অনন্য
দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শাহ্ সারফুল ইসলাম
মাহমুদ ॥ বিশ্বে কোন দেশের ক্ষমতাসীন কোন রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু ঘটলে
তার অন্তেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করে থাকেন প্রতিবেশী বা অপর কোন দেশের রাষ্ট্র বা সরকার
প্রধান। ক্ষেত্র বিশেষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতি কুড়ানো কোন সাবেক রাষ্ট্রপতি বা
প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতেও অপরাপর রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধানদের যোগ দিতে দেখা যায়
তাঁর অন্তেষ্টিক্রিয়ায়। যেমনটি ঘটেছিল দক্ষিন আফ্রিকার প্রয়াত নেতা জন-নন্দিত নেলসন
ম্যান্ডেলার ক্ষেত্রে। কিন্তু একজন রাষ্ট্রপতির পত্নী বিয়োগ ঘটলে তাঁর অন্তেষ্টিক্রিয়ায়
কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান, সে প্রতিবেশী রাষ্ট্রই হোক বা দূরদেশি রাষ্ট্র হোক, এমন নজীর নিকট বা দূর
অতীতে পাওয়া যাবে না একটিও। অথচ এমনি একটি উদার নজীর স্থাপন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা।
ভারতের রাষ্ট্রপতি
প্রনব মুখার্জীর পত্নী শুভ্রা মুখার্জীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক শোক বার্তা পাঠানোর
শিষ্টাচার প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বাইরে
গিয়ে ছুটে গেলেন নয়াদিল্লী ভারতপতির পত্নীর অন্তেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে। সংবাদ মাধ্যমে
এর পেছনে কারণ হিসাবে যা উল্লেখ করা হয়েছে
তা হচ্ছে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্বপরিবার হত্যার সময় বিদেশে
অবস্থান করায় প্রানে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে কয়েক বছর রাজনৈতিক আশ্রয়
দিয়েছিল ভারত। সে সময় পিতৃ-মাতৃ পরিজনহীন এই দুই বোনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালিন
প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা বাঙালি প্রনব মুখার্জী এবং তার স্ত্রী বাংলাদেশের নড়াইলের
মেয়ে শুভ্রা দেবী। তাঁদের বাড়ীতে ছিলেন শেখ হাসিনা ঘরের মেয়ের মত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে
বাঙালির কৃতজ্ঞতাবোধের অনন্য নজীর দেখালেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে থাকা শেখ হাসিনা। ভারত
দেখলো বিশ্ব দেখলো বাঙালির উপলব্ধি এবং অনন্য কৃতজ্ঞতাবোধ। শুধু কি তাই? কেবল ব্যক্তিগত
পারিবারিক কৃতজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ দেখালেন শেখ হাসিনা? ব্যক্তিমানুষের আবেগ অনুভূতিরই
শুধু প্রকাশ ছিল তাঁর এই অকস্মিক দিল্লী ছুটে যাওয়ায়?
মোটেই তা নয়। ছিল
রাষ্ট্রনায়কোচিত দুর্লভ বিবেচনাবোধ এবং দূরদর্শিতাও। শেখ হাসিনা জানেন কেবল শেখ পরিবার
নয় শুভ্রা দেবীর মাঝে প্রবল ছিল জন্মভূমি প্রেম। প্রনব মুখার্জীর মাঝেও সততবিরাজমান
বাঙালি ভ্রাতৃত্ববোধ, বাংলা ও বাঙালি প্রেম। বাংলাদেশের সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য এই
দম্পত্তির মাঝে ঐকান্তিক কামনাই কেবল জাগরিত ছিল না, ছিল বাস্তব ভূমিকাও। ভারতের রাষ্ট্রীয়
নীতি প্রণয়নে গত প্রায় চার দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ এমন কি কখনও কখনও বা আনেক ক্ষেত্রেই
নিয়ামক ভূমিকায় ছিলেন প্রনব মুখার্জী। বাংলাদেশ বিরোধী, বাঙালি বিদ্বেষী শক্তিকে নিষ্ক্রিয়
করে দিতে, এদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে অকার্যকর করে দিতে তিনি দিল্লীর ভূমিকা-প্রভাবকে
কাজে লাগিয়েছেন নানাভাবে। ভারতের পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ
মন্ত্রণালয়ে তার দায়িত্ব পালনের সময়গুলোতে প্রনব মুখার্জীকে দেখা গেছে বাংলাদেশের অকৃত্রিম
বন্ধুর ভূমিকায় সদা সক্রিয়। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের মেয়ে শুভ্রা দেবীর তাতে ছিল প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ
অবদান।
ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের
বাংলাদেশ-বান্ধব নীতি প্রণয়নে বলা যায় একক প্রভাবক শক্তিরূপে প্রনব মুখার্জী ভূমিকা
রেখেছিলেন প্রয়োজনে যার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত। জঙ্গী-ধর্মান্ধতা-সন্ত্রাস মুক্ত
করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আজকের অবস্থায় উঠিয়ে আনার ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রনব মুখার্জীর
অবদান হিমালয়সম। শুভ্রা মুখার্জীর অন্তেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়ে নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন
করেছেন বাংলাদেশের দূরদর্শী নেত্রী শেখ হাসিনা। গোটা বিশ্বে এই বার্তাও পৌঁছে গিয়েছে
যে বাংলাদেশ- বাঙালি উপকারীর উপকারের মর্যাদা দিতে জানে।
শুভ্রাদেবীর অন্তেষ্টিক্রিয়ায়
বাঙালি প্রীতি, বাঙালি সংস্কৃতি এবং চিরায়ত বাঙালি লোকাচারে নজীর প্রদর্শন করছেন ভারতের
বঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রনব পত্নীর অন্তেষ্টিক্রিয়ায়
মূখ্যমন্ত্রী মমতাও ছুটে গিয়েছিলেন দিল্লী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন