শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৫

উপলব্ধির দ্বারপ্রান্তে বিশ্বের ধর্মভীরু মুসলমানরা



উপলব্ধির দ্বারপ্রান্তে বিশ্বের ধর্মভীরু মুসলমানরা

শাহ্‌ সারফুল ইসলাম মাহমুদ ॥ বিশের শতকের গোড়ায় সাধক নজরুল ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় দ্বিচারিতা দ্বন্দ্ব-সংঘাত রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত দশা দেখে তাঁর ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’-এ বলেছেন, ‘আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ’। নজরুল বেঁচে থাকলে আজ মুসলমানদের উদ্দেশ্যে ‘বিবেক হুঁশিয়ার’ নামে হয়ত আরেকটি লেখা তাঁকে লিখতে হত; আর তাতে তিনি হয়তো বলতেন এভাবে যে, ‘ঈমানী পরীক্ষা আজি মুহাম্মদী ইসলাম না সৌদি ইসলাম/ কোন্‌ ইসলামে সঁপিবে তব প্রাণ’ ?
মুহাম্মদী ইসলামের পথ নির্দেশনা পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহ। সৌদি ইসলামের পথ নির্দেশনা সৌদি বাদশাহী ফরমান-প্রথা, ওহাবী মতবাদ ও মুসলমান বিশ্বে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা। মুহাম্মদী ইসলামে সকল ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্‌। আর সৌদি ইসলামে সকল ক্ষমতার মালিক সৌদী বাদশাহ্‌। মুহাম্মদী ইসলামে রয়েছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। সৌদি ইসলামে আছে রাজতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থা। মুহাম্মদী ইসলাম অনুস্মরণ করে কুরআনের নির্দেশনাবলী। সৌদি ইসলাম অনুস্মরণ করে মার্কিন-বৃটিশ প্রভুদের দেয়া প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য নির্দেশনা। মুহাম্মদী ইসলামে কুরআনিক মুসলিম হয় ধারণ-লালন-পালনে। সৌদি ইসলামে মুসলমান হয় পালনে-বলনে-লেবাসে-চাটুকারিতায়।
মুহাম্মদী ইসলামের মূল মন্ত্র হচ্ছে ত্যাগ। আর সৌদি ইসলাম হচ্ছে ভোগ সর্বস্ব। মুহাম্মদী ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে সত্যের উপর। সৌদি ইসলাম মিথ্যাচার আর ভ্রষ্টাচারে পরিপূর্ণ।
মুহাম্মদী ইসলাম মানবতার প্রতীক। সৌদি ইসলাম বর্বরতার প্রতীক। মুহাম্মদী ইসলাম প্রেম, সেবা, ক্ষমা আর মহত্বে মহিমান্বিত। সৌদি ইসলাম হিংসা, হানাহানি, ষড়যন্ত্র, খুন, অবিশ্বাসের বিষে জর্জরিত। মুহাম্মদী ইসলামে রাসূল (স:) মূলত হয়ে উঠেন জীবন্ত কুরআন রূপে; রাসূল (স:)-এঁর চরিত্র বৈশিষ্ট্যে প্রতিবিম্বিত হয় কুরআনিক মুসলিমদের চরিত্রে। সৌদি ইসলামে মুসলমান হয়ে থাকে কুরআন বর্ণিত ‘মরুবাসী আরব’ চরিত্রের ‘অবিশ্বাস ও কপটতায় মরুবাসী আরবরা বড় বেশি পোক্ত’ - সূরা তওবা, আয়াত নং - ৯৭। ওরা (আরবরা) মুখে যা বলে তা ওদের অন্তরে নেই- (সূরা ফাতাহ, আয়াত নং- ১১)।
সৌদী ইসলামে তাই ইসলাম বিকৃত ওহাবী মতবাদ ধারণ ও লালন করা হয়। দেশে দেশে ওহাবী মতলবি ইসলাম প্রচার ও প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হয় ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধর্মপিতা হয়ে এবং মুহাম্মদী ইসলামের মোড়কে রমরমা বাণিজ্যে পরিণত করা হয় মুসলমানদেরকে। পবিত্র হজ্বকে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব জাগরিত করার পরিবর্তে টাকা কামানোর বেহুঁশ নেশা চরিতার্থ করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সৌদি ইসলামে পবিত্র মক্কা-মদিনা বুকে ধারণকারী সমগ্র আরব মাটিকে স্থায়ী ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে পশ্চিমারা টনের পর টন বোমায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছে ইরাক।
সৌদী ইসলামে পশ্চিমা রিমোট কন্ট্রোলে সৌদি যুদ্ধ বিমান রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করে তুলছে মুসলমান অধ্যুষিত ইয়েমেনের মাটি। সিরিয়া বধ্যভূমি হয়ে উঠছে মার্কিন-বৃটিশ দোসর সৌদি ইসলামের নীরব সমর্থন এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে। এজিদীয়-ওহাবীয় ইসলামের সার্থক উত্তোরাধিকার এই সৌদি ইসলাম শতক শতক ধরে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের যে ভাবমূর্তি তৈরি করে চলেছে তাতে আছে সন্ত্রাস ও আধিপত্যবাদ, সেখানে খুঁজে পাওয়া দুর্লভ কুরআনিক মুসলিম। যা দেখে বিদায়ী শতকে সাধক নজরুল দু:খ করে তাঁর কবিতায় লিখেছিলেন, ‘কোথা খোঁজ মুসলিম, শুধু বুনো জানোয়ার/ যে বলে সে মুসলিম, জিভ ধরে টানো তার/জগতে মুসলিম, আজ পোষা জানোয়ার’ (!)।
জানতে ইচ্ছে করে মার্কিন ও বৃটিশ পদলেহি সৌদি বাদশাহী, সৌদি ভোগতন্ত্র দেখেও বিশ্বের মুসলমানরা আর কতকাল নিশ্চুপ হয়ে থাকবে! বাংলাদেশের ধর্মভীরু মুসলমানরাও কি এদেশের ধর্মব্যবসায়ী-ধর্মজীবীদের সঙ্গে থাকবে, না কুরআনিক মুসলিম-এর মত দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে উঠবে? সৌদি আরবে কর্মরত বিশ লক্ষাধিক বাংলাদেশীর উপস্থিতি নিয়ে সৌদি ‘ব্ল্যাক মেইলিং’ - এর কাছে নত হয়ে নিজেদের ঈমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে? সৌদী ‘পোষা’ ধর্ম ব্যবসায়ী আর ধর্মজীবীরা নিজেরা নিশ্চুপ থেকে কি ভাবছেন বিশ্বের সাধারণ মুসলমানেরাও ‘চুপ’ থাকবে তাদের মতন!  ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’ প্রবাদটির সত্যতা যুগে যুগে ছিল, এ যুগেও যে আছে তার প্রমাণ উঠে আসছে দিক হতে দিগন্তে কালের ধারায়। বিশ্বব্যাপী ধর্মভীরু মুসলমানরা তাকিয়ে আছেন আল্লাহর দিকে এবং সময়ের অপেক্ষায় কবে মুহাম্মদী ইসলামের আলোর বন্যায় বিদূরিত হবে সৌদি ইসলাম, ওহাবী ইসলাম, মতলবি ইসলাম, পার্সিয়ান ইসলাম বিশ্বের বুক থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন