বৃহস্পতিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৫

১৫ আগস্ট পোস্টমর্টেম জরুরি

১৫ আগস্ট পোস্টমর্টেম জরুরি

সগীর ॥ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একজন কন্যা শেখ হাসিনা একজন পিতা শেখ মুজিবকে হারিয়েছিলেন মা ভাইসহ পরিবারের আরও অনেককে এটা বাস্তব। কিন্তু  এটাই কেবল বাস্তবতা নয়, বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নিহত হয়েছিলেন। আবার, কেবল এটাও বাস্তব নয়, চরম বাস্তবতা হচ্ছে ১৯৭৫ এর সেই ভয়াল রাতে কেবল পিতা মুজিবকে নিহত করা হয়নি, কেবল রাষ্ট্রপতি মুজিবকে নিহত করা হয়নি, নিহত করা হয়েছিল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে, ৩০ লক্ষ শহীদের স্বপ্নকে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তাই কেবল একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি মাত্র নয়, কেবল ফৌজদারি অপরাধের আইনি মামলা নয় !
তাই কেন ঘটেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের সেই ট্র্যাজেডি তার উত্তর খোঁজা, তার মূল কারণগুলো সন্দেহাতীতভাবে চিহ্নিত করা, তার উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে মূল ষড়যন্ত্রী কারা কারা ছিল তা সুনিশ্চিত করা জরুরি। জরুরি আজকের নয়, জরুরি ছিল বহু আগেই। অন্তত ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরেই যেমনটি সে সময় শুরু হয়েছিল হত্যাকাণ্ডের বিচার আয়োজনের পর্ব, তেমনি তখনই দরকার ছিল উপরিল্লেখিত প্রশ্নগুলির ফায়সালা করার জরুরি উদ্যোগটি গ্রহণের। তাহলে হয়তো ২০০১-এ স্বাধীনতা বিরোধী, বাঙালি বিরোধী বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসতে পারত না।
আজ প্রশ্নটি তীব্র জরুরি হয়ে উঠে এসেছে যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবারের আগস্টে তার প্রকাশ্য বক্তৃতায় কয়েক বার সতর্কবাণী উচ্চারণ করলেন যে -‘যেন আবারো ১৫ আগস্টের ঘটনা না ঘটে’।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর ৩ নভেম্বর সৈয়দ আশরাফের পিতা মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অসহায়ভাবে নিহত হয়েছিলেন জেলখানায় অপর তিন জাতীয় নেতার সাথে নৃশংসভাবে। আজ যখন সৈয়দ আশরাফ বলছেন ‘যেন ১৫ই আগস্টের সেই ঘটনা আর না ঘটে’ জনমনে তখন সংশয় দেখা দেয়। যখন রাস্তায় ট্রাফিক নির্দেশনায় লেখা থাকে - ‘হর্ণ বাজাবেন না’ তাতে বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট স্থানটিতে হর্ণ বাজানোর ঘটনা ঘটে বলেই সতর্কবাণী লিখে রাখার প্রয়োজনটি পড়েছিলো।
৭৫ এর ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য তাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আজকের আওয়ামী লীগ সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে ১৯৭৫ এর হত্যাকাণ্ড এবং তার পূর্বাপর ঘটনায় ফিরে যেতে হবে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে উপযুক্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে, সুদক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ অনুসন্ধানী টিম এবং বাঙালি-প্রাণ গবেষকদের দিয়ে খুঁজে বের করতে হবে কারা ছিল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের ঘটনার পিছনে মূল ষড়যন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু সরকারের ভিতরে-বাহিরে আওয়ামী মুখোশধারী কুশিলবদের ভূমিকা কি ছিল তা চিহ্নিত করতে হবে এবং নির্মোহভাবে আরও চিহ্নিত করতে হবে অন্তত ১৯৭২-৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারের দুর্বল দিকগুলি কি কি ছিল। কি কি ভুল ছিল। এমনকি আত্মঘাতী পদক্ষেপ কি কি ছিল  সে সবও চিহ্নিত করতে হবে। কেবল তাই নয়, সঙ্গত কারণেই কান টানলে মাথা চলে আসার মত এই গবেষণার আওতায় আনতে হবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট সকল শক্তিসমূহের কর্মকাণ্ড, গতিবিধি ও  প্রবণতাসমূহ এবং আরো আরো অনেক কিছু।

আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং গর্বিত বাঙালি জাতির পুনরোভ্যুদয়ের নিশ্চয়তা তৈরির জন্য আজ যেমন দরকার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সরকারের নিরঙ্কুষ কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাসীন থাকা, তেমনি আজ জরুরি হয়ে উঠেছে এই সরকারকে, এমনকি ক্ষমতায় থাকার জন্যে হলেও ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পোস্টমর্টেম করা। আরেকটি ১৫ আগস্ট ঠেকাতে হলেও ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টে ফিরতেই হবে। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন