মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির মায়াকান্না

গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির মায়াকান্না

আল্লামা সাদেক নূরী ॥ গণতন্ত্র জনগণ দ্বারা জনগণ থেকে জনগণ কল্যাণে নির্বাচিত সরকার ব্যবস্থা; আপাততঃ এটাই গণতন্ত্রের সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা। এ হিসাবে নির্বাচন ও গণতন্ত্র একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। অতএব নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র ভাবনা আকাশ কুসুম রচনা বা ডুমুরের ফুল বাসনা। কারণ, নির্বাচনের বিরোধিতা প্রকারান্তরে গণতন্ত্রেরই বিরোধিতা।
এমতাবস্থায়, নির্বাচনের বিরোধিতা শুধু নয়, নির্বাচন প্রতিহত করার সরাসরি অগণতান্ত্রিক ঘোষণা দিয়ে তা প্রতিরোধ করার নামে ভোটকেন্দ্র ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, বোমা মেরে নিরীহ জনগণ হত্যা, অসংখ্য গাছ কেঁটে দেশের সম্পদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট করাসহ জাতীয় সম্পদ ধ্বংস ও উন্নয়নে বাঁধা সৃষ্টির তাণ্ডবে লিপ্ত থেকে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ানো কোন্‌ গণতন্ত্র? কার জন্য? এটাকে যদি দেশবাসী মায়ের সন্তান বধ করে মাসীর মায়াকান্না মনে করেন তা' হলে কি কারো অস্বীকার করার উপায় আছে?
প্রসঙ্গটা এলো সম্প্রতি বিএনপির কথিত মুখপাত্র'র মুখে গণতন্ত্র'র ঢেঁকুর দেখে; তিনি আওড়ালেন - এক তরফা নির্বাচন করে সরকার মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ‘গণতন্ত্র'কে উপেক্ষা করেছে। অবশেষে, মেজর জিয়া যেমন মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করতে অগত্যা রাজি হয়েছিলেন, সে ধারাবাহিকতায় ঠেলায় পড়ে, বি.এন.পি শেষ রক্ষাকবয হিসাবে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের দোহাই তথা আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে, এটাও শুভ লক্ষণই বটে।
সে যা' হোক, এখানে আলোচ্য মন্তব্যে মুখপাত্র ‘একতরফা' বলতে ‘মুক্তিযুদ্ধের তরফ' বুঝিয়ে থাকলে মন্তব্যটি প্রায় সত্য বলে ধরে নেয়া যায়। কারণ, বিগত নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধে'র তরফের দলগুলোই প্রধানতঃ অংশগ্রহণ করেছে ; অপর তরফে রয়েছে প্রধানতঃ জোর করে জড়িত করা মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়ার বিএনপির নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধী দলগুলো, তথা ৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী সপ্তম নৌবহরের মাঝিমাল্লা আর যাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে স্বাধীনতার পক্ষ জনতার স্বাভাবিক প্রশ্ন- যারা নির্বাচনের বিরোধিতায় লিপ্ত ছিল তারা কি আসলেই গণতন্ত্র চায় বা গণতন্ত্র মানে? নাকি তারা গণতন্ত্র'র আবরণে ৭১-এর স্বাধীনতার বিরোধিতায় পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসাবে এক সাগর রক্ত, সম্ভ্রম ও বিরল আত্মোৎসর্গ'র বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে?
বিরোধীদের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার প্রশ্ন ! সে বিচার তো হতে হবে, নির্বাচন সম্পন্ন হবার পর। এ ব্যাপারে নির্বাচনপূর্ব মন্তব্য ঘোড়ার আগে গাড়ি জোড়ার শামিল নয় কি? নির্বাচনের পর তো এর সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
এ প্রসঙ্গটি নির্বাচনবিরোধী সন্ত্রাসে বিএনপি'র চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ণয়ে বিএনপি নেত্রীর সাম্প্রতিক দু'টি ঈপ্সা যথেষ্ঠ সহায়ক হতে পারে; ১। একটি মার্কিন প্রত্রিকায় নিবন্ধ'র মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ কামনা এবং ২। দেশের সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে জড়িত করার অগণতান্ত্রিক প্রচেষ্টা।
১৫৩ সাংসদদের এর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন? গণতন্ত্র'র বিশ্ব স্বীকৃত বিধি নিয়ম অনুসারে এঁরাতো সর্ব সম্মতভাবে নির্বাচিতই বটে। এ প্রসঙ্গে কারো কারো ভোট দিতে না পারার অভিযোগ? এটা কেবল যারা ভোট দেয় নি, বা তাতে বাঁধা প্রদান করেছেন, কেবল তাদের উপরই বর্তায়।

অতএব, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক বিচারে দশম জাতীয় সংসদ ও এর দ্বারা গঠিত সরকার সম্পূর্ণ বৈধ; এটাকে অবৈধ বলা গণতন্ত্র ও সংবিধানকে উপেক্ষা করা বই  নয়; বরং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিলই বটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন