বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জনগণ প্রভু নয় সেবক চায়



জনগণ প্রভু নয় সেবক চায়

সংলাপ ॥ আমাদের সংবিধানে যাই লেখা থাক এবং গত দুই শতকে মানবিচারে উপমহাদেশের সব রাষ্ট্রের প্রশাসনিক যত পরিবর্তনই হোক, ঔপনিবেশিক ব্রিটিশের গর্ভজাত প্রশাসন ব্যবস্থা ও আমলারা এখনো দেশ ও জনগণের প্রভু এবং অভিভাবক রয়ে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী তাঁর বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে আমলারা জনগণের সেবক না হয়ে শাসকে পরিণত হয়েছে। তারা মানুষের উপকার না করে সমস্যার সৃষ্টি করছে। গভীর আক্ষেপের সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, তার সরকারের সহায়তায় বহু প্রশিক্ষণ দিয়েও এদেশের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি। তার মতে, আমলাদের সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের অবৈধ যোগাযোগ রয়েছে। তারা পুরো ব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলছে। ২শ’ বছরের পুরনো এই আমলাতন্ত্র পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, এছাড়া কোনো অগ্রগতি সম্ভব হবে না। ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওই বক্তব্য ছাপাও হয়েছিল অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকায়।
বাংলাদেশে এর চেয়ে কঠিন সত্য আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। স্বাধীনতার পর ৪৪ বছরে এ দেশে যত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যে আমলাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ভূমিকা মুখ্য হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের গায়ে আঁচড়টিও লাগেনি।
বাংলাদেশে বর্তমানে ঔপনিবেশিক ধাঁচের যে আমলাতন্ত্র চালু আছে সেটার জনক হচ্ছে ওই ব্রিটিশ সরকার। আনোয়ার চৌধুরীর মন্তব্যটি সেই কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। সেদিক থেকে বাংলাদেশের বর্তমান আমলাতন্ত্র সম্পর্কে বলার জন্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ কূটনীতিকের চেয়ে যোগ্য লোক আর কে হতে পারে।
স্বাধীন বাংলাদেশে ব্রিটিশের সৃষ্ট প্রভু মনোবৃত্তি থেকে আমাদের আমলাতন্ত্রকে মুক্ত করার বহু চেষ্টা হয়েছে - গঠিত হয়েছে অনেক কমিশন, কী দশা হয়েছে আমরা জানি। বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ ঠেকাতে আমলারা কি রকম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তা আমরা দেখেছি। যতবার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে কার্যকর ও শক্তিশালী সহনীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা হয়েছে ততবারই তাকে আঁতুর ঘরেই হত্যা করা হয়েছে গলা টিপে। সন্দেহ নেই অর্থবহ গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার চলমান উদ্যোগকে সফল করতে হলে অন্যান্য প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি দুশ’ বছরের পুরানো প্রভুত্ববাদী আমলাতন্ত্রের পদ্ধতির পরিবর্তন আনতে হবে। স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। এছাড়া সম্ভাবনাময় দেশ ‘বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার পথ কি হতে পারে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন