শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৫

প্রবীণ

তারিফ হোসেনের সত্য....
প্রবীণ

প্রবীণের আরেকটি প্রতিশব্দ হতে পারে দূরবীণ। একথা শুনে কেউ হয়তো ভাবতে পারেন লোকটা কী অর্বাচীন- কীসে আর কীসে ধান আর তুষে, আমি বলি কেন নয়, তলিয়ে দেখলে সবই হয়। দূর ও সুদূর অতীতের চলচ্চিত্রের বর্তমান চালচিত্র ধারণ করে থাকে যে শারীরিক ও মানসিক সত্তাটি তার অপর নাম প্রবীণ। নবীনের দল গতকালের এই আয়নায় চোখ রেখে নিরাপদ আগামীকাল তৈরি করতে পারে। তবে কিছু ছেলে-ছোকড়া ভাবে প্রবীণেরা জঞ্জাল ও ছোবড়া; এদের স্থান হওয়া উচিত আঁস্তাকুড়ে। আরে ইয়ার রোসো অভিধান খুলে প্রবীণ শব্দটির ওপর একটু চোখ বোলাও দেখি। কী হে চোখ যে  একেবারে ছানাবড়া। প্রচলিত অর্থ বুড়ো-হাবড়া যে ভাবার্থে দক্ষ, অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, নিপুণ হতে পারে তা দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া। চোখ রোদচশমায় কান এয়ারফোন ক্যারিশমায় বন্ধ থাকলে শব্দবহর ঢুকবে কোন পথে? তবুও খোকাবাবুদের অবগতি এবং অপ্রতুল শব্দভাণ্ডার জনিত দুর্গতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু টিপস দিচ্ছি। বয়স বাড়ার ব্যাপারটি চোখে পড়ে বলেই বয়োবৃদ্ধ শব্দটি খুব পরিচিত। অথচ জ্ঞানে-গুণে-কর্মে বৃদ্ধ-ঋদ্ধ-সমৃদ্ধ হয়ে বর্ষীয়ানরা যে জ্ঞানবৃদ্ধ, গুণসিদ্ধ, কর্মভিজ্ঞ হতে পারে সে কথা কিশোর-যুবারা বেমালুম ভুলে যায়। নবতনরা মনে করে প্রবীণ বা পুরাতন মানেই হল সেকেলে সাবেকি। তাই পুরানা ঘরানা চিন্তাভাবনা  করে হবে কী ? নয়া আদমি সর্বগুণধর তাদের কপালেই জোটা উচিত সব আদর-কদর। কিন্তু বাংলা প্রবাদ বলে অন্য কথা - নয়ার নয় গুণ, পুরানোর আঠারো গুণ। ‘অতীত হলেই পতিত নয়, নয়া হলেই পয়া নয়’। ‘পুরানো চালে ভাতে বাড়ে, পুরানো ঘিয়ে মাথা ছাড়ে’।‘ টক হলেও পুরানো তেতুলের দাম বেশি।’লোকসাহিত্যের জনপ্রিয় চরিত্রে যেমন আছেন রাজা-উজির তেমনি সমান-রালে বুড়িরাও হাজির। বিশেষ করে ধাঁধা সৃষ্টিতে এরা বাধাস্বরূপ। ‘এক বুড়ি হাটে যায়; গালে-মুখে চড় খায়’-এই বুড়ি যে হাড়ি-পাতিল তা একটু মাথা খাটালেই করি ফিল। কিংবা ‘মাটির নীচ থাইকা আইল বুড়ি/ বুড়ি বড় সুন্দরী।’ উনরসের এই ধলাবুড়ি ধাঁধা-দুনিয়ায় রসুন হয়ে আছে। গল্প ফাঁদতেও শেষ ভরসা ওই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। চাঁদে চরকা কাটতে গল্পকার ছুঁড়ির পরিবর্তে বুড়িকেই বেছে নেয়। কারণ ছুঁড়িরা আনাড়ি আর বুড়িরা খেলাড়ি। লোকক্রীড়ায় আনাড়ি বুড়ি নির্ভর খেলাতে বুড়িকে নিয়েই যত হুড়োহুড়ি। শৈশবে কোন কন্যাসন্তান দুষ্টুর শিরোমনি হয়ে উঠলে তাকে ডাকা হয় পাকাবুড়ি।

নবীন বৈদ্য একটি রোগ সারাতে বিশ রকম দাওয়াই প্রয়োগ করে; পক্ষান-রে প্রবীণ বৈদ্য বিশটি রোগ সারায় একটি দাওয়া দিয়ে। তবে একটি বিষয়ে জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ দুজনেই এককাট্টা। উভয়েই দাওয়া অর্থাৎ ঔষুধ লিখতে যতখন উচ্চকিত, রোগীর প্রতি দয়া বা দোওয়ার ক্ষেত্রে তারা ততখানি সংকুচিত। পরিশেষে বুড়ো আঙ্গুল থুড়ি বুড়ো আঙ্গুলের গুরুত্ব দেখিয়ে আলোচনা শেষ করব। আকারে ছোট হলেও সৎকারে বুড়ো আঙ্গুলের ভূমিকা রীতিমত বড়। বিবর্তনের ধাপেধাপে কবজির অগ্রভাগে যেদিন বুড়ো আঙ্গুলের কার্যকারিতা প্রকাশ পেল সেদিন থেকে সভ্যতা অবিশ্বাস্য গতি লাভ করল। কনিষ্ঠ না থাকলেও সংসারে খুব একটা অনিষ্ট হয় না। কিন' বৃদ্ধাঙ্গুলের গরহাজিরায় আমাদের হস্ত রীতিমত বিধ্বস্ত। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন