মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

বিবেকের আহ্বান শুনতে কি পাই ?


বিবেকের আহ্বান শুনতে কি পাই ?

সংলাপ ॥ বি+বিচ+অ = বিবেক। বি একটি উপসর্গ। উপসর্গ - মূল শব্দের অর্থ নির্ধারণ করে দেয়। উপসর্গের অর্থ কিছুটা অনির্দিষ্ট ও অব্যক্ত থাকে বলে নানা অর্থে শব্দটির ব্যবহার সম্ভব হয়। জীবন চলার পথে আমাদেরকে নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কি করবো, কি করবো না, কি করা উচিত, কি করা অনুচিত ইত্যাদি বিষয়ে জীবন আমাদের সামনে অনেকগুলো বিকল্প উপস্থাপন করে।  এসব বিকল্প থেকে এক বা একাধিক বিষয়কে বেছে নেয়াকে বলে বিচয়ন করা।  মানুষের অভ্যন্তরে যে সত্তা এই বিচয়নের কাজটি করে দেয় তাকে বলে বিবেক। কৃত আচরণকে কোন বিশেষ আচরণ বা বিকল্প আচরণের সঙ্গে তুলনা করে দেখাকে বলে বিচার। বিশেষভাবে চয়ন করা হচ্ছে - বিবেচনা। বিচার-বিবেচনা শব্দ দুটি একত্রিত হয়ে শুধু বিবেচনা অর্থ প্রকাশ করে। যে বিবেচনা করে তাকে বলে বিবেচক।
মানুষ নিজের বিচার নিজে করার কাজটি করে বিবেক দিয়ে। বিবেকের মাধ্যমে মানুষ তার নিজের কোন কর্মের অনুমোদন দেয় বা দেয় না। আমরা যেখানেই যাই বিবেক আমাদের সাথেই সাথে। এমন কোথাও যাওয়া সম্ভব নয় যেখানে বিবেক নেই। বিবেক ভাল-মন্দের চেতনা জাগ্রত করে। কেউ কারো ক্ষতি করে ধরা না পড়লে প্রকাশ্য শাস্তি পায় না কিন্তু বিবেক দংশন করে। বিবেকের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে যে দংশন হয় তাকে আমরা বিবেকের দংশন বলি। বিবেকী মানুষ মুনাফেক হয় না। তারা লোকের সম্মুখে যেমন আচরণ করে লোকের অগোচরেও তেমনি করে। তারা এমন কোন কর্ম করে না যা প্রকাশিত হওয়ায় নিজের জন্য লজ্জার কারণ হবে।
স্বাধীনতা না থাকলে বিবেকের কার্যকারীতাও থাকে না। কোন কিছু করার বা না করার স্বাধীনতা না থাকলে বিবেক নির্দেশ দিলেও যা না দিলেও তা। অনেকেই অনেক কিছু করতে চায় কিন্তু তা করার মতো শক্তি ও সুস্থতা থাকে না। আবার যা করতে চায় তা করার যোগ্যতা ও দক্ষতা না থাকলেও তা করা হয়ে ওঠে না। অনেক সময় আমাদের বিবেকের নির্দেশ সামাজিক রীতিনীতি দিয়েও বাধাগ্রস্ত হয়। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক কিছুই আমরা করতে পারি না সামাজিকতা রক্ষার্থে। সামাজিকতাকে উপেক্ষা করে কিছু করলেও বিবেক আমাদের দংশন করে। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবেশও আমাদের বিবেকী কর্মকান্ডকে সীমায়িত করে। আমরা যা করতে চাই অর্থনৈতিক সামর্থ না থাকার কারণে তা করতে পারি না।
একজন নীতিবান মানুষও বিবেকবান মানুষ। নীতিবোধ মানুষ অর্জন করে পরিবেশ থেকে। প্রতিদিন মানুষকে ভালকে মন্দ থেকে আলাদা করতে হয়। সকল মানুষের বিবেক এক নয় বটে কিন্তু বিবেকহীন কোন সত্তা নাই। বিবেক প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ক্রিয়াশীল থেকে উচিত-অনুচিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে। কেউ বিবেকের সিদ্ধান্ত মানে আর কেউ মানে না। যে বিবেকের সিদ্ধান্ত মানে তার মধ্যে বিবেক ব্যক্ত, যে মানে না তার মধ্যে অব্যক্ত।
বিশেষ বিচয়ন করতে গেলে কি বিচয়ন করবে তা জানা থাকা দরকার। যারা জানে তারা যেভাবে চয়ন করতে পারে যারা জানে না তারা সেভাবে চয়ন করতে পারে না। অথবা বলা যায়, অজ্ঞানতা বিবেকের কর্মকে অব্যক্ত রাখে। সুতরাং বিবেকেরও বিবর্তন আছে। বিবেক তথ্য ও তত্ত্বের সহায়তায় নিজেকে প্রকাশিত করে। তথ্য ও তত্ত্ব যেমন মানুষ অর্জন করতে পারে তেমনি মানুষ বিবেকও অর্জন করতে পারে। বিবেক নিয়ে মানুষের জন্মও হয় আবার বিবেক মানুষ অর্জনও করে। হাত পা মুখ নিয়েই আমাদের জন্ম হয় কিন্তু কাজ করা, হাঁটা এমনকি খাওয়াও আমাদের শিখতে হয়। তেমনি বিবেক আমাদের মধ্যে কীভাবে বিকশিত হবে তা নির্ভর করে কীভাবে মানব শিশু বেড়ে উঠে তার উপর। দশ বৎসরের মধ্যেই শিশুর বিবেক গড়ে উঠে - পরিবেশ, শিক্ষা, অনুসরণ, অনুশীলন, চর্চা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে।
যখন ব্যক্তিমালিকানা ছিল না তখন সকলেরই বিবেক ছিল। মানুষের বিবেক রহিত হবার মূল কারণ - ব্যক্তি মালিকানার উদ্ভব। এখন মানুষ বিবেকের তাড়না থেকে বেশি প্রাধান্য দেয় অর্থ-খ্যাতি ও ক্ষমতা লাভের তাড়নাকে। মানুষের মধ্যে বিবেক জাগ্রত হলে অকল্যাণ, অমঙ্গল ও অশান্তি দূর হয়।
মানবসভ্যতা ততদিনই টিকে থাকবে যতদিন বিবেক থাকবে। সৃষ্টি তার কর্ম অব্যাহত রাখছে অর্থই হলো এখনো মানুষের বিবেক আছে। এখনো বিবেক মানুষের মধ্যে উচিত-অনুচিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিচ্ছে এবং দেহের ভেতরে সজাগ থেকে মানবতার পতাকাকে  ধরে রাখছে। মানুষের মধ্যে তার অবস্থান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন