বৃহস্পতিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৫

ডিজিটাল বাংলাদেশঃ দেশের স্বপ্ন


ডিজিটাল বাংলাদেশঃ  দেশের স্বপ্ন

শেখ উল্লাস ॥ ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সুখী, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীরবৈষম্য, দুর্নীতি, দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ, যা প্রকৃতপক্ষেই সম্পূর্ণভাবে জনগণের রাষ্ট্র এবং যার মুখ্য চালিকা শক্তি হচ্ছে ডিজিটাল প্রযুক্তি। একুশ শতকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে প্রয়োজন ডিজিটাল বাংলাদেশ’। (তথ্যসূত্রঃ দিন বদলের এক বছর উপলক্ষে ৬ জানুয়ারি, ২০১০ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত ক্রোড়পত্র)। ক্রোড়পত্রে আরো বলা হয়, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বস্থত জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম সোপান। একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যে সমৃদ্ধ ও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের সেই স্বপ্নকে পূরণ করবে’। এই বক্তব্য বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক-শিক্ষা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত সময়োপযোগী-এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে তখন দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য এমন একটি রূপকল্পের কোনো বিকল্প নেই। একদিকে বাঙালির হাজার বছরের লালিত চেতনা মুক্তিযুদ্ধ, অপরদিকে বর্তমান সময়ের তথ্য প্রযুক্তির অপার সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারলেই কেবল টিকে থাকা যাবে, সময় ও পারিপার্শ্বিকতাকে জয় করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে। ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেন যে, স্বাধীনতার ৫০ বছরে (২০২১ সালে) বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। একটি উন্নত দেশ, একটি উন্নত ডিজিটাল সমাজ, একটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী, রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন-এই স্বপ্নটাই দেখিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবার পর আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকার প্রত্যয় দেখিয়ে আসছেন বিভিন্ন কাজে-কর্মে ও কথায়।
অপরদিকে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটি সুখবর হচ্ছে দেশে দারিদ্র্য সত্ত্বেও মাথাপিছু আয় বাড়ছে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ডক্টর কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য সত্ত্বেও মাথাপিছু আয় বাড়ছে। কৃষিখাত ও রেমিটেন্সের যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হওয়ার ফলে গড় মাথাপিছু আয় বাড়ছে। এ আয় আরো বাড়তে পারত যদি অন্যান্য সমস্যা না থাকত। মাথাপিছু আয় বাড়লেও ধনী-গরিববৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছে। কিছু ধনী মানুষের আয় বাড়লেও দরিদ্র মানুষের আয় বাড়ছে না। আর এটাই হচ্ছে সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ।’
অবশ্য এদেশের শহর-নগর-গ্রাম-গঞ্জ-বস্তির ভেতরের খবর যারা জানেন তারা অর্থনীতিবিদ না হলেও বিবেককে একটু জাগ্রত করলেই বুঝতে পারেন যে, সমাজের বিরাট একটি অংশই দারিদ্র্যসীমার কত নীচে বাস করছে। আর এই দারিদ্র্যাবস্থা থেকে তাদের রাতারাতি মুক্তি পাওয়া তো দূরের কথা, মুক্তি পাওয়ার স্বপ্নও তারা এখন আর দেখতে পারছে না। যে রুদ্র শ্রেণীটির হাতে দেশের সকল সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে পড়ছে তাদের ‘দয়া-দাক্ষিণ্য ও ‘করুণার’ ওপরই নির্ভর করছে এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকা।
সেই কবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন,-
‘এই সব মূঢ়, মূক মুখে দিতে হবে ভাষা
এই সব ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলতে হবে আশা’।
তাই আজকের দিনে যেখানে ব্রিটিশ গেছে ৬৮ বছর, পাকিস্তানীরা গেছে ৪৪ বছর সেখানে এই দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর অবস্থার উত্তরণে যথাযথ পরিকল্পনা নেয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা আমার মিথ্যা হয়ে যাবে যদি আমার বাঙালি ভাত না পায়, পরনের কাপড় না পায়’। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অবিস্মরণীয় গান ছিল -‘বার বার ঘুঘু এসে খেয়ে যেতে দেবো না কো আর ধান,
বাংলার দুশমন, তোষামুদি চাটুকার সাবধান, সাবধান, সাবধান।’
তখন ছিল বিদেশী ঘুঘু আর তাদের সাথে ছিল তোষামোদকারীরা - ১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসে এরাই রাজাকার, আলবদর আল-শামস-শান্তি কমিটির নেতা সেজে নিজেদের স্বার্থ-উদ্ধার করতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল-ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা আর প্রায় চারলাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হানির জন্য এরাই ছিল দায়ী।

তাই আজ স্বাধীনতার ৪৪ বছরের পর যখন দেশের মুক্তির পথ হিসাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা হচ্ছে তখন অতি সুবিধাভোগী ও মুনাফাখোরদের কবল থেকে জাতিকে মুক্ত করার সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। দেশ এখন অনেক এগিয়েছে এ কথা অস্বীকার করার কোনো জো নেই। কিন্তু এই এগুনোটা সকলের জন্য সমান না করতে পারলে, যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মান ও মূল্যায়ন না করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার, নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধি দেশের এই কঠিন বাস্তবতা অনুধাবন করে ধনী-গরিবেরবৈষম্য কমিয়ে আনার প্রয়োজনীয় কর্মপন্থা গ্রহণ করবেন-এটাই আজ জাতির বিবেকের প্রত্যাশা। ধর্মীয় অনুশাসনের কথা স্মরণ হয়- ‘প্রতিবেশিকে অভুক্ত রেখে, সংসারের সবাইকে শান্তিতে না রেখে যদি কেউ হজ্জ্বেও যায় সে হজ্জ্ব কবুল হয় না’। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন