মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৩

শোক নয় - আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে চলাই হোক দৃঢ় প্রত্যয়

শোক নয় -
আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে চলাই হোক দৃঢ় প্রত্যয়


শেখ উল্লাস ॥  ১৫ই আগষ্ট। বাঙালি শোক করছে কিন্তু শোককে শক্তিতে পরিণত করতে পারছে না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার  চার দশক পরও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে আজ সার্বিক ক্ষেত্রে যে অবস্থা তাতে  ‘আদর্শ চাই - আহ্বানটির বাস্তবায়নই বেশি উপলব্ধি করছে জাতি।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সারা জীবনের রাজনীতি ছিল আদর্শের। চিন্তা-চেতনা, ত্যাগ, পারস্পরিক ভক্তি-শ্রদ্ধা, মানবিকতা, দেশপ্রেম, বাঙালি জাত্যাভিমান এবং  সর্বোপরি মানবতার মহান ব্রতে নিয়োজিত হয়ে এই মহান পুরুষ তাঁর জীবনে আদর্শিক ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা আজকের দিনেও এদেশের জনগণের এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য বিরাট শিক্ষণীয় বিষয় ও নির্দেশনা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি ও নির্দেশনা দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাইনা, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তিই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র কামনা যা তাঁর বিভিন্ন সময়ে দেয়া ভাষণে স্পষ্টভাবেই ব্যক্ত করে গেছেন। আর আদর্শগতভাবে এবং কর্মের মাধ্যমে এদেশের কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য যখনই তিনি কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাঁকে হত্যা করলো স্বাধীনতাবিরোধী তথা গণবিরোধী শক্তি।
সেই ১৫ই আগষ্ট এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এই শোক দিবসে কালো ব্যাজ ধারণ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের গান শোনা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কাঙালী ভোজের আয়োজন ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা তখনই সার্থকতা পেতে পারে যখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ  তাঁর দেশের বিশেষ করে তাঁর দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী, সমর্থক ও তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট প্রতিটি নাগরিক তাদের নিজেদের জীবনে ধারণ করবে। অথচ দুঃখজনক হলেও একথা আজ সত্য যে, তাঁর আদর্শকে ধারণ করে এরকম নেতা-কর্মীর সংখ্যা এখন কজন পাওয়া যাবে? ত্যাগের মানসিকতাসম্পন্ন, দেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ মানুষের স্বার্থকে নিজের স্বার্থ বলে ভাবছে এবং তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজনীতি করছে এমন নেতা-কর্মীর সংখ্যা এখন নিদারুণভাবে কমে যাচ্ছে অথবা তাদের প্রয়োজন গৌণ হয়ে পড়েছে যা দেশের সার্বিক উন্নতির পথে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সরকারি টাকা খরচ করে যে বঙ্গবন্ধুর নামে অনুষ্ঠান, ব্যানার-ফেষ্টুন তৈরি করে বঙ্গবন্ধু-দরদী সাজা যায়, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিক হওয়া এবং তাঁর আদর্শকে ধারণ, লালন ও পালন করে দেশকে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মুক্তি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করা যায় না তা বোধ হয় এখন জরুরি ভিত্তিতে ভেবে দেখার সময় এসেছে। আর তা না হলে দেশ আরও সাংস্কৃতিক সংকটের দিকেই অর্থাৎ অন্ধকারের দিকেই ধাবিত হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবদ্দশায় তাঁর দেয়া ভাষণগুলোর যে কোনোটির দিকে তাকালে তাঁর আদর্শ কী ছিল তা বুঝতে সহায়ক হতে পারে।  কৃষক-শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করেনা। করাপশন আমার বাংলার মজদুররা করেনা। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। তাই দেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের প্রতি শিক্ষিতদের আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে। আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছে কে? ডাক্তারি পাস করায় কে? ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করায় কে? বৈজ্ঞানিক করে কে? অফিসার করে কে?-বাংলার দুখী জনগণের টাকায়
বঙ্গবন্ধুর রক্তঋণে অর্জিত এই দেশে আজ রাজনীতি, ব্যবসা ও আমলাতন্ত্রের সুবিধা নিয়ে একটি অতি সুবিধাভোগী রাজনীতিকদের হাতে দেশটি যেভাবে কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে, বিশাল জনগোষ্ঠীকে যেভাবে বঞ্চনা ও উপহাসের পাত্র করে তোলা হচ্ছে সাম্প্রতিক তার সর্বশেষ উদাহরণটি হচ্ছে সাম্প্রতিক রাজনীতিকদের সাথে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। তাই আর সময় নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শকে যারা ধারণ করেনা তাদেরকে তাঁর নামে পরিচালিত দল থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার এখনই সময়। বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য মুজিব যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সময় এসেছে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন