শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি!



বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি!

সংলাপ ॥ ইসলামি রাজনীতিতে খেলার নিয়ম না জেনে খেলতে গেলে জাতির কোনো উন্নতি হয় না বরং ক্ষতি হয়। তথাকথিত সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক সমাজের ধারক-বাহক, তথাকথিত প্রগতিশীল রাজনীতিকবৃন্দ ও ইসলাম-ব্যবসায়ীদের প্রতি জাতির চরম বিতৃষ্ণা দিনে দিনে বাড়ছে। জাতির আধুনিকায়ন, উদীয়মান নারীশক্তি এবং প্রগতিশীল শক্তির ওপরে তথাকথিত জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকরা অতীতে আস্থা রাখেননি এবং আজো রাখতে পারছেন না।
নারীনীতি-বিরোধী তথাকথিত একশ্রেণীর ইসলাম-ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে আর এক ইসলাম-ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়ন করছে সরকার। সরকার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অথচ বাংলাদেশে একটা বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। বিধাতা অলক্ষ্যে অট্টহাসি হাসছেন নিশ্চয়, কারণ দুরভিসন্ধিই হল সরকারের ওপরে ইসলামের নামে নারী বিরোধী চাপ প্রয়োগ করে নারী-বিরোধী অন্য দলের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীবিরোধী কর্মকান্ড বাস্তবায়ন। ওদের লক্ষ্য হল বায়তুল মুকাররম, ইসলামি ফাউন্ডেশন, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি সরকারী সংগঠনগুলো দখল করা। সেই সাথে অসংখ্য মাদ্রাসা এবং ইসলামের নামে ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, এনজিও এবং বর্তমানে বাংলা নামকরণ করে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে সরকারীদলের রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় থেকে বেসরকারী সংগঠনগুলো ওদের দখলে আনা এবং সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ওহাবী ইসলাম প্রচার করা যাতে বাঙালি জাতি মেধা ও মননে পঙ্গু হয়ে পড়ে এবং ভাগ্যবাদী হওয়ার পথে এগিয়ে যায় ধীরে ধীরে। সামরিক বাহিনী ও সরকারী পদেও ওহাবী ইসলামী সমর্থক কম নেই। সব মিলিয়ে ধর্মভীরু বাঙালি জাতি শংকিত এই ভেবে যে এখন কি ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসের পথ ধরে পাকিস্তান, ইরান, মিসর, আফগানিস্থান, সিরিয়া বা ইয়েমেনের মতো দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখতে চায়। বিশেষ করে ওরা যেখানে সালাতের বদলে জুরুসথ্রু ধর্মের অনুকরণ করে নামাজ বাধ্যতামূলক করার প্রচেষ্টা রত !
প্রয়োজনে মুখে যাই বলুক স্বৈরশাসন ওদের খুব পছন্দ। জনগণের ম্যান্ডেট ওরা কখনোই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেনা তা ওরা ভাল করেই জানে। তাই অন্যের দ্বারা নিজেদের কার্যক্রম বাস্তবায়নই ওদের সফল পদ্ধতি। রাজনৈতিক সমর্থনের বদলে বাংলাদেশের স্বৈরশাসকরা  ওদের উপহার দিয়েছে রাজনৈতিক বৈধতা, তথাকথিত শারিয়াভিত্তিক সংবিধান, সংবিধানে ইসলামি শব্দাবলী এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা। বর্তমান সরকার কি সেই কাতারে সামিল হচ্ছে? হ্যাঁ হলে, ওদের আর সরাসরি ক্ষমতায় যাবার দরকারই নেই।
বর্তমান সরকারের ও দলের একাংশ এখনও উপলব্ধি করতে পারেননি যে তারা যতই টুপি-দাঁড়ি-হিজাব পরুক, যতই হজ্ব ওমরা করুক, যতই তসবি-টেপা ছবি ছাপুক তথাকথিত ইসলামি হবার প্রতিযোগিতায় ধর্মজীবী সন্ত্রাসীদের সাথে তারা কখনোই টিকতে পারবে না। ওরা পরস্পরের ভাই, সময়মত আমের শাঁস ও দুধ ঠিকই পরস্পরের সাথে মিলে যাবে আর আঁটিটা অর্থাৎ সরকারি দল শুধু দূরে নিক্ষিপ্তই হবে না বরং ওরা একযোগে সবার ওপরে ঝঁপিয়ে পড়বে। এটা অন্যান্য দেশেও হয়েছে।
নিজেদের মধ্যে কিছু অন্যান্য বিরোধ থাকলেও সব ইসলাম-ব্যবসায়ীদের তাত্ত্বিক লক্ষ্য এক, তা হল ওহাবী ধারায় তথাকথিত শারিয়া-ভিত্তিক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্যে বিরোধীপক্ষকে মিথ্যা বলে ঠকানো এমনকি হত্যা করা পর্যন্ত ওদের শারিয়া আইন ও অপদর্শনে শুধু জায়েজ নয় বরং ওদেরই ভাষায় একেবারে ‘বাধ্যতামূলক’। একাত্তরে জাতির ওপরেই জামাতের কসাইপনা কিংবা এখন মুখমিষ্টি কথায় আ-লীগকে ঠকানো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর শেকড় আছে ওদের অপধর্মতত্ত্বেই। প্রগতিশীল এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকদের জানা দরকার রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মব্যবসায়ীকে মাথায় তুলে শেষ পর্যন্ত কেউ পার পায়নি, জাতির সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সমাজ ও নারীদেরকে তার চরম মূল্য দিতে হয়েছে। পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্থান, মিসর তার প্রমাণ। বাংলাদেশে ওদের কৌশল ধুর্ত, দক্ষ এবং রাজনীতি-নিরপেক্ষ। রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকলে তো ভালই কিন্তু না থাকলেও দেশকে ক্রমশঃ ওরা সফলভাবেই তথাকথিত শারিয়া-রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ওদের শত শত সংগঠন জাতির চোখের সামনে ধরে রেখেছে শুধুমাত্র ওদেরই ইসলামি-ব্যাখ্যা যা নারী-বিরোধী তথাকথিত শারিয়াভিত্তিক রাজনৈতিক ইসলাম। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসা আছে যার প্রায় প্রতিটিতে পড়ানো হয় নারী-বিরোধী তথাকথিত শারিয়াভিত্তিক রাজনৈতিক ইসলাম। তারা ইসলামের নামে অসংখ্য নারী-বিরোধীর জন্ম দিচ্ছে। আগামী দশ বছরে এ সংখ্যা যা দাঁড়াবে তার প্রচণ্ড প্রভাব জাতি এড়িয়ে যেতে পারবে না। ওদের আছে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান মসজিদ, প্রতি শুক্রবারে জনতাকে প্রভাবিত করার সুযোগ যা তারা পুরোটাই নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও নেবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ও পশ্চিমা দেশগুলোর লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী দেশে বানিয়েছেন এবং বানাচ্ছেন অসংখ্য মসজিদ ও মাদ্রাসা। এক নিমেষে বহু হাজার যুদ্ধংদেহী তরুণকে রাস্তায় নামানোর ক্ষমতার অধিকারী ওরা। এই ক্রমবর্ধমান বাহিনী আগামী বছরগুলোতে অনেক বাড়বে এবং সর্বত্র এর চাপ অনুভুত হবে। এ চাপ ঠেকানোর পদ্ধতি এখনও বাংলাদেশে অনুপস্থিত।
ওদের আছে নিজস্ব দলীয় পত্রিকা  এবং আধিপত্যবাদী বৈদ্যুতিন মাধ্যম। সেগুলোতে ইসলামের নামে গোয়েবলীয় পদ্ধতিতে প্রচারিত হচ্ছে ওহাবী কায়দায় প্রচারে মিথ্যাচার, কুরআন-বিরোধীতা, ইসলাম-বিরোধীতা ও অসততা। সত্যকে তুলে ধরার তেমন কোন বৈদ্যুতিন প্রচারমাধ্যম ও গণমাধ্যম নেই। দেখা গেছে অনেক বৈদ্যুতিন মাধ্যম সত্যটা জাতির সামনে তুলে ধরতে ভয় পায়।
তথাকথিত শারিয়াপন্থীদের আর একটা বিরাট সাফল্য হল এরা জনগণ, সরকার, মিডিয়া, টিভি-রেডিও-সংবাদপত্র প্রকাশনা সহ সমগ্র জাতিকে ভয় পাওয়াতে সক্ষম হয়েছে। অসংখ্য তথাকথিত মওলানা-মুফতি-মোল্লা নিয়ে দেশজুড়ে যে অনিয়ন্ত্রিত আলেম-সমাজ গড়ে উঠছে তাদের প্রায় সবাই গণতন্ত্র ও নারী-নীতির বিরোধী। এদের যোগ্যতার কোন দৃশ্যমান মাপকাঠি নেই, জাতির বা সরকারের কাছে জবাবদিহিতাও নেই। এদের বেশীরভাগই আধুনিক রাষ্ট্রপরিচালনার কিছুই জানেন না কিন্তু অবলীলায় বিশ্বের তাবৎ সমস্যার তথাকথিত  ইসলামী সমাধান পেশ করে থাকেন। দুর্বল সরকারের সুযোগে তারা ধীরে ধীরে সরকারী নীতির নির্দেশক হয়ে উঠছেন। তাদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করলে সামাজিক দিক দিয়ে নেমে আসবে ‘মুরতাদ’ ফতোয়ার খড়গ ও ক্যাডারদের হুমকি-অত্যাচার। কারো সাধ্য হচ্ছে না তা প্রতিরোধ করার। সরকারে প্রত্যক্ষভাবে থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও কিংবা আংশিকভাবে থাকলেও তারা এক অদৃশ্য প্রভাব সরকারের উপর চালাবার কৌশল পেয়ে গেছেন।
আমাদের পণ্ডিত সমাজও সুশীল বালকের মত ইসলামকে ব্যাখ্যার অধিকার ওদের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। তারা বিশ হাজার পৃষ্ঠার বই পড়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-অর্থনীতিবিদ হবেন কিন্তু দশ হাজার পৃষ্ঠার ইসলামি দলিল পড়ার সময় নেই। তারা ভোগেন ভয়ংকর অহংরোগ, গর্ব, একগুঁয়েমী, ‘একলা চলো’ নীতি ও সাংগঠনিক ব্যর্থতায়। টাকার জোর বা আন্তর্জাতিক সমন্বয়ও তাদের নেই।
ভেতরে ভেতরে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। রাজনীতিতে ‘অত্যাচারিত’ ভাবমূর্তি এক শক্তিশালী অস্ত্র, যা আমরা বাহান্ন-তে দেখেছি বরকাত-সালামের রক্তে, উনসত্তরে দেখেছি আসাদের রক্তমাখা শার্টে। আতংকের কথা হল, রাজনৈতিক হিংস্রতা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে তাতে দেশবাসী শংকিত। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামি রাজনীতি সম্পর্কে কিছুই জানে না কিন্তু তাতে সবজান্তার মতো লাফ দিয়ে পড়ছে। ফল হচ্ছে মারাত্মক।
ঔপনিবেশিক আমল শেষে গুরুত্বপুর্ণ মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলো স্বাধীনতা পাবার সময় সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন। আজ ওই দেশগুলো তথাকথিত শারিয়াবাজদের কব্জায় নিষ্পেষিত। কারণ একটাই - জনগণকে মওদুদিবাদের বিপদ সম্পর্কে শিক্ষিত করার বদলে সংবিধান ও সামরিক বাহিনী দিয়ে মওদুদিবাদ রোধ করার ব্যর্থ চেষ্টা।
সংসদে সংবিধানও পাশ হয়ে গেল - ধর্মনিরপেক্ষতা থাকল, ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ হলনা এবং ইসলামি শব্দাবলী থেকে গেল। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাবার হৈ হৈ নির্বাচনী ওয়াদা-র বজ্র আঁটুনিও ফস্কা গেরো হল। সরকার তথাকথিত শারিয়াবাজদের সাথে সমঝোতা করে চলছে বাধ্য হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আমরা তো একাত্তর থেকেই মসজিদের মত শক্তিশালী সংগঠন ওদের হাতে ছেড়ে রেখেছি। এই রাজনীতিকেরা জাতিকে বোকা ভাবেন এটাই জাতির দুর্ভাগ্য।
যে তথাকথিত শারিয়াবাজদের চাপে বাঙালি জাতীয়তাবাদী সরকারী দল চলার পথে ধীরে চলছে তাতে দেশের কতটুকু মঙ্গল ওদের নিয়ে করা সম্ভব? মন-মানসে ওরা কতখানি বাঙালি? আজ পর্যন্ত তারা আবহ-বাংলার কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে? করে নি। উদীচী-ছায়ানটের বর্ষবরণে, বর্ষাবরণে গেছে? বসন্ত উৎসবে? যায় নি। বাংলার কবিগান, যাত্রাপালা, গম্ভীরা, বাউল গানের আসর, নবান্ন ইত্যাদি থেকে শুরু করে নৌকা-বাইচ পর্যন্ত কোনো একটা অনুষ্ঠানে গেছে, করেছে বা উৎসাহ দিয়েছে ওরা? না - কখনোই নয়। ওদের অনেক মাদ্রাসায় দেশের জাতীয় সঙ্গীতটা পর্যন্ত অচ্ছুৎ। শহীদ মিনারে নগ্ন পায়ে গিয়ে আমরা শ্রদ্ধাভরে ফুল দেব সেটাও ওদের অনেকের কাছে ‘শিরিক’। ধর্মীয় উন্মাদনা কতখানি উগ্র হলে মাতৃভুমির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পৃষ্ঠে ছুরিকাঘাত করে মানুষ?
এইসব ধর্মসন্ত্রাসীদের লক্ষ্যই হল স্বদেশকে মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক উপনিবেশ বানানো। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে এখন মাদ্রাসার সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের উপরে। ওরা সমাজে ক্রমাগত সৃষ্টি করছে অসংখ্য শারিয়াবাজ। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী এখন প্রায় ৭৫ লক্ষ। ওরা প্রায় সবাই এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ওহাবি ইসলামের  ধর্মদুর্বৃত্তদের হাতে তৈরী এবং শিগগীরই ওরা সমাজে বেরোবে। ওদের পরে আরো বেরোবে। ওদেরও নাগরিক অধিকার আছে, ভোটের অধিকার আছে। জাতিকে এক ঘুর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতেই হবে একদিন। সিভিল প্রশাসনের ক্যাডারেও এত সমঝোতা করার পরেও আ-লীগ সরকার কি ওদের মন পেয়েছে? পায় নি, কেউ কোনদিন পায় নি। ওরা আ-লীগকে ছোবলের পর ছোবল মেরে চলেছে।
তাই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, ধর্মেও রাজনীতির ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। মসজিদে ওয়াজ মহফিলে রাজনীতি বন্ধ করা দরকার, এমনকি শিক্ষাঙ্গনেও। মাদ্রাসা, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দরকার। দড়িকে সাপ মনে করলে ক্ষতি নেই কিন্তু সাপকে দড়ি মনে করলে ক্ষতি আছে।
অত্যন্ত গভীরে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের তথাকথিত শারিয়া রাষ্ট্র হয়ে যাবার পদধ্বনি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। এটা সত্যি যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতি এখনো ওদের প্রতিরোধ করে চলেছে। কিন্তু পরিণাম নির্ভর করবে এটার ওপর - দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকদের পাশ কাটিয়ে জাতি মুহাম্মদী ইসলামের অরাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মদুর্বৃত্তদেরকে প্রতিহত করবে কি করবে না।
ওদের বেশ কিছু কৌশল রাজনীতি-নিরপেক্ষ। তার মানে ওরা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক সমাজের তথাকথিত শারিয়া-করণ চলতেই থাকবে। ওহাবী ইসলামী ভাবধারার লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণীকে মাদ্রাসাগুলো প্রতি বছর সমাজে ছেড়ে দিচ্ছে এবং তারা অদৃশ্য হয়ে উবে যাচ্ছে না। তারা কোথাও না কোথাও আছে এবং সমাজকে তথাকথিত শারিয়ার দিকে ঠেলার চেষ্টা করছে। স্মরণ করলে দেখা যাবে যে, কিছু সাধারণ মানুষের উদ্যোগেও সমাজের শারিয়াকরণ এগিয়ে চলেছে, যা ত্রিশ বছর আগেও কল্পনা করা যেত না। জনগণের একটা অংশ নিজেদের উদ্যোগেই জবরদস্তি অন্যের ওপরে তথাকথিত শারিয়া প্রয়োগ করছে।
এখনো সময় আছে, শারিয়াকরণের কিছু পদ্ধতিকে এখনো ফেরানো সম্ভব - যেমন ফতোয়াবাজীর বিরুদ্ধে যে আইন আছে তার শক্ত প্রয়োগ ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাসিৱ, মুহাম্মদী ইসলামের অরাজনৈতিক ব্যাখ্যার বইগুলোকে প্রচার করা, রাজনৈতিক ইসলাম কেন ইসলাম বিরোধী তার ওপরে মুসলিম বিশেষজ্ঞদের বইগুলো প্রচার করা ইত্যাদি। কিন্তু সেই সাথে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যাকে আর ফেরানো সম্ভব নয়, জাতিকে বহুকাল সেই বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে। ধর্ম-দস্যুরা জনতার সমর্থন পায় না কিন্তু অন্যের, বিশেষ করে সামরিক স্বৈরশাসকদের মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় ওরা খুব দক্ষ। যেমন আমাদের সংবিধানে বিসমিল্লাহ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, পাকিস্তান শারিয়া রাষ্ট্র ইত্যাদি। এগুলো মোটা দাগের ঘটনা কিন্তু এগুলোর চেয়ে অনেক বেশী বিপজ্জনক ব্যাপারগুলো চোখে পড়ে না। সেটা হল ইসলামী প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে এসে সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে রাজনৈতিক ইসলামের দিকে ঠেলে দেয়া। আজ চিন্তা করা যায়না, কিন্তু কাল? পরশু? কিংবা তার পরদিন?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন