শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

মতলবী ইসলামের জালে পড়ে....



মতলবী ইসলামের জালে পড়ে....

সাগর সগীর ॥ ঝড় নয়, জলোচ্ছ্বাস নয়, ঘূর্ণিঝড়-টর্নেডো নয়, বন্যা বা পাহাড় ধ্বস নয় এমনকি নয় ভূমিকম্প! ক্রেন ভেঙে নিহত হল শতাধিক মানুষ, মুসলমান মানুষ পবিত্র মসজিদুল হারামে; অর্থাৎ কিনা আল্লাহর ঘরে। যাকাত দিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে নয়, হজ্ব পালনকালে শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর মারতে গিয়ে পদস্পৃষ্ঠ হয়ে বেঘোরে প্রান হারালেন পাঁচ সহস্রাধিক পূণ্যার্থী মক্কার মাটিতে।
সৌদি আরবের শীর্ষ ধর্মীয় সিদ্ধান্ত দাতারা ‘ফতোয়া’ দিলেন এটা আল্লাহ্‌র কাজ, মানুষের কোন হাত নেই। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সৌদি যুবরাজকে দায়মুক্তির ফতোয়া জারী করা হল ‘এই দূর্ঘটনায় তার কোন দায় নেই! বাংলাদেশের ধর্মজীবীরা ও  রাজনৈতিক ইসলাম পন্থীরাও এক বাক্যে সরাসরি রায় দিয়ে বসলেন, এসব দূর্ঘটনার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা যাবে না। সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ (শান্তিধর্ম) হলেও বর্তমান সরকার মুহাম্মদী ইসলাম মোতাবেক কোন দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। স্বভাবতই বাংলাদেশের নব্বই ভাগ ধর্মভীরু মুসলমানের মধ্যে প্রশ্ন জেগে উঠছে আমরা কোন ইসলাম পালন করছি? ওহাবি ইসলাম, পার্সিয়ান ইসলাম, পাকিস্তানি ইসলাম, আমেরিকান ইসলাম না মুহাম্মদী ইসলাম!  
এ যেন বাংলাদেশের সড়ক দূর্ঘটনার মত। পরিবহন শ্রমিক মালিকদের স্বার্থ রক্ষাকারীরা যেমন দাবী করে থাকেন, সড়ক দূর্ঘটনার জন্য পরিবহন শ্রমিক তথা  চালকদের শাস্তি দেয়া যাবে না - মালিকদের উপর দায় চাপানো যাবে না। দায় পথচারীদের, দায়িত্ব সরকারের. যত দোষ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ আর জনগণের যারা বাসযাত্রী বা পথচারী! অত:পর দূর্ঘটনায় সৌদী বাদশাহীর উচ্ছিষ্টে লালিত-পালিত যারা তারা উজ্জীবিত হয়ে ফতোয়াবাজদের (!) উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের পরিবহন নেতারা বলে উঠবেন, সরকার নয়, নিহতরা নয় দূর্ঘটনার জন্য কেউ দায়ি নয় - এটা আল্লাহর কাজ! চালকের অদক্ষতা, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো এসব কোন কিছুই আর আমলে নেয়া যাবে না; কেবল আল্লাহর ইচ্ছায়........!
ক্রেনে কারিগরি ত্রুটি থাকতে পারে না, কারিগরি ত্রুটি বা ক্রেনের ফিটনেস যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে না, এসব দেখভাল করলো কিনা সেটা দেখার বিষয় না, সার্বিক নির্মাণ কাজে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে সতকর্তার সবটুকু নিয়ে আগতদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব কারো নেই, তাই দুর্ঘটনার দায়ও কারো নেই।
সেইরূপ শয়তানের প্রতিকের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারার আনুষ্ঠানিকতায় জড়ো হওয়া বিশ লক্ষাধিক মুসলমানের যাতায়াত শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার দিকগুলো খতিয়ে দেখা আর তার জন্য করণীয় সুনিশ্চিত করার তদারকির কাজেরও কোন জবাবদিহিতা থাকতে পারে না ! এরূপ বিশৃঙ্খলা যে ঘটতে পারে আর তাতে যে এরূপ করুণ পরিণতি ঘটতে পারে তাও কর্তৃপক্ষের কারো কল্পনায় ছিল না ! ভাবখানা যেন এ বছর থেকেই মক্কায় হজ্ব পালনের ঘটনা শুরু হল ! তাই ........।
সৌদিরাজে কঠিন আইন - খুনের বদলা খুন। প্রাণের বদলা প্রাণ, জানের বদলা জান। ক্রেনের দুর্ঘটনা বা পদদলিত হয়ে প্রতিটি মৃত্যুর জন্য বদলা জান দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত সৌদি বাদশাহী কর্মকর্তার, ক্রেন দূর্ঘটনায় প্রতিটি মৃত্যুর বদলা জান দিতে হবে নির্মাণ প্রতিঠানের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তাসহ তদারকী কর্মকর্তাদের। অথবা নিহতদের পরিবার রাজী হলে প্রত্যেকটি মৃত্যুর জন্য সৌদি আইনে দিতে হবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ। এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না গুটিকয়েক দেশ ছাড়া।
কিছুই করবে না সৌদি বাদশাহী। ক্ষমতা দখল করে অর্থ ও পেশির জোরে সমগ্র আরবে এমনকি  মক্কাতেও কায়েম করেছে মুহাম্মদী ইসলামের নামে ওহাবী ইসলাম এবং প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে সৌদ আধিপত্যবাদ। নামেই তো এর পরিচয় - সৌদি আরব! মুহাম্মদী আরব তো আর নয়। তাহলে মুহাম্মদ (সা:) ধর্ম তাঁর শিক্ষা এখানে থাকবে কেন ? এরা তো নামেই জানিয়ে রেখেছে ‘আমরা মুহাম্মদী ইসলামে নেই, ওহাবী ইসলামে আছি অর্থাৎ মতলবী ইসলামে আছি ! পূণ্য কামনা নয়, অর্থ কামানো আমাদের মতলব।’
দেশে দেশে এবং বাংলাদেশেও তাই সকল মতলবী মুসলমান ধর্মবেত্তারা, ধর্ম শাসকরা সশব্দে-নি:শব্দে আজ সৌদি বাদশাহীর সেবাদাস! প্রশ্ন হচ্ছে আর কতদিন!!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন