নির্বাচন নয় অধিকার আদায়
আমি সত্য দিয়ে মিথ্যার ওপর আঘাত হানি;
আমি মিথ্যাকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেই আর তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুর্ভোগ
তোমাদের, তোমরা যা বলছ তার জন্য! ২১:১৮ - আল কুরআন।
সংলাপ ॥ নির্বাচন চাই না! কি হবে নির্বাচনে!
কে নির্বাচন করবে? কাকে নির্বাচন করবে? সেই তো তারাই, বারবার ঘুরে ফিরে নাম, চেহারা
বদল করে তারাই তো আসছে - গণতন্ত্রের নামে, ধর্মের নামে, জাতীয়তার নামে। সেই দুর্বৃত্তেরা,
ঘুষখোর, মজুদদার, ঠিকাদার, দেশ লুটেরারা ও আধিপত্যবাদের দেশীয় এজেন্টরা। নির্বাচন মানেই
তো তাদের ওঠানামা। তাদেরকে অবাধ লুটের আর একদফা লাইসেন্স দেয়া - নির্বাচন মানেই মিথ্যার
বেসাতি করে সংসদ দখল করা। কাজেই নির্বাচন বাংলাদেশে আর কি প্রয়োজন আছে? ভোটের জন্য
ভোটারদের আকুতির আর প্রয়োজন নেই। রাজনীতিক সমাজের সমস্ত কর্মকান্ডই জনতাকে ধোঁকা দেয়ার
নাটক মাত্র। এখানে জনসাধারণের মতামত অর্থহীন।
আগামী নির্বাচনও তাইই হবে। আজ যারা নির্বাচনে
না যাওয়ার বা অবিলম্বে নির্বাচনের জন্য হুমকি-ধামকি দিচ্ছে তাদের পেট মোড়ানী বেশি দিন
চলবে বলে আন্দাজ করা যাচ্ছে না। কারণ, প্রত্যেকেরই প্রভু আছে। তারা তাদের প্রভুভক্ত
প্রভুদের আদেশ-নির্দেশ-উপদেশেই নির্বাচন করে। রাজনীতি কে করে? চোর, ডাকাত, খুনী, ধর্ষক,
মিথ্যেবাদী, ভন্ড ও পাপিষ্ঠ রাজনীতিক ও অবসরপ্রাপ্ত আমলারাই রাজনীতির মাঠ দখল করে আছে।
দুর্নীতিবাজ প্রশাসক, বর্বর, ধর্মধারীদের তাই গণতন্ত্রের মোড়কে রাজনীতিই প্রিয়। তারা
দেশ চেনে না-মানুষ চেনে না-মানবতা চেনে না। তারা শুধু চেনে অর্থ, ভোগ এবং ক্ষমতা। যে
আছে বা আসবে তাদের চেহারা যতই ভিন্ন হোক তাদের শতকরা নব্বই ভাগের তো একরৈখিক চরিত্র।
ক্ষমতায় গিয়ে কয়জন এই দেশটিকে গণতন্ত্রের নামে গণ অর্থসম্পদ লুট করেনি! কয়জনের মধ্যে
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে? ভালোবাসা আছে, শ্রদ্ধা আছে? আজকের নব্বই শতাংশ
রাজনীতিকরা ক্ষমতার কামনা-বাসনার একদলভুক্ত। তাদের অন্য কোনো মানসিকতা নেই। তারা নিজেদের
অস্তিত্বের বাইরে জনগণের অস্তিত্ব অনুভব করে না।
তাদের কোনো লিঙ্গ নেই, তারা পুরুষ কিংবা
নারী হয় না, তাদের কোনো জাত নেই, শ্রেণী নেই, পেশা নেই। তাদের একটি মাত্র পরিচয় তারা
ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিক। তাদের একটিমাত্র ভাষা, দুর্বৃত্তায়নের ভাষা ‘মিথ্যাচারিতা’
- দেশ-কাল-সময় তাদের জন্য বিবেচ্য নয়। ষড়যন্ত্র করে ধর্মের নামে, মুক্তিযুদ্ধের নামে
যে কোনো সময় তাদের বিস্তার ঘটাতে পারে। সাধারণ মানুষের প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রিত হয় বটে
কিন্তু কখনোই তারা নিঃশেষ হয়ে যায় না। এখন সেই রাজনীতিকদের মিথ্যাচারিতার চূড়ান্ত বিস্তারময়
সময়ের মধ্যে এই দেশের জনমানুষ ধুঁকছে।
মিথ্যার বিস্তার ঘটেছে-সর্বময় বিস্তার।
বাথরুম থেকে বেডরুম। ফুটপাথ থেকে রাজপথ। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বনিম্ন
বিচারালয় থেকে সর্বোচ্চ বিচারালয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে সাংসদ। ধর্মালয় থেকে জাতীয়
সংস্কৃতি। খেলার মাঠ থেকে চিকিৎসালয়। সর্বত্রই মিথ্যাচার আর মিথ্যুকদের দাপট। মানুষ
মূল্যহীন - মনুষত্ব অর্থহীন। জনমানুষের কোনো স্রষ্টা নেই!
আল্লাহ্ মিথ্যাবাদীদের সাথে কোনো সম্পর্ক
রাখেন না, তা তিনি পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছেন কুরআনুল করিমে। যারা ন্যায়কে ধারণ করে না,
সমস্ত অন্যায়, অমানবিকতা ও মিথ্যাচারের সাথে জীবন সম্পর্ক গড়ে নিয়েছে তাদের ধর্মানুষ্ঠান
দাড়ি-টুপি-জোব্বায় কিছু যায় আসে না! তাদের হজ্ব-যাকাত আর মসজিদের নামাজ পড়ার আনুষ্ঠানিকতায়
বিভ্রান্ত হওয়াটা মূর্খতা। মূর্খের সাথেও আল্লাহ্ থাকেন না! স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার
সময় এসেছে।
সুতরাং কোনো নির্বাচন বা কি সংস্কার হলো
তাতে জাতির কিছু যায় আসে না। চুয়াল্লিশ বছর ধরে অধিকাংশ ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকরা প্রমাণ করেছে তারা কোন্ দলে। তারা দেশের জনমানুষের
জন্য কেউ নয়, কখনো ছিলোও না। একাত্তরের যুদ্ধের ফাঁক দিয়েই এরা সৃষ্ট, আর আজ তাদের
লক্ষ্য একটিই- ওই লুটপাটের রাজত্ব কায়েম রাখা। সুতরাং, নির্বাচনে বাংলার প্রতিটি জনপদে
গর্তে লুকানো সাপেরা আবার বের হবে। ছোবল খাবে সাধারণ মানুষ। বিপন্ন হবে তাদের জীবন।
নিপতিত হবে যন্ত্রণা-নির্যাতনের আর এক ঘনকালো অন্ধকার রাত্রিতে।
অতীত অভিজ্ঞতায় কি এটা প্রমাণিত নয় - নির্বাচনে
অংশ নিচ্ছে কারা? নির্বাচিত হয় কারা? কাদের হাতে সমস্ত মানুষ বন্দি হয়ে পড়ে? কোন্
বিদেশী প্রভুদের সেবাদাস এরা? কারা এদেশের অর্থ-সম্পদ-মেধাকে পাচার করে? কারা নির্বাচন
নামের নামের সুযোগ নিয়ে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত করে দলীয় দুর্বৃত্তায়িত
স্বৈরশাসনের বর্বরতা চাপিয়ে দেয় দেশবাসীর উপর? কাদের কালো টাকার দাপটে জনমানুষের জীবন
প্রতিমুহূর্তে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হচ্ছে?
কাজেই নির্বাচন? না, অধিকার আদায়ের জন্য
সামাজিক আন্দোলন! সবকিছু ভেঙ্গেচুরে সাজাবার আন্দোলন! জনমানুষের সকল অধিকার ফিরিয়ে
আনবার আন্দোলন। একেবারে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল অব্দি জেগে উঠতে হবে সকল মানুষকে। জেগে উঠতে হবে সারা দেশের জনমানুষকে। আর ঘুমাবার সময় নেই। অনেক হয়েছে। অন্ধকার
আরো গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। প্রতিটি পাড়া, মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ, শহরকে আজ জেগে উঠতে
হবে। বাঙালির দু’টি হাত যে কোনো কামান বন্দুকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। জনমানুষকেই
হিসেব নিতে হবে। দখলদার আর দুর্নীতিবাজ রাজনীতিক ও কর্মকর্তাদের বিচারের ভার তাদেরকেই
নিতে হবে। অফিস আদালত থেকে টেনে বের করে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে আইন অমান্যকারী এবং
রাজনীতির অসৎ সেবাদাসদেরকে।
এর কোনো ভিন্ন পথ খোলা নেই জাতির জন্য।
নির্বাচন এখন আর কোনো পথ নয়। এর সমস্ত প্রক্রিয়াই ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের দখলে। সত্য,
সুন্দর বাংলার যুগোপযোগী গণতন্ত্র মিথ্যাচারের কাছে অর্থহীন। সংস্কার! কোনো সংস্কারই
এই দানবীয় স্রোতকে প্রতিরোধ করতে পারলো না। আর পারবে না। সময় এখন আর বাঙালির হাতে নেই।
সর্বাত্মক আন্দোলনের পথেই যেতে হবে সত্যের ধ্বজা নিয়ে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন