বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৪

এসো শ্রাবণ বারিধারায় করি স্নান

সময়ের সাফ কথা ....
এসো শ্রাবণ বারিধারায় করি স্নান

সংলাপ ॥ শ্রাবণ! হাক্কানী চেতনাবোধের প্রতিটি মানুষের কাছেই ভিন্নমাত্রায় উপলব্ধির মাস। বিশেষ করে মিরপুর আস্তানা শরীফের এবং বাংলাদেশ জুড়ে সমগ্র হাক্কানী খানকা শরীফের আশেকান ভক্ত এবং দরবারী দরদীদের কাছে এই মাসটির গুরুত্ব অনুভূতির। যদিও একটি দুঃখবোধ অনেকেরই অন্তরানুভূতিতে তীক্ষ্ণ হতে পারে এই ভেবে যে - যাকে নিয়ে এই শ্রাবণ, হাক্কানী চেতনার অনুষ্ঠানমালায় প্রবাহিত হতে থাকে - সেই মহান সাধকের জাগতিক অনুপস্থিতি। কিন্তু সে একেবারেই ক্ষণিক, কারণ তাঁর বিশাল জ্ঞানজগতের ধনভাণ্ডারকে হাক্কানী অনুসন্ধানীরা পর্যায়ক্রমিক অনুসন্ধিৎসু কর্ম-প্রেরণার মধ্যে নিজেকে নিবিড় করতে সচেষ্ট হলেই, তাঁর অনুপস্থিতি একেবারেই চেতনা বহির্ভূত হয়ে যায় তা প্রমাণিত। তিনি আছেন - বিস্ময়করভাবে দেখছেন, কর্ম-প্রেরণার নির্দেশ যোগাচ্ছেন, এমনই বাস্তবতায় শ্রাবণের অনুষ্ঠান হয় সকলের শান্তিময় জীবনের আকাঙ্খার এবং সত্যের পথে চলার দৃঢ়প্রত্যয় ও আর্জি পেশের মধ্য দিয়ে।
মহান সূফী সাধক আনোয়ারুল হক পর্দা নিলেন ২০ শ্রাবণ ১৪০৬ সালে, ইংরেজি ০৪ আগষ্ট ১৯৯৯ সনের বুধবার। সত্য সন্ধানের এই মহান পুঁরুষ পর্দা নেয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানব কল্যাণে তার চেতনালব্ধ ধারণকৃত জ্ঞানকে রেখে যাওয়ার জন্য ছিলেন পরিপূর্ণ সচেতন এবং সচেষ্ট। তারই অব্যাহত ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছেন তিনি তাঁর বাণী এবং কর্মময় জীবনাচার এর মধ্যে। যারা তাঁর প্রত্যক্ষ সান্নিধ্যে এসেছিলেন, তারা তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতায় এই মহান সাধকের কর্মের উৎস উৎসাহ প্রেরণাকে নিজের চেতনাবোধে আত্মস্থ করে জীবন জিজ্ঞাসার অসীম চলার পথকে আনন্দময়তার সৌন্দর্য সম্ভোগের অতিন্দ্রীয় সাফল্য-আনন্দকে উপভোগ্য করে তুলতে পারছেন। এই মহান সাধক তাঁর সাধনার ফসল যে রেখে গেলেন তা মানব কল্যাণে মানুষের সামনে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে, কাজে লাগাতে বাংলাদেশ হাক্কানী খানকা শরীফ এর তত্ত্বাবধানে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে প্রতি বছরই চলে বাণী অন্বেষণের অনুষ্ঠান। উদ্দেশ্য একটিই - এই বাণীর অন্তরাত্মাকে অনুভব করা এবং তাকে নিজের কর্মময়তার সাথে মিলিয়ে মানব জন্মের চেতনাকে শাণিত করে লক্ষ্যকে সামনে রেখে জীবনাচারের প্রাপ্ত-অর্পিত-সম্পর্কিত বস্তুময়তা থেকে নিজেকে বের করে সত্যানুসন্ধানকে অর্থবহ করে তোলা।
হাক্কানী ভক্ত আশেকানদের কাছে এই বাণী অন্বেষণের অনুষ্ঠানটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই আলোচনার মধ্য দিয়ে বছর ধরে তাদের চিন্তাপ্রবাহের মধ্যে আবর্তিত সত্যানুসন্ধানের অনেক প্রশ্নেরই সমাধান বেরিয়ে আসে, যা তাদের জ্ঞান অন্বেষণের পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। তাই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা আশেকান ভক্ত এবং শাহ্‌-সাহেবগণ শ্রাবণের অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে জ্ঞান ধারার অনন্ত বারিবরষণের শুদ্ধ স্নাত হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করেন। যেহেতু জ্ঞান জগত অনন্ত-অসীম এবং তা বাহির থেকে কাউকে কখনো প্রদান করা যায় না, তাই সেই জগতের সন্ধান যারা পেয়েছেন - তাদের কর্মবৃত্ত নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করা হয় বলেই সেই পথে চলার সাহস এবং কর্মপথ তৈরির ক্ষেত্রে স্ব-স্ব চেতনায় ইতিবাচকতা সৃষ্টি করে।
যেমন - সূফী সাধক আনোয়ারুল হক যখন বলেন, 'মুর্শিদ আমি খুঁজব নাকো বন জঙ্গলে যাইয়া, আমার মাঝে আমার মুর্শিদ আছেন যে পথ চাইয়া।' তখন অনেকেই নিশ্চিত বিশ্বাস করেন এই বাণীর মধ্য দিয়ে সাধক নিশ্চিত করেছেন, মুর্শিদের জন্য বন-জঙ্গলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। নেই কারো আদেশ-উপদেশ-নিষেধ শোনার কোনো প্রয়োজন, কারণ মুর্শিদ তো আমার মধ্যেই আছেন এবং আমার পথ চেয়ে আছেন। সুতরাং আর ভাবনা কি? আমি চাইলেই তো তাকে আমার মতো করে আমার প্রয়োজন মতো উপস্থিত উপস্থাপনা সংযোগ-বিয়োগ করতে পারি। এ ধরনের বিশ্বাস কিংবা ধারণার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির বিপুল অবকাশ যে আছে তা সত্যানুসন্ধানীদের পথ চলার মধ্য দিয়ে মোটামুটি ফুটে উঠে। বিশেষ করে - কে মুর্শিদ, কার (কোন ব্যক্তি বা সত্ত্বার) মুর্শিদ, কখন মুর্শিদ - কি প্রয়োজন মুর্শিদের? কোন পর্যায়ে নিজের চেতনায় মুর্শিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়? প্রশ্নগুলো নিয়ে যখন চিন্তা জগতে উর্দ্ধ গতি প্রবাহিত হয়, তখন অনেকেরই চিন্তা জগতে প্রেম, বিশ্বাস এবং বোধ যে নড়েচড়ে উঠে একরৈখিক হয় তা উপলব্ধি করা যায়।
মানব জীবনের প্রধান লক্ষ্য শান্তি। কিন্তু সেই শান্তি শব্দটি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নানা রং রূপ রসে আদল প্রাপ্ত হয়। নিঃসন্দেহে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই তা আলাদা আলাদা চেহারা নিতে পারে। সঙ্গত কারণেই শান্তিকে বিশেষ সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে জটিলতা আছে এবং বেশ কঠিন। একথা অবশ্যই জাগতিক চেতনাবোধের বস্তু জগতের বস্তুময়তায় বেড়ে ওঠা জগতের নিজস্বার্থের কেন্দ্রাভিমুখী চিন্তার বেলায়ই প্রযোজ্য। কিন্তু শান্তি বিষয়টি যখন জ্ঞান জগতের ক্ষেত্রে হয় তখন শান্তি ব্যক্তির ভিন্নতা সত্ত্বেও আনন্দলোকে এককেন্দ্রিক লক্ষ্যাভিমুখী। সেখানে ব্যক্তির স্বতন্ত্র সত্তা আর একটি ভিন্ন সত্তায় আপন অস্তিত্বের বিলীনতায় বিশ্বাসী হতে বাধ্য। হাক্কানী মৌলিক চেতনাটি এখানেই। সূফী সাধক আনোয়ারুল হক তাঁর প্রতিটি বাণীর মধ্যেই এই ইঙ্গিত এবং নিদর্শন রেখে গেছেন, যাতে মানুষ তার বস্তুময়তার ভোগ আকাঙ্খা লিপ্সা ঈর্ষা থেকে নিজেকে উত্তরণ ঘটিয়ে জ্ঞান জগতের পথকে বেছে নিয়ে জ্ঞানবান হয়। ব্যক্তি যত বেশি স্বার্থকেন্দ্রিক এককেন্দ্রিকতায় অবস্থান নেবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা তত বেশি বাড়তে থাকবে। এর উদাহরণ আজকের আমাদের এই দেশ। এই সময়। যেখানে মানুষের চেতনাবোধ বিপরীতমুখী হয়ে শূন্যের দিকে নেমে আসছে। সমাজের প্রতিটি স্তরেই এখন আস্থাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা ধীরে ধীরে সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই গ্রাস করছে। এর প্রধান কারণই হলো - জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অনীহা, স্থবিরতা ও বন্ধ্যাত্ব। তাই কেউ মাদকের মধ্যে সুখ খুঁজছেন কেউবা অর্থবিত্তে। দুটোই নেশা। এই নেশায় যারা সমর্পিত - তাদের কাছে ধর্ম-দর্শন-কলা কিংবা জীবন চেতনাবোধ কোনো অর্থ বহন করে না।
কামনা তাড়িত অর্থ-বিত্তের ভোগাকাঙ্খার স্বীয় স্বার্থ কর্মের যে জীবন ব্যবস্থার সুখ ও শান্তির তথাকথিত জীবন ধারণা আমাদের সামনে আছে, তার প্রতি আকৃষ্ট থেকে চেতনা জগতের শান্তির আঁধার তথা বিজ্ঞানময়তা সৃষ্টি করা যায় না। কেউ যখন স্ব-উদ্যোগী হয়ে স্ব-চেতনার শাণিতবোধ কামনায় অনন্ত জ্ঞান আধারে প্রবেশ ইচ্ছুক তখনই তার জন্য প্রয়োজন একজন উন্নত চেতনাবোধের সহায়ক মানুষ, যিনি তার এই চলার পথকে সহজতর এবং কৌশলী হতে সাহায্য করতে পারেন।
এখানে কৌশল বলতে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করে মনুষ্যত্বের পথে নিরন্তর যাত্রাকেই বোঝানো হচ্ছে। এই কর্ম প্রক্রিয়া মানুষ চাইলেই ধরে রাখতে পারে না। প্রতিনিয়ত নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ করতে হলে সচেতন কর্ম প্রক্রিয়ায় কৃচ্ছতার প্রশ্নটি এসে যায় সবার আগে। আর কৃচ্ছতার অন্য অর্থই হচ্ছে ত্যাগ। যা মানুষের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্যতা পায় না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে রাজনৈতিক ইসলাম সাফল্যজনকভাবেই আমাদের চেতনা জগতকে বস্তু ও বিষয়রাশির কামনা তাড়িত জীবনবোধ তৈরি করে মুহাম্মদী চেতনাবোধকে সুকৌশলে ব্যক্তি এবং সামাজিক জীবন বোধ থেকে বহু দূরে নিক্ষেপ করতে পেরেছে। যার ফলে ত্যাগের জীবনধারা তৈরিতে আমরা একেবারেই প্রস্তুত নই। কুরআন-সুন্নাহ-ইসলাম নিয়ে দেড় হাজার বছর ধরে পরস্পরের হিংসা প্রতিহিংসার ইতিহাস সৃষ্টি করেই চলছি। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধের বেলায় একবার চিন্তা প্রবাহে আসে না কুরআন-সুন্নাহ কিংবা নবীজী অথবা ইসলামের কথা, তখন নিজের স্বার্থ, গোষ্ঠী কিংবা দল অথবা রাজনৈতিক স্বার্থই থাকে মূখ্য। একাত্তরের পাকিস্তানীদের বাঙালি হত্যাযজ্ঞ (যা তারা তখন ইসলামের নামেই চালাচ্ছিল) ধর্মের নামে আজও বাঙালি মানসে প্রজ্জ্বলিত। এখন ধর্মই হচ্ছে এই দেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় এবং কার্যকর হাতিয়ার। যারা সরাসরি সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিয়েছে তাদের তো কথাই নেই, যারা সাইনবোর্ড লাগায়নি তারাও ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার এখন যথেচ্ছভাবেই চালিয়ে যাচ্ছেন। যার সাথে ধর্মের মূল চেতনা আত্মজিজ্ঞাসার ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। আত্মজিজ্ঞাসা এবং আত্মকর্ম বিশ্লেষণ ছাড়া যে ধার্মিক হওয়া যায় না সেই বোধ তৈরিতেই সাধকরা তাঁদের জ্ঞানভান্ডারকে উন্মুক্ত রেখে গেছেন মানব সমাজে, ব্যক্তির মানুষ হবার প্রায়শে শান্তিময় (ইসলামের) যাত্রায়। সমাজে ব্যক্তির বিশাল ভূমিকা এবং প্রভাব আছে, সেক্ষেত্রে ব্যক্তির কর্মপ্রেরণা এবং প্রকাশই তার ধার্মিকতা। কর্মপ্রেরণায় বোধ থাকলে মানুষের চেতনায় শান্তিময়তা তৈরি হতে বাধ্য। এই সত্যই তাবৎ ধর্মগ্রন্থ থেকে শুরু করে সাধককূলের কর্মময় জীবন ও বাণীর মধ্যে নিহিত আছে। সত্যকে উপলব্ধি করে ব্যক্তি স্ব-উদ্যোগী হয়ে অনুসন্ধানী পথে আরাদ্ধ আরাধনায় নিজেকে নিয়োজিত এবং নিমগ্ন করেই পথ তৈরি করতে পারে। এই পথ তৈরিতে তার প্রদর্শক অবশ্যই প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে খোঁজা ব্যতিরেকে বিকল্প কি? কিন্তু খুঁজে পেলেই তিনি পথ প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত থাকবেন এমন নিশ্চয়তা কোথায়? কিংবা উপস্থিতিই গ্রহণযোগ্যতা তা কি বলা যায়? কাজেই যতক্ষণ পর্যন্ত এই গ্রহণযোগ্যতা ব্যক্তি নিজে সৃষ্টি না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত মুর্শিদ জ্ঞান কি অতিকথন নয়? কাজেই মুর্শিদ বললেই মুর্শিদ তৈরি হয় না, তার জন্য প্রয়োজন কর্মপ্রচেষ্টা দ্বারা কর্মবৃত্ত সৃষ্টি। একটু পরিষ্কার করে বলা যায়, অভ্যাস বার বার পরিবর্তন করে জ্ঞান রাজ্যে প্রবেশের পথ করা। এই পরিবর্তনের ধারায় একটি পর্যায়ে স্বভাব তৈরি হয়। যা বর্তমান। এখান থেকেই নিজের সৃষ্ট শান্তিময়তার নয়া সাম্রাজ্যের বিস্তার। এই সাম্রাজ্যে নিজেই নিজের স্রষ্টা এবং নিয়ন্ত্রক। কিন্তু সে তো বলা কথায় তৈরি হয় না, তার জন্য প্রয়োজন নিবিষ্ট চিত্তে আরাদ্ধকে আরাধনা। আর আরাধনার জন্য চাই প্রেম। দেখা শোনা জানা দেয়া নেয়ার মধ্যে কামনা আছে, প্রেম নেই। একমাত্র ভক্তির মধ্যেই প্রেম নিহিত।
জাগতিক ভালোবাসা দ্বারা জাগতিক কর্ম হাসিল করা যায় কিন্তু জ্ঞান জগতের আরাদ্ধ চেতনায় নিবিষ্ট হওয়া যায় না। একাগ্রচিত্তে নিবিষ্ট হতে না পারলে বস্তু মোহ-মায়া থেকে নিজেকে উত্তরণ ঘটানো যায় না। নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করতে হলে চেতনা জগতে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হয় এবং তার জন্যই প্রয়োজন সমর্পণের। সমর্পণের ধারাবাহিক ক্রমবিকাশে জাগতিক বস্তুময়তার থেকে নিজেকে সুনির্দিষ্ট করতে সাহায্য করে। এখানেই ব্যক্তির বস্তুময় খেয়াল জগতটি ক্রমশ সংকুচিত হতে হতে এক-এ বিরাজমান থাকে। যিনি করতে পারেন তখন আরাদ্ধ তার জন্য হন মুর্শিদ গুরু বা পিতা অথবা স্রষ্টা। তখনই মুর্শিদ তার অন্তরেই অবস্থান করেন, তার বন-জঙ্গলে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই অবস্থাটির নামই মূলতঃ আত্মসমর্পণ। তিনি তখন তার সৃষ্টি জগতে প্রশংসিত এবং প্রশংসা তারই জন্য এবং তিনিই প্রশংসাকারী। এখানে আমাদের সাধারণ চিন্তাবোধ যেভাবে প্রশংসাকারী এবং প্রশংসিত নিয়ে যে বাধাধরা নিয়ম এবং সীমাবদ্ধতা তৈরি করে সাধারণ নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলবার চেষ্টা করছি - তা যে বিভ্রান্তিমূলক এবং তা দ্বারা আরাধনা জগতের আলোর পরিমাপও করা যায় না। সুতরাং আরবের আহম্মদ কখন মুহাম্মদ হলেন তার চুলচেরা বিশ্লেষণ এখানে নিষ্প্রয়োজন। এখানে প্রয়োজন ব্যক্তির বিকশিত চিন্তা প্রবাহে শ্রদ্ধা ভালোবাসা, প্রেম ও ভক্তির সংযোজন।

একমাত্র প্রেম ও ভক্তির মধ্য দিয়েই মানুষ সৃষ্টি করতে পারে বা নিজে নিজেরই স্রষ্টা হতে পারে; যাকে বলে নিজেকে আবিষ্কার। এই আবিষ্কারের মধ্য দিয়েই ঘটে তার স্বাধীন সত্তার বিকাশ, যা অসীম এবং অনন্ত। তখনই আনন্দলোক চেতনায় আত্মবিলীনতা। নিঃসন্দেহে এটি সেকেণ্ডের ঘটনা কিন্তু তার প্রস্তুতি দীর্ঘতম সময় ধরে জীবনকে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে পরিচালনা করে ভাব জগতে ঢুকতে হয়। ভাব জগত ছাড়া অনন্ত জ্ঞান জগতের সন্ধান কেউ কোনোদিন পায়নি পাবে না। কাজেই ভাব জগতের মধ্যেই আছে সেই সত্য যাকে মানুষ খুঁজে ফিরছে অনন্তকাল ধরে। প্রত্যেক সাধক বস্তুময় ব্যবহারিক জীবনকে অতি সচেতনভাবে পরিবর্তন করে তার নিজের সাম্রাজ্য সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাপ্রবাহকে একই পথে উর্দ্ধগমনে একই প্রবাহে প্রবাহিত করতে না পারলে মিলন বা মেরাজ সম্ভব নয়। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন