বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

রাজনীতি থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে




সময়ের সাফ কথা ....
রাজনীতি থেকে ধর্মকে

সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে

সংলাপ ॥ সাপ্তাহিক বর্তমান সংলাপ দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা রাখতে সেমিনার, সভা-সমাবেশ ও প্রকাশনার মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আসছে। ইসলামের মতো মহান ধর্মকে ধর্ম ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকরা পরিণত করেছে তাদের আত্মস্বার্থ হাসিলের ধর্মে। বর্তমান সংলাপের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে বলা হয়েছে - রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার চলতে থাকলে বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। মারাত্মকভাবে অবনতি ঘটতে পারে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের। এমনকি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বও পৃথিবীকে এক নারকীয় অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
গত শুক্রবার ঢাকায় সফররত কানাডিয়ান সংসদীয় প্রতিনিধি দলও বলেছেন - রাজনীতি থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ আলাদা রাখতে হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রতিনিধি দলটি। গত শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। অপরদিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
কানাডাভিত্তিক ধর্ম ও মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ওয়ান ফ্রি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল'র পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর নির্যাতন সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ শেষে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিনিধি দলটি। কানাডিয়ান সংসদের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলটি বেসরকারীভাবে ঢাকায় সফর করেন। এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন কানাডিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য ও মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মাজিদ এল-শাফি, ব্র্যাড বাট, জ্য এ্যাস্পিন ও স্যাম পিট।
ঢাকায় পৌঁছে প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করে। তবে জামাতের  সঙ্গে কোন বৈঠক করেননি প্রতিনিধি দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজনীতি করবেন রাজনীতিবিদরা। আর ধর্ম পালন মানুষের একটি ব্যক্তিগত বিষয়। রাজনীতি এবং ধর্ম আলাদা থাকা উচিত। যখন ধর্ম ও রাজনীতি এক হয়ে যায়, তখন সহিংসতার আশংকা বেড়ে যায়।
বিএনপির সঙ্গে জোট বাধা জামাতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রতিনিধি দলটি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা মানুষের আবেগের অপব্যবহার করছে, তারা যে কোন সময় প্রতিঘাতের শিকার হতে পারে।
আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা বলেন, আমরা সরকারী কোন প্রতিনিধি দল নই। আমরা বাংলাদেশের সরকারের পক্ষেও নই। বিরোধী দলের পক্ষেও নই। আমরা কেবল নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসেছি। আর নির্বাচন কেমন হবে সেটা এদেশের রাজনীতিবিদ এবং জনগণই ঠিক করবেন।
সংখ্যালঘু ধর্মীয় সমপ্রদায়ের ওপর সহিংস হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কানাডিয়ান এমপিরা বলেন, এ ধরনের সহিংস হামলা বেড়েই চলেছে। এসব হামলা বন্ধ করতে রাজনীতিকে ধর্ম থেকে আলাদা করতে হবে। তাহলেই কেবল সকল সমপ্রদায়ের মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হবে। তারা বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদ শুধু সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জন্য নয়, বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্যই ক্ষতির কারণ।
বাংলাদেশ এখন সঙ্কটময় মুহূর্ত পার করছে উল্লেখ করে প্রতিনিধি দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ মুহূর্তে ধর্মীয় উগ্রবাদ চরম আকার ধারণ করতে পারে, এই ধর্মীয় উগ্রবাদ মোকাবেলায় প্রত্যেক মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি সত্যিকার ও আধুনিক মুসলমান হয়, তাহলে তার উচিত হবে নীরবতা পালন না করে সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাস সমৃদ্ধ। এদেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। একই সঙ্গে এদেশের মানুষ ধর্মীয় স্বাধীনতায়ও বিশ্বাসী। তবে বিপরীতে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর হামলা হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সমপ্রদায়ের  লোকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকের সংখ্যাও এদেশ থেকে কমে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হলে সকল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত হবে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর কানাডিয়ান মানবাধিকার সংগঠক ও এমপিদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, তারা বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন, এখনকার জামাতে ইসলাম এবং পূর্বেকার জামাতে ইসলাম এক নয়। এখনকার জামাতে ইসলাম অনেক বেশি সহিংস।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন