বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৩

জননীতি দেশের মানুষকে প্রেরণা দিচ্ছে - দেবে


জননীতি দেশের মানুষকে
প্রেরণা দিচ্ছে - দেবে
 
সংলাপ ॥ বাংলাদেশ-পাক-ভারত উপমহাদেশের মধ্যে পাকিস্তানের প্রভু যুক্তরাষ্ট্রের?বৈদেশিক নীতির মূল লক্ষ্যসমূহে আজও কোন পরিবর্তন হয়নি। চীনের সমপ্রসারণ ঠেকাতে তার দরকার ভারতের; বাংলাদেশকে দরকার বার্মা (মায়ানমার)কে  শায়েস্তা করে রাখার জন্য। আবার উঠতি পরাশক্তি হিসেবে ভারতকে চোখে চোখে রাখতে হবে। ভারত বেশি বেয়াড়াপনা দেখালে তাকে উপযুক্ত শিক্ষাও দিতে হবে। উপমহাদেশের সরকারগুলোকে রাতারাতি ঘোলাপানি খাওয়াতে হলে ধর্মকে তাসের তুরুপ হিসেবে সব সময় ব্যবহার করতে হচ্ছে। জন্মগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ধর্মের আফিম খাইয়ে ভারতের অবস্থা টালমাতাল করে দেয়া সহজেই সম্ভব। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্র নিজ থেকে আগবাড়িয়ে বাংলাদেশকে চারদলীয় জোটের আমলে ‘মডারেট মুসলিম কান্ট্রি’ হিসেবে একটি সত্যায়ন পত্র দিয়ে রেখেছে যাতে ওরই ছত্রছায়ায় যে কোন সময় ধর্মীয় সন্ত্রাস ও উগ্রবাদীদের ব্যবহার করা যায়।

বাংলাদেশের সামপ্রতিক যুদ্ধাপরাধের শাস্তির রায়ে এদেশ সংক্রান্ত আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতিও বদলাবে বলে আশা করা যায়।  বর্তমান সরকারের কোন ব্যর্থতায় আবারও ধর্মীয় উগ্রবাদ চাড়া দিয়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। সামপ্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে; মনে রাখতে হবে এর পেছনেও আমেরিকার হাত আছে।  আমাদের জনগণ স্পষ্ট রায় দিয়েছে বাংলাদেশে  ধর্মের নামে রাজনীতি চলবে না। অতএব ১৯৭২ সনের সংবিধানে ফিরে যাওয়া শেখ হাসিনার মহাজোটের জন্য জনতার ম্যানডেট। কিন্তু বর্তমান সরকার তা পারবে না এবং করবেও না এটা চিন্তাবিদদের অভিমত। ১৯৭২ সনের সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ।

ইতিহাস বলে বাংলার মাটিতে সবচেয়ে বেশি নরবলীর নায়ক এক অখ্যাত প্রেসিডেন্ট সামরিক শক্তির জোরে এবং দিল্লীর চাপে ওই নীতিগুলো যথেচ্ছা বদলিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রচলন করে। এতদিন পর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে জনগণ ওই ভুয়া জাতীয়তাবাদকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। মোদ্দাকথায়, জনতার রায়ের সারাংশ?হল ১৯৭২ সনের সংবিধান পুনরুদ্ধার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্র পরিচালনা। বিজ্ঞদের মতে এটা বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন।

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন ছিল বাঙালির প্রথম বিপ্লব। গত নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রথম বিপ্লবের ধারাকে শত্রুকবল থেকে মুক্ত করেছে। এখন হাসিনা সরকারের যুক্তিসঙ্গতভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য অতি দ্রুত প্রথম বিপ্লবের উপর জমে থাকা ময়লা আবর্জনা সাফ করা এবং জনগণের দেয়া নির্দেশিত রায়ের দ্বারা দ্বিতীয় বিপ্লবের কাজে হাত দেয়া। সার্বিক অঙ্গনে ধীরে ধীরে আবর্জনা পরিষ্কার করে জননীতি প্রণয়ন করা। গত নির্বাচনে জনগণ দ্বিতীয় বিপ্লবের যে লক্ষ্যসমূহ ঠিক করে দিয়েছে সেগুলি   হচ্ছেঃ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য, প্রগতি ও আধুনিকতায় উত্তরণে রাজনীতির বদলে জননীতি প্রণয়ন করা এবং সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন করা। রাষ্ট্র জনতার রায়কে শিরোধার্য করে নিলে মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকীকরণ, ছাত্র-রাজনীতি বন্ধ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির ঘাঁটিগুলি ধ্বংস এবং প্রশাসনে আমলাতন্ত্রের পাশাপাশি অভিজ্ঞ, পারদর্শী এবং দূরদর্শীদের নিয়ে প্রত্যেক মন্ত্রনালয়ে একটা করে পরামর্শ সেল গঠন করতে হবে যাতে?বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারা যায়।

আর তাহলেই স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত শক্তি দ্বিতীয় বিপ্লবকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগিয়ে নেবে সহজ সরল বাঙালি চেতনায় আনন্দময় জীবনের স্বপ্নে। বাঙালি চাই চাই করে রব তুলবে না বরং আত্মার প্রতিধ্বনি সোচ্চার হয়ে   বলবেঃ

ভাত-আলো-মুক্ত বাতাসে

বাঙালি এবার ধন্য হয়েছে ॥

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন