বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫

সময় এসেছে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলার

সময়এসেছে দূর্বার গতিতে এগিয়েচলার

সংলাপ ॥ সহজ কথাটি সহজে বলা যায় না। বাঁচাও বললেই বাঁচে না। হামলার মুখে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ জনগণকে নিরাপত্তাহীন করে দেয়। অপ্রত্যাশিত মিথ্যাচার এবং অবরোধ প্রতিরোধকে ডেকে আনে। সেটাকে বাস্তবায়িত করতে হয়। না হলে একতরফা মিথ্যাচার এবং অবরোধ মানুষকে হতাশ করে দেয়। কলমবাজ, অস্ত্রধারী - প্রত্যেককে তার মুদ্রাতেই ঋণ শোধ করতে হয়। তা হলেই জনগণ বাঁচে।
জনগণের স্বার্থই সরকারের স্বার্থ। জনগণের জীবন-মান-সম্পত্তি রক্ষার দায় তাদেরই। শুধু পুলিশ প্রশাসনের নয়। মাফিয়াদের চিহ্নিত করতে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের তাড়াতে হবে। মানুষকে বলতে হবে, ধর্মের নামাবলী গায়ে দিয়ে মিথ্যার বেসাতি দিয়ে যারা সম্পত্তি বানাচ্ছে তাদের বর্জন করুন, আমরা আছি। কলেজে কলেজে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়াজ উঠুক ’৬৯ এর মতো ‘আমরা প্রস্থত! তোমরা যদি কলম ধরে লড়ো, কলম দিয়েই তার জবাব দিতে প্রস্থত!’ ‘আমরা প্রস্থত! অস্ত্র হাতে যদি লড়তে চাও, আস, আমরা খালি হাতেই প্রস্থত!’ যে ধাক্কা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরা খেয়েছেন, তার কারণ তারা সাধারণ রীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন। নিস্তরঙ্গ সমুদ্রে পার হয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধী লোকগুলো অনেক, অনেক গুণ বেশি অসভ্য, উদ্ধত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। আপাদমস্তক সর্বত্রই দুর্নীতি। নীতিই নেই তো তার আবার দুর্নীতি! মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের ধাক্কা খাওয়ার কারণ একটাই, যথেষ্ট পরিমাণে নিজেদেরকে সংগ্রামের হাতিয়ার রূপে খাটাতে পারেনি। পরিবর্তন করতে রূপান্তরও করতে হবে। পরিবর্তন হচ্ছেই, হবেও। পরিবর্তন মানে একে পাল্টে ওকে বসানো নয়। বিদ্যুৎ ছিল না, বিদ্যুৎ আসছে। স্কুল ছিল না, স্কুল হচ্ছে। লোকে বেশি বিদ্যুৎ, আহার, শিক্ষার সুযোগ ভোগ করছে। এটা পরিবর্তন। বাংলার মানুষ চায় তো রূপান্তর-কী সমাজের, কী ব্যক্তির! তাই উৎপাদন সম্পর্ক পাল্টাতে হবে।
বাংলাদেশে প্রয়োজন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবস্থানকে নতুনভাবে নির্ধারণ করা, যেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের আলোকে আলোকিত হয়েই প্রশাসন পথ চলতে শেখে। প্রয়োজন দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা, যেন জনগণের সার্বভৌমত্ব অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্বার্থান্বেষী আমলাতন্ত্র ঘৃণিত। কিন্তু আমলাব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রতিনিধিত্বমূলক নেতৃত্ব ব্যতীত গণতন্ত্র যেমন অর্থহীন, প্রশিক্ষিত আমলা ছাড়াও তেমনি তা অচল। গণতন্ত্রের স্বার্থে দুইয়ের সুনির্দিষ্ট অবস্থান প্রয়োজন। তবে তা প্রধানত নির্ভর করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সৃজনশীল প্রত্যয় এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের ওপর।
বাংলাদেশে বেশকিছু সংখ্যক প্রশাসনিক কর্মকর্তা রয়েছেন যারা গণমুখী প্রবণতার অধিকারী, যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য কামনা করেন। কিন্তু  প্রশাসনের বিরাট অংশ এখনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত হতে শেখেনি। এখনো তাদের দায়িত্বশীলতার পাঠ সমাপ্ত হয়নি। নেই কল্যাণমূলক উন্নয়নমুখী কর্মসূচি সফল করার অভিজ্ঞতা। প্রথাগত সংকীর্ণতার দেয়াল ভেঙে জনগণের দুর্দশা লাঘবে অনীহা অধিকাংশের। সংস্কারের আবদ্ধতা ছিন্ন করে দেশের জন্য, দশের জন্য আত্মনিয়োগে আজো তারা অপারগ। নীতি প্রণয়নকারী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে সবরকম বিকল্প তুলে ধরার মানসিকতা এখনো তারা অর্জন করেননি। এখনো প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতৃকে চিহ্নিত করেন ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী’, ‘তদবিরকারক’, ‘গোলমাল সৃষ্টিকারী’ হিসেবে। এর কারণ অবশ্য সুস্পষ্ট। এসবের মূল নিহিত রয়েছে অতীতে, বিশেষ লক্ষ্যে নির্মিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার অঙ্গীকারে, প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাঠামো এবং কার্যক্রমে, কর্মকর্তাদের শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে।

বাংলাদেশে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এক অংশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপযোগী করে নিজেদের গড়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে গণতন্ত্র তেমন প্রাণবন্ত হয়নি কোনো সময়ে। গণতন্ত্রের প্রবাহ এখানে বারেবারে হোঁচট খেয়েছেস্বৈরশাসনের প্রাচীরে। এখন পর্যন্ত তা লাভ করেনি দুর্বার গতি। এ যুগ আক্রমণের যুগ। এতদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিরা শুধু অর্জিত অধিকার রক্ষা করতেই ব্যস্ত থেকেছে, এখন থেকে নতুন অধিকার অর্জনের জন্য কৃষক, শ্রমিক সবাইকে নিয়ে আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করতে হবে। জয় সুনিশ্চিত। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন