সত্য দিয়ে মিথ্যা প্রতিহত করার সময় এসেছে
ড.
আলাউদ্দিন আলন ॥ সময় এসেছে রাষ্ট্রধর্মের সংজ্ঞা, ধর্মীয় অনুভূতির সংজ্ঞা, ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাতের সংজ্ঞা সর্বোপরি ইসলাম (শান্তি) এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করার। আজকাল সমাজের সর্বস্তরে
সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ধর্মীয় অনুভূতি। চারিদিকে তুমুল বাক-বিতণ্ডা চলছে ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত বিষয়ক ঘটনা নিয়ে। সমাজে শান্তির জায়গায় অশান্তি এবং সত্যের জায়গায় মিথ্যা ছড়িয়ে
পড়ছে রাজনীতিকদের দ্বিচারিতার জন্য।
বাংলাদেশ
নিয়ে কোন ভাবনা যেন নেই বাঙালির! রাজনীতিকদের দ্বিচারিতা ও বিকৃতি প্রকাশে ধর্মভীরু
বাঙালি আজ ব্যস্ত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নিয়ে। পাকিস্তানি কায়দায়, আফগানিস্তানি কায়দায়
বাঙালি আজ ধর্মীয় অনুভূতির জ্বরে পাগল প্রায়। ধর্মীয় অনুভূতির জ্বরে পাগল হবার আগে
একটি বারের জন্যও চিন্তা করে দেখছে না অনুভূতি কি? বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের
বিষয়টি সংক্রামকের রূপ ধরে সমাজে ছড়াচ্ছে। বিষয়টি তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে এর মূলে রয়েছে
খোদ বাংলাদেশের রাজনীতিকরা। যে সাংবিধানিক ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে
সেই ধর্ম নিরপেক্ষতা রাজনীতিকদের অদূরদর্শীতা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতালোভ এবং মুহাম্মদী ইসলাম
সম্বন্ধে অজ্ঞতা ধীরে ধীরে চল্লিশ বছরে বাঙালি ধর্মভীরু মুসলমানদেরকে ধর্মান্ধতার বেড়াজালে
আবদ্ধ করে দেশকে সাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার পর হতে যত
সরকার এসেছে তারা একদিকে যেমন ধর্ম নিরপেক্ষতা বজায় রাখেনি, অপরদিকে সাম্প্রদায়িক হানাহানি,
বিভেদ ও অপরের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার পথও সুগম করে দিয়েছে।
ইসলাম
(শান্তি) ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করার মাধ্যমে কাগজে-কলমে ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের বেশি
প্রাধান্য দেয়া হলেও রাষ্ট্রের প্রতি স্তরে সমাজের মধ্যে শান্তি (ইসলাম) প্রতিষ্ঠিত
হয়নি এবং আজ পর্যন্ত কোন যুগোপযোগী কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়নি। ধর্মীয় অঙ্গনে সত্য-মিথ্যা
যাচাই করতে গিয়ে ধর্মভীরু জাতি বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। তাই সমাজের প্রতি স্তরে একটি প্রশ্ন বাঙালি জাতির
উর্দ্ধারণের সময়কে নষ্ট করছে আর তা হল - ধর্ম কি মানবজাতির জন্য পালনীয় বিষয় নাকি ধারণ
ও লালন করার বিষয়? একজন বাঙালি ধর্মভীরু মুসলমানকে যখন প্রশ্ন করা হয় আপনার ধর্ম কি?
সে মুসলমান জবাব দেন আমার ধর্ম ইসলাম। কোন্ ইসলাম-সৌদী ইসলাম, ওহাবী ইসলাম, পার্সিয়ান
ইসলাম, পাকিস্তানী ইসলাম না মুহাম্মদী ইসলাম-এ প্রশ্ন করা হলে সেই ধর্মভীরু মুসলমান
বিভ্রান্তিতে পড়ে যেহেতু রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হলেও বাঙালি জাতির জন্য কোন দিক-নির্দেশনামূলক
কার্যক্রম কোন সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে নেয়া এবং দেয়া হয়নি। গড্ডালিকা প্রবাহে
চলছে ধর্মমন্ত্রণালয়, চলছে এদেশের ধর্মভীরু মুসলমান! আর তাই ধর্মীয় তথা রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে
ক্ষমতালোভী ধর্মান্ধদের আধিপত্যবাদ বেড়েই চলেছে।
তাহলে
বাংলাদেশের ধর্ম কেমন করে ইসলাম হল? বাংলাদেশ কেমন করে মুসলমান হল? বাংলাদেশ কেমন করে
নবী মুহাম্মদ (স) এঁর ইসলাম (শান্তি) ধর্মে সমর্পণ করলো? তাহলে কি বাংলাদেশের কোন ধর্ম
নেই? বাংলাদেশ কি ধর্মহীন? না, জবাব আসে বাংলার মাটি-বাংলার জল-বাংলার বাতাস ভর করে
জবাব আসে বাংলাদেশ ধর্মহীন নয়। বাংলাদেশেরও ধর্ম আছে। বাংলাদেশের ধর্ম সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ
আছে। আর তা হল বাংলাদেশের সংবিধান। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতালোভী বকধার্মিকগণ সংবিধানে
ইসলাম ও বিসমিল্লাহ্ শব্দ যোগ করে বাংলাদেশের ধর্মকে বিপথগামী করে দিয়েছে। বাংলাদেশের
সকল মানুষের সমান অধিকারকে নষ্ট করা হয়েছে। ধর্ম বিশ্বাসের জায়গায় জাতিকে দিকভ্রান্ত
ও বিভ্রান্ত করা হয়েছে এবং হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ নামক কথাটি
সমাজের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং ধর্মান্ধরা চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। রাষ্ট্রে বসবাসরত
সকল নাগরিকের রাষ্ট্রধর্ম আমাদের সংবিধান। ধর্মীয় জীবন হলো ব্যক্তির যার যা পালন করতে
ভাল লাগে তা তার পালন করার স্বাধীনতা। সরকার তার সাংবিধানিক ধর্ম অর্থাৎ সংবিধানের
আইন কানুন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করুক এবং রাষ্ট্রের সকল নাগরিক তা পরিপূর্ণভাবে লালন-পালন
করুক তাহলে রাষ্ট্রের ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার রূপ ধারণ করবে। রাষ্ট্রীয় ধর্ম সকলের এক।
কোন ভিন্নতা এতে নেই। যে কেউ এ ধর্ম প্রতিপালনে ব্যর্থ হবে সে রাষ্ট্রধর্মের আইন অনুযায়ী
শাস্তি পাবে। রাষ্ট্রের কিংবা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় কোন সরকারের ক্ষমতা নেই ধর্ম
পালনে কাউকে বাধ্য করার। এটা প্রত্যেক মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার।
জাতীয়
জীবনের এই ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার সরকারই কেবল পারে ধর্মীয় অঙ্গনে সত্য প্রতিষ্ঠার
মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম (শান্তি) বাস্তবায়ন করতে, তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার
বাংলা নির্মাণের ভিত মজবুত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন