ব্যক্তির সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে
দুর্নীতির সংজ্ঞা জরুরী
সংলাপ
॥ যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য আছে মঙ্গল ও আরো অধিক আশীর্বাদ। আর যারা মন্দ কাজ করে
তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ, আর তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করবে, আল্লাহর কাছ থেকে কেউ ওদেরকে
রক্ষা করার থাকবে না। (আল-কুরআন - ১০: ২৬-২৭)
বহুল
আলোচিত ১/১১-এর দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলা
হয়েছিল যে, তারা দেশ থেকে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মূলোৎপাটন করবেন। কিন্তু কোন সরকারের
পক্ষে কখনো সন্ত্রাস ও দুর্নীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ
করে দেয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে যথারীতি মিথ্যাচার চলছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে স্ব-ঘোষিত
বুদ্ধিজীবী মহল মত প্রকাশ করছেন।
কিন্তু
দুর্নীতি কমছে না। মানবজাতি ও মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই মানুষ যখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি
ও সুযোগ সুবিধার দিকে মনোনিবেশ করেছে তখন থেকেই সমাজে শুরু হয়েছে হত্যা-মারামারি, কলহ-বিবাদ।
আজকের দিনে বিশেষ করে আজকের পুঁজিবাদী সমাজে প্রতিটি মানুষ যখন নিজস্ব সহায়-সম্পদ বাড়ানোর
প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সেখানে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মতো অপরাধকে মূলোৎপাটন করা সম্ভব,
একথা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না। তাই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির মতো অপরাধকে কিভাবে
কমিয়ে আনা যায় এবং সমাজকে স্থিতিশীল রাখা যায় তার একটি রূপরেখা তৈরি করে রাষ্ট্রীয়
কার্র্যক্রম পরিচালনা করা আজ সময়ের দাবি।
অতীতে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক ও সাহসী অভিযান
পরিচালনা করতে দেখে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরাট আস্থা ও আশা ফিরে এসেছিল। কেননা, স্বাধীনতার
পর থেকে গত ৪০ বছরে দেখা গেছে যতই দিন যাচ্ছে রাজনীতিক ও আমলাদের নানারকমের দুর্নীতির
কবলে পড়ে সাধারণ মানুষ ততই বেশি অসহায় হয়ে পড়ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত
ওই অভিযানে তাই মানুষ বড় বেশি আশান্বিত ও উৎফুল্লিত হয়েছিল।
বাংলাদেশে
বর্তমানে যে প্রশাসনিক ও সমাজ কাঠামো বিদ্যমান তাতে দুর্নীতির মূলোৎপাটন সম্ভব বলে
একজন মানুষও বিশ্বাস করবে না। তবে এর মাত্রা কমিয়ে আনা যাবে অবশ্যই। সমাজ ও দেশের বাস্তবতায়
দেখা যায়, এক একজন মানুষের কাছে দুর্নীতির স্বরূপ এক এক ধরনের। বাংলা একাডেমীর সহজ
বাংলা অভিধানে দেখা যায়, এতে দুর্নীতি শব্দটির অর্থ হিসেবে কুনীতি, অসৎ ও অন্যায় আচরণ
এবং নৈতিক অবনতিকে দেখানো হয়েছে। আর দুর্নীতি-পরায়ণ অর্থ - নীতিবিরুদ্ধ আচরণ করে এমন,
দুরাত্মা ও দুঃশীল দেখানো হয়েছে। তাই সমাজে দুর্নীতি দমন করার আগে সাধারণ মানুষের কাছে
দুর্নীতির সংজ্ঞা স্পষ্ট করে দেয়া দরকার। পবিত্র ইসলাম ধর্মে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ
(সা.)-এঁর জীবনাদর্শে যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জনের কোনো নজির তৈরি হয়নি সেখানে
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রতিটি মুসলমান ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায়
লিপ্ত রয়েছে এবং এই প্রতিযোগিতাই সমাজে নানা অস্থিরতা, অরাজকতার জন্ম দিচ্ছে এবং দুর্নীতিবাজদের
আধিপত্য কায়েম হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে
কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিলেন এবং ক্ষমতায় এসেছিলেন।
তাই মহাজোট সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল দুর্নীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ করে সমাজ
ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে এর মাত্রা কমিয়ে আনার জন্য বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও ধর্মান্ধতার মতো অভিশাপ থেকে দেশকে পদ্ধতিগতভাবে মুক্ত করে দুর্নীতি
কমিয়ে আনলেও তা কাঙ্খিত লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি ‘বাংলার কৃষক, বাংলার শ্রমিক, বাংলার খেটে
খাওয়া সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করে না। দুর্নীতি করেন যারা শিক্ষিত মানুষ। এই শিক্ষিত মানুষদের দুর্নীতির
কারণে বাংলার কৃষক, শ্রমিক তথা সাধারণ মানুষের মধ্যেও দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে।
মানুষ ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। তাই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য দুর্নীতির একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ
করে পরিমাণ কমিয়ে এনে জনগণের মধ্যে ব্যক্তির
সামাজিক মূল্যবোধ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়াই এখন সবার আগে দরকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন