বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

টকশো

সময়ের সাফকথা ....
টকশো

ইশতিয়াক ॥ টিভি টকশোতে এত এত তার্কিক তর্ক করে, সভা-সমিতিতে এত বক্তব্য বিবৃতি চিৎকার হজম করতে হয় তবু নির্মমতা থামে না, পেট্রোলবোমায় পুড়ে মারা যায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, দূর্নীতি কমে না, ন্যায় প্রতিষ্ঠা পায় না, আলোর বিপরীতে অন্ধকারে মূখ চাওয়া চাওয়ীর অবসান ঘটে না। এক্ষেত্রে টকশো বিশেষজ্ঞরা হয়ত বলবেন পরিবর্তন একটি দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। মানুষের বাক ও বিবেকের স্বাধীনতার জন্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের হয়ে সত্য-ন্যায়-শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তারা কথা বলেন। কিন্তু এটাই কি শেষ কথা। টিভি টকশোতে অর্ধ সত্য, কৌশলী সত্য, জটিল সত্য, দলকানা সত্য, চাপিয়ে দেয়া সত্য, মানুষকে বোকা বানানোর সত্য, সর্বপরি প্রক্রিয়াজাত সত্য প্রচার করা হয়। যার যার সত্য তার তার মত হলেও স্বাভাবিক চেনা একটি সত্য ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে রয়েছে। জনগনমনস্তাত্ত্বিক সেই সত্য সমাজ কাঠামোর অভ্যন্তরে সহজ সরল প্রাণে অহরহ বাজতেই থাকে। সেই অর্ন্তনিহিত সুর অসুরকে, কালোকে, অন্ধকারকে সহজেই চিহ্নিত করে। এটি মানবিক শান্তি সাম্যতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, যাপিত জীবন চর্চার অর্ন্তনিহিত স্বকীয় বৈশিষ্টকে বহন করে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দাবীকে তুলে ধরে এমন একটি পর্যবেক্ষন ক্যামেরা সার্বক্ষনিক কাজ করে। ফলে সাধারণ জনগণের কাছে গণতন্ত্রের স্বঘোষিত শিক্ষকদের এসব আস্ফালন হাসির উদ্রেক সৃষ্টি করে মাত্র। তাইতো লালন সাঁইজী বলেছেন- পন্ডিত কানা অহংকারে/সাধু কানা অন বিচারে।
বেশ জোরে সোরে বলা হয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমের একটি সম্পাদকীয় নীতি রয়েছে। টিভি টকশোতে মধ্যরাতে এসব মিথ্যাচার নিয়ে তথ্য প্রাপ্তি/ব্যাখ্যা তো সম্পাদকীয় নীতিমালা অনুযায়ী বলার এবং জনগণের পাবার অধিকার রয়েছে। সুষ্পষ্টভাবে তথ্য বিকৃতি, গায়ের জোরের যুক্তি ও অতি কৌশল বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের দায়িত্ব ও মর্যাদাবোধ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কাগজ কলমে গণমাধ্যম কে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় কিন্তু এটি যে বাস্তবিক অর্থে সব সময় ঠিক নয় তা উপলব্ধি করা কঠিন নয়। প্রক্রিয়াজাত সংবাদ, সম্পাদকীয় নীতির নামে ব্যক্তি বা কতিপয় গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির সংবাদ, অশুভ উদ্দেশ্য প্রণোদিত টকশো হরহামেশাই হচ্ছে। টেলিভিশন টকশো পরিণত হয়েছে বিশেষ লক্ষ্য পুরনের হাতিয়ার। কতিপয় গণমাধ্যম কতিপয় ব্যক্তির খেয়াল খুশির বাহনে পরিনত হয়েছে।
স্বার্থের জন্য অন্ধ উম্মাদ গণমাধ্যম ব্যক্তির তালিকা বেশ লম্বা। প্লট ফ্ল্যাট, মালেয়েশিয়া-অ্যামেরিকায় বিত্ত বৈভবের লম্বা ফিরিস্তি কম বেশী সবার জানা। বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টির গুঞ্জন উঠলেই টকশোতে কারো কারো সোচ্চার উপস্থিতি পরে আত্মগোপন করার সংবাদ অজানা নয়। 
শাহবাগ গণ জাগরণের সময় সব নীতি নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে একটার পর একটা ফর্মুলেটেড সংবাদ সীমাহীন প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছে গোটা গণমাধ্যম সংস্কৃতিকে। সাতক্ষীরায় জঙ্গী দমনে ভারতীয় বাহিনীকে জড়িয়ে কাল্পনিক সংবাদ প্রচারের কথা অনেকেই জানি।
বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশ্বজিৎ হত্যা, নারায়নগঞ্জে ৭ খুন, আগুনে পোড়া নিরীহ মুখগুলোর ভিডিও ফুটেজ বারবার দেখানো হয়েছে। এটি গণমাধ্যম কে ব্যবহার করার একটি পরিস্কার অপকৌশল। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন মধ্য রাতের নিউজ ম্যানুপুলেট করে প্রচার করে।
সমস্ত নীতি নৈতিকতা অমান্য করে দলীয় অন্ধ আনুগত্যের প্রয়োজনে বিশেষ সংবাদ তৈরী করা হয়। ফেরারী আসামীর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অসহায় উপস্থিতি প্রমাণ করে এদেশে গণমাধ্যমের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। 

পত্র পত্রিকায় প্রতিদিনই প্রবন্ধ ছাপা হয়, সাম্য সমতা-বৈষম্যের বিরুদ্ধে নানা পরামর্শ যারা দেন তাদের অনেকরই তো পাহাড় সমান সম্পদ, ৫/৭ টি গাড়ি বাড়ী। দেশী-বিদেশে বিস্তৃত ভুতুড়ে নেটওয়ার্ক। কি হাহাকার তাদের কন্ঠে, কি দারুন প্রতিবাদের ভাষা তাদের। কত চমৎকার বৈপরিত্যের শহরে নাগরিক সব আয়োজনে বুক উচু করে বেমালুম কথার ফুলঝুরি হাকান নাগরিক উৎসবের এই সব অতিথীরা। মেরুদন্ডহীন অনেক উম্মাদ শুধু বলেই যান একবারও খোঁজ খবর   নিয়ে জানতে চান না তাদের এসব ভদ্রচিত খিস্তি খেউর জনগণ গ্রহণ করেন না। নিজের জীবনের বিত্ত বৈভবের ঝুড়ি থেকে উৎসরিত মানবপ্রেম-দেশপ্রেম আর পরামর্শের পর পরামর্শ অপাংতেয়,  বুমেরাং হয়ে বারবার তাদের দিকেই ফিরে আসে। সীলমোহর মারা এসব তথাকথিত সুশীল সজ্জনেরা এই সহজ সত্য পুরস্কারের মাহাত্ম্য অনুধাবনে অক্ষম। হাল আমলের সুদের ব্যাপারীর সৌখিন দেশপ্রেম একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ তামাশা। নির্বাচন কমিশনে হলফ নামার তথ্য নিয়ে সোচ্চার সুশীলরা যদি নিজেদের সম্পদের বিবরন জাতিকে দিতো তবে ঢের বেশী কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ তারা পেতে পারতেন। যারা কেবল রাজনীতিতে সুবিধা করতে না পারার কারণে তথাকথিত সুশীল হয়েছেন, তারা আগে বলুক আমাদের অতীত কর্মকান্ড ভুল ছিল। যারা পেশাগত কারণে বিবেকের তাড়নায় তথাকথিত সুশীল সমাজের হয়ে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে চান তারা জনগণকে সাক্ষী রেখে বলুক কোন পরিস্থিতিতেই পুত্র পরিজন এবং নিজের জন্য দলীয় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করবেন না। এটাও যদি সম্ভব না হয় তবে প্রকাশ্যে বলুক আমি দলীয় আনুগত্যশীল। জনগণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর এই মোনাফেকি সমাজে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। আর তা না হলে অধিকতর দেশপ্রেমের স্বার্থে স্বঘোষিত সুশীলরা নিজেরা মিলে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ফ্রন্ট গড়ে তাদের কর্মসুচী নিয়ে জনগণের মুখোমুখি হোক। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ গ্রহন করুক। তবেই তাদের চিন্তা শুভ না অশুভ জনগণ বিচার করবে। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে সব মানুষের কথা বলার অধিকার রয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক দলের শত ব্যর্থতা সত্বেও রাজনীতির বাইরে দেশ পরিচালনার বিকল্প কোন সুযোগ থাকতে পারে না। সুশীল নয় বুদ্ধিজীবি নয় আদর্শিক রাজনীতিক ও সাধারণ মানুষ সত্যের জন্য শান্তির জন্য অগ্রগতির জন্য কাজ করেছে সেই নজীর স্বাধীকার-স্বাধীনতা আন্দোলনের সব পর্যায়ে এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে অহরহ রয়েছে।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন