির্মূল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
অসামপ্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন। স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের শত
ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বিজয় দিবসে লাখো লাখো তরুণ প্রজন্মের ঢল প্রমাণ করে দেয়,
সেই রক্তক্ষয়ী ৯ মাসের স্মৃতি বাঙালি ভোলেনি, ভুলবে না, ভুলতে পারে না। রাজাকারমুক্ত
বাংলাদেশ বিনির্মাণের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও তাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
স্মৃতিসৌধে
নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা - 'দেশজুড়ে নাশকতা
ঘটিয়ে চলা জামাত-শিবির' প্রতিরোধের শপথ নিতে। মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, এবারের বিজয় দিবসে
আমাদের শপথ, 'জামাত-শিবিরের সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে এক করে প্রতিবাদ করা। তাদের
রাষ্ট্রবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। স্বাধীনতার এত বছর পরও জামাত-শিবির
বাংলাদেশকে 'ধ্বংসের পরিকল্পনায়' মেতে ওঠার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাই জামাত-শিবিরের নির্মূলে
গোটা জাতিকে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বিজয়
দিবসে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া দেশের সকল প্রান্তরে উঠেছিল গগণবিদারী
একই আওয়াজ- 'সব রাজাকারের হয়নি সাজা, মুক্তিযুদ্ধ হয়নি শেষ/গর্জে ওঠো বীর বাঙালি, গর্জে
ওঠো বাংলাদেশ'। রক্তের নদী বেয়ে আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবসে আয়োজিত প্রায় সব
কর্মসূচীর মূল সুর এবং কেন্দ্রবিন্দু ছিল - 'আর সময়ক্ষেপণ নয়, অবিলম্বে সব যুদ্ধাপরাধীদের
ফাঁসি চাই। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার-আলবদর ও তাদের সহযোগী মদদদাতাদের ঠাঁই নাই'।
নতুন
চেতনার এই বিজয় দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করেছে
বিভিন্ন কর্মসূচী। গণজাগরণ মঞ্চ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী,
সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
রাজধানীর ১২টি বিজয় মঞ্চে 'বিজয় উৎসব' অনুষ্ঠান পরিবেশন এবং ১৩টি ভ্রাম্যমাণ মঞ্চে
মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
গত
সোমবার সকালে শেরেবাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্কুল-কলেজের
ছাত্রদের সহযোগিতায় মানবপতাকা তৈরির বিশ্বরেকর্ড এবং বিকেলে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে
বিজয় ২০১৩ উদযাপন কমিটি, গণজাগরণ মঞ্চ, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বিজয় ৪:৩১ মঞ্চ ও
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড
বুকে নাম লেখানোয় এবারের বিজয় দিবস সৃষ্টি করেছে প্রতিরোধের প্রত্যয় -'স্বাধীন এ বাংলায়,
রাজাকারের ঠাঁই নাই', 'বিজয় দিবসের অঙ্গীকার, রুখতে হবে জামাত-শিবির-রাজাকার'।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন