বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে
সংলাপ।। এখনও দৈনিক সংবাদপত্র কিংবা টিভির
খবরে চোখ রাখলেই দেখা যায়, দেশের কোনও-না-কোনও প্রান্তে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেয়েরা। হয় শিশুশ্রম দিতে গিয়ে নিয়োগকর্তা/কর্ত্রীর নৃশংসতা
নেমে আসছে তাদের উপর কিংবা তারা যৌননিগ্রহের শিকার হয়ে পড়ছে। নাবালিকাদের যৌননিগ্রহে
অভিযুক্তদের মধ্যে কাকে পাওয়া যায় না! স্কুলের শিক্ষক, পড়শি, আত্মীয়, এমনকি জন্মদাতা
পিতাও! প্রায় ধারাবাহিকভাবেই এমন অসভ্যতা-বর্বরতার নিদর্শন রেখে চলেছে বাংলার প্রত্যন্ত
অঞ্চলেও। এর পাশাপাশি আর যে চিহ্নটি বাংলাসহ সারা দেশকে কলঙ্কিত করছে-সেটি হচ্ছে বাল্যবিবাহ।
তবে বিস্ময়ের যবনিকা এখানেই পড়েনি; বরং গ্রামবাংলার তথ্যটি আমাদের ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছিল।
বাংলার গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের মোট বিবাহের প্রায় ৫৮ শতাংশই হত যৌবনে পদার্পণ করার আগেই।
এইসব বিবাহের আরও মারাত্মক দিকটি ছিল- বাল্যবিবাহিতাদের একটি বড় অংশই মাতৃত্বের বোঝা
গ্রহণ করতে বাধ্য হত পঞ্চদশী হওয়ার আগেই!
এইসব তথ্য প্রক্রাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে প্রচণ্ড
হইচই হয়। কেউ কেউ শুধু ‘ছিঃ ছিঃ’ করে, ধিক্কার জানিয়ে তাদের দায়িত্ব সাঙ্গ করেছেন।
কেউবা ফায়দা তোলার রাজনীতি। আবার কেউ কেউ চেষ্টা করেছেন তার দরদি মন আর উদ্ভাবনী চিন্ত-ভাবনার
মেলবন্ধন ঘটিয়ে এই অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্তি দেয়ার পথে কিছুটা এগিয়ে যাওয়ার। এই ব্যাপারে
প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম। তার উদ্ভাবনী চিন্তার
সঙ্গে বাড়তি আশীর্বাদ ছিল তার সরকারি ক্ষমতা।
তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটি ঘটে চলেছে একেবারে
পারিবারিক স্তরে। অনেক কিশোরী রীতিমতো বিদ্রোহও করছে। তারা অঙ্গীকার করেছে, অন্তত প্রাপ্তবয়স্ক
হওয়ার আগে তারা কোনওমতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না-তা পাত্রটি যতই ‘সু’ হোক। তাদের সাফ
জবাব, পড়ার বয়সে তারা পড়াশুনা ছাড়া অন্য কথা ভাববেই না। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েই
সংসারী হওয়ার দৃঢ়তার কথা শোনা গিয়েছে অনেক মেয়েদের কণ্ঠে। যেখানে মেয়েদের ব্যক্তিগত
মত মর্যাদা পাচ্ছে না, সেখানে তারা পিতা-মাতার মতো সবচেয়ে প্রিয়জনদের বিরুদ্ধে নালিশ
জানাচ্ছে প্রশাসনের কাছে!
এতদ্সত্ত্বেও কিন্তু দেশে এখনও মোট বিবাহের
৪০ শতাংশ হচ্ছে অপ্রাপ্তবয়স্কাদের। শিশুদের উপর নির্যাতন, শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের
লক্ষ্যে বাংলার প্রতিটি গ্রামে এবং শহরাঞ্চলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি গড়া সময়ের
দাবি। যাতে শামিল করা যায় সমাজ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের নারী-পুরুষকে। এই কমিটির
মাধ্যমেই চলতে পারে যাবতীয় প্রচার, প্রতিরোধ ও পর্যালোচনা এবং রক্ষিত হতে পারে সাফল্যের
ধারাবাহিকতা। উদ্যোগটি সফল করতে হলে প্রথমেই এটিকে সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির বীজানু-মুক্ত
করার অঙ্গীকার করতে হবে। ওইসঙ্গে বেশি জোর দিতে হবে দারিদ্রমুক্তির উপর। ক্ষুধার্ত
ছেলেমেয়েদের এবং তাদের অভাবী বাবা-মায়েদের ভালো ভালো কিছু শুকনো কথা শুনিয়ে কিন্তু
বিশেষ লাভ হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন