শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৫

চেতনায় পহেলা বৈশাখ

চেতনায়পহেলা বৈশাখ

সংলাপ ॥ দুঃখজনক হলেও সত্যি জাতীয় অগ্রগতির ধারায় যখনই কোন ব্যক্তি বা চক্র সুকৌশলে চক্রান্তমূলক ভাবেই জাতীয় চেতনার মূলে আঘাত হেনেছে, তাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় স্থান দিয়ে কখনো সমর্থন, কখনো বা উপেক্ষা করা হয়েছে। জাতীয় চেতনার পরিপন্থী ওই চক্র বার বার পেয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়।
পহেলা বৈশাখে বাঙালির নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপনকে নিয়ে ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী শ্রেণীর চক্রান্ত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। পাকিস্তান শাসনামলেও এই চক্রান্ত চলেছিল। ষাটের দশকে পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহীর শত নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এদেশের বাঙালি চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছাত্র-জনতা প্রতিষ্ঠিত করেছিল এ উৎসব পালনের অধিকার। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে যারা মনগড়া ধর্মের অপব্যাখ্যায় জাতীয় চেতনায় বিভাজন রেখা টানতে চান, তাদের স্মরণ রাখা জরুরি বাঙালি চেতনায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামী মানুষের অটুট ঐক্য ও প্রতিরোধের কথা।
বাংলা নববর্ষ বাঙালি জাতির উৎসব। এ উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ উৎসবের সাথে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ধ্যান ধারণা, আবেগ-অনুভূতির সতত প্রকাশ। এ উৎসব বাঙালি তথা আমাদের গর্ব, আমাদের জাতীয়তা বোধের পরিচিতি। এর সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই, থাকতে পারে না। ইসলাম ধর্মে তো নয়ই।
ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম, সার্বজনীন ও সুশীল চিন্তার দীক্ষা পাওয়া যায় এ ধর্মে। বিভেদ নয় ঐক্যের আহবান রয়েছে কুরআনে।
দেশ, জাতি, জাতীয়তাবোধ, নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষার লালন-পালনের শিক্ষা কুরআনেই আছে। কিন্তু তারপরও ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জাতীয়তাবোধের সাথে ধর্মের বিরোধ ঘটাতে চান কতিপয় ধর্মবেত্তা ও ধর্মব্যবসায়ী যারা তথাকথিত ধর্মীয়বোধ এবং ফতোয়াবাজির মাধ্যমে বিতর্ক ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চায়।
সঙ্গত কারণেই শান্তিকামী মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে - সামপ্রদায়িকতার উর্ধ্বে সাম্য ও ঐক্যের যে বাঙালি জাতীয়তা, তাকে কোন স্বার্থে তথাকথিত ধর্মের অপব্যাখ্যায় আক্রমণ করতে চায় সংকীর্ণ চিন্তাবিলাসী উগ্রধর্মবাদী চক্র? এরা ‘মুসলমানের’ কোন্‌ সংজ্ঞায় ‘বাঙালি জাতি’কে অস্বীকার করতে চায়? মুসলমান ও বাঙালির মাঝে তফাত কি? একজন বাঙালি কি মুসলমান হতে পারেন না? মুসলমান হতে গেলে কি ত্যাগ করতে হবে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য? ইসলাম কি তবে মানবজাতির কোন খন্ডাংশের জন্য? এসব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর ধর্ম-চিন্তাবিদদের কাছে আশা করে জাতি।

জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি বিষোদগার করে যারা প্রজন্মকে ভুল পথে চালিত করে ফাটল ধরাতে চায় জাতীয় ঐক্যতানে, ভিন্ন মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা-সংস্কৃতির অনুরাগী হয়ে গড়ে তুলতে চায় জাতিভেদ-বর্ণবৈষম্য, তাদের এই ফতোয়াবাজি স্বাধীনতা বিরোধী একটি গোষ্ঠীর কাটা ঘায়ে প্রলেপ দিয়ে বৈধ করবার অপপ্রয়াস সাময়িক জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরাতে হয়তো সক্ষম হবে কিন্তু জাতীয় চেতনায় কোন আঘাত হানতে পারবে কি? বরং এই আঘাতের পুনরাবৃত্তি জাতীয় ঐক্যকেই আরো অটুট ও সুদৃঢ় করে তুলবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন