সময়ের সাফ কথা
....
সেবা-ই পরম ধর্ম
দিগন্ত ॥ সর্বজীবের প্রতি সহানুভূতিশীলতা
ও উপকারের জন্য যে ভাব তার নাম সেবা। অপরের দুঃখে দুঃখিত হওয়া, অন্যের বিপদে সাধ্যমত
সাহায্য করা, পিতা-মাতার যত্ন নেয়া, সাধু-মহৎ গুরুজন দিগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া,
সর্বপরি প্রত্যেক মানুষ তথা সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টা বিরাজমান এই জ্ঞান করতঃ সর্বজীবে
ও বিশ্ব মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রচেষ্টা করার নাম মানব ধর্ম। মানব ধর্ম
নতুন কোন ধর্ম নয় বরং সকল ধর্মের নির্যাস।
স্রষ্টা সৃষ্টির সঙ্গে এক হয়ে আছেন। সর্বব্যাপী, সর্বাত্মক
তিনি। যা কিছু অস্তিত্ব অর্জন করেছে তা এখন, এখানেই প্রতিষ্ঠিত। জগত যা দিয়ে গঠিত মানবদেহও
তা দিয়েই গঠিত। এতটুকু জানাই মানব ধর্ম পালনের জন্য যথেষ্ট। মানব ধর্ম পালন করতে হলে
রাজনৈতিক দলের ন্যায় দল গঠন করতে হয় না, তীর্থে যেতে হয় না, কোন বিশেষ প্রকারের পোশাক
পরিধান করতে হয় না, কোন প্রতীক ধারণ করতে হয় না, কোন আনুষ্ঠানিকতা করতে হয় না, পিতা-মাতা,
স্বামী-স্ত্রী, পূত্র-কন্যা ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হতে হয় না। এজন্য বক্তব্য ও বিবৃতির
মাধ্যমে সমাজে সামপ্রদায়িকতার বিষ বাষ্প ছড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না, শুধুমাত্র অহমিকা বর্জন
করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থের ঊর্দ্ধে ওঠে মানব কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখলেই মানব
ধর্ম পালিত হয়।
যারা ধর্মের নামে সমাজে সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করে তারা ধার্মিক
নয়, সাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িক ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানব সেবার নামে দরিদ্রতা, মূর্খতা,
রোগ-শোক, বিপদ-আপদের সুযোগ নিয়ে এবং অর্থ ও চাকুরীর লোভ দেখিয়ে মানুষকে ধর্মান্তরিত
করে নিজেকে ধন্য মনে করে। বাস্তবে পৃথিবীর সকল মানুষ যদি এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোক
হয় তবুও হিংসা ও সংঘাত বন্ধ হবে না। এখন পৃথিবীতে সংঘাত করছে একই সম্প্রদায়ের লোকেরা।
যেমন, মুসলমানরাই মুসলমানদের সাথে সংঘর্ষ করছে পৃথিবীর দেশে দেশে। সকল সাম্প্রদায়িক
সংকীর্ণতার ঊর্দ্ধে থেকে মানুষ যতদিন মানব ধর্মের আশ্রয়ে না আসবে, ততদিন পৃথিবীতে শান্তি
আসবে না।
পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছুরই মূল্য নির্ধারিত হয় মানুষের
প্রয়োজনে এবং মানুষের দ্বারা। জগতের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে মানুষ। জগতের ভাঙ্গা-গড়া সবই
হয়েছে মানুষের দ্বারা। এই জগত নিত্য রূপান্তরের দ্বারা যে রূপ নিচ্ছে ও ভবিষ্যতে যে
রূপ নেবে এর মূলে রয়েছে মানুষ। দেশে দেশে কালে কালে মানুষ এক প্রকার সমাজ ব্যবস্থা
ভেঙ্গে গড়ে তুলছে অন্য প্রকার সমাজ ব্যবস্থা মানুষেরই প্রয়োজনে। যুগে যুগে মানুষের
মানবতাবোধ মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামের অনুপ্রেরণা দিয়েছে,
জীবনের পথচলার সামর্থ্য দিয়েছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করতে, নানা মত ও পথ অবলম্বন
করে ভেদের যে অভ্রভেদী প্রাচীর নানা আকার ও প্রকারে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠেছে তা চূর্ণ
করতে প্রয়োজন মানবতাবোধের বিকাশ। কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের সুসমাচার প্রচার করে ভেদের
অবসান তো ঘটানো যাবেই না বরং তা আরো শক্তিশালী হবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভেদের কারণ নির্ণয়
ও প্রতিকারের প্রচেষ্টা করাই বাস্তব সম্মত। যা বাস্তব সম্মত তাই সত্য। মানুষের উপলব্ধিতে
যা ধরা পড়েছে কেবল তারই অস্তিত্ব আছে। মানুষ যা উপলব্ধি করতে পারে না তার কোন অস্তিত্ব
নেই। অস্তিত্ব মাত্রই ভাঙ্গাগড়ার অধীন। কোন কিছুই স্থায়ী নয়, চূড়ান্ত নয়। স্বয়ং সিদ্ধ
সত্য হলো যা আমি'র মধ্যে সিদ্ধ। পূর্ণতা বলে কিছু নেই। আছে কেবল পূর্ণতার প্রচেষ্টা।
জীবনকে সর্বোত্তম শিল্পরূপে, সকল শিল্পের অধিষ্ঠান রূপে
গড়ে তোলাই মানবতার আদর্শ। এ আদর্শের ভিত্তিতেই মনুষ্য রচিত সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের
প্রাচীর অতিক্রম করে মানুষ তার জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারে বাস্তবতা বা সত্যকে। বাস্তব
যুক্তি ও বিচারের মাধ্যমে সত্যকে খুঁজে পেতে হবে। যা আছে তা নিয়েই জীবন। জীবনকে সমুন্নত
করবার প্রচেষ্টাই জীবন। বেঁচে থাকার এষণাই রচনা করে জীবন বিকাশের পটভূমি।
অসাধারণ! আমিও মানব ধর্ম পালন করি।
উত্তরমুছুন