মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৩

বাংলার মানুষ ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মধ্যে!



বাংলার মানুষ ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের মধ্যে!

সংলাপ ॥ আধুনিক প্রযুক্তির অবদানে আমরা কি শুনব বা দেখব সেটা এখন অন্যের নিয়ন্ত্রণে। বিশ্বজুড়ে প্রচারের আধুনিকতায় মিথ্যাও সত্যরূপে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। প্রযুক্তির বদৌলতে সমস্ত বিশ্বই এখন আমাদের ঘরে ঘরে, এমনকি হাতের মুঠোফোনে। এই সুযোগে গণসংবাদ মাধ্যম ও বৈদ্যুতিন মাধ্যম নিয়ন্ত্রক শক্তি সত্য-মিথ্যার দোলাচালে দেশবাসীর চিন্তা-চেতনায় সহজেই প্রভাব ফেলছে এবং তাদের নির্দেশিত পথে পা বাড়াতে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সর্র্বদা উৎসাহিত করছে।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ একে অপরের চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। নিজের চিন্তা-দর্শন ও বিশ্বাসে অন্যকে শামিল করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে সব সময়। এর ফলে কেউ হয়েছেন বিভ্রান্ত আবার কেউ পেয়েছেন সঠিক ও সরল পথ। সাধকগণ সব সময় মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে ভ্রান্ত চিন্তা-বিশ্বাস পরিত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের অক্লান্ত চেষ্টায় অনেকেই সঠিক পথে ফিরে এসেছেন। আবারও ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটেছে। সঠিক পথের সন্ধান পাবার পরও কেউ কেউ ভ্রান্ত পথে আরো বেশি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন।
মানুষের চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব বিস্তারে গণমাধ্যমের ক্ষমতা এখন সর্বজনস্বীকৃত। প্রচার প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে তা ভৌগলিক সীমানায় সীমাবন্ধ নয়। তাই তার প্রতাপ এখন বিশ্বব্যাপী। গণমাধ্যমেই বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দেশ-বিদেশের রাজনীতিও।
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণকারীরা বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ পরিচালনা করছে। সময়ের সাথে সাথে প্রচারের ধরন ও কৌশলে পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র হাজার হাজার সামাজিক মাধ্যম চালু হয়েছে এবং তার মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক হামলা আরো বেশি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিভিন্ন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য মিত্র, শত্রু ও নিরপেক্ষ গোষ্ঠীগুলোর আচার-আচরণ, আগ্রহ, অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনার উপর প্রভাব বিস্তারে  প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে চলছে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ গণমাধ্যম পশ্চিমা জগতের সরকারগুলোর নিয়ন্ত্রণে অথবা যোগসূত্র থাকার কারণে  অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর আধিপত্য বিস্তার করছে।
বর্তমানে গণমাধ্যমের আগ্রাসনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, স্বাধীনচেতা ও আপোষহীন দেশগুলোর সরকার ও জনগোষ্ঠীকে নিয়ে। আজকের সমাজে বিশ্বজুড়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ সামরিক যুদ্ধের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। বর্তমানে শক্তিধর দেশগুলো তাদের আধিপত্যকামী নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নত সামরিক অস্ত্রের পরিবর্তে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে।
অতীতে সামরিক সরঞ্জাম যুদ্ধের সামনের কাতারে থাকতো আর গণমাধ্যম সেখানে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখতো কিন্তু এখন উল্টো অবস্থা। গণমাধ্যম সামনের কাতারে।
বর্তমানে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে আধিপত্যবাদীরা ধর্মীয় অঙ্গনে তাদের সেবাদাসদের গণমাধ্যমের সহযোগিতায় বাংলার আদর্শিক রাজনীতির পরিখাগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয়  সরকার ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি উপড়ে ফেলার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে। এটা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যা পরমাণু বোমার চেয়েও বেশি ভয়ানক ও মারাত্মক।
এইসব গণমাধ্যমের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে অনুসন্ধান করলে দেখা যাচ্ছে প্রথমত, মানব সত্যের প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, দ্বিতীয়ত: নিজস্ব ইতিহাস ও আত্মপরিচিতির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করাচ্ছে এবং তৃতীয়ত:  চিন্তা শক্তির পরনির্ভরশীলতা সাধন করছে অর্থাৎ চেতনায় পঙ্গুত্ব সাধন। বাংলার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের লক্ষ্য হলো বাংলার সংস্কৃতি। প্রাকৃতিক সম্পদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, মহাকাশ, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার উন্নয়ন ও অগ্রগতি থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বিশ্বের ধর্মীয় আধিপত্যবাদের বৃহৎ শক্তিগুলোর উপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল না হবার চেষ্টার কারণে বাংলাদেশ ধর্মীয় অঙ্গনে ধর্মান্ধ ও ধর্মজীবীদের চক্ষুশূল।
আগ্রাসন মোকাবেলার জন্য এবং এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের ফাঁদ থেকে জাতিকে মুক্ত করার জন্য দেশে সরকারি সহযোগিতায় সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং দেশে ধর্মীয় সত্যকে  তুলে ধরার সময় এসেছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের শিল্প-সংস্কৃতি ও পরিচিতি তুলে ধরে  জাতীয় পরিচিতি ও ইতিহাস সুচারুভাবে প্রচার করার উপর গুরুত্ব আরোপ করার সময় এসেছে। মানুষের চিন্তাশক্তি ও বিবেককে শাণিত করার লক্ষ্যে অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা এখন সময়ের দাবী। স্বাধীন গণমাধ্যমকে প্রতিরোধের অবস্থান থেকে বেরিয়ে ধর্মীয় আধিপত্যবাদী ও স্বার্থান্বেষী নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন এবং সত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে ধর্মীয় মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ সম্পর্কে  দেশের সাধারণ মানুষকে মুক্ত ও  সচেতন করার জন্য বাংলার সংস্কৃতিকে আরো বিকশিত করার উপরও গুরুত্ব আরোপ করতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেয়ার সময় এসেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন