বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৫

ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে


সময়ের সাফ কথা....
ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে
সংলাপ ॥ বাংলার ইতিহাস, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস-এর বিশদ বিবরণ আর লেখার প্রয়োজন নেই। আসল ইতিহাসের সত্যতা এখন এখন সবাই জানে। সুপরিকল্পিতভাবে এবং সুসংগঠিত হয়ে এক শ্রেণীর জাতীয় শত্রু এই ইতিহাসকে বিকৃত করে দেয়ার  ষড়যন্ত্রে আজও লিপ্ত। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সমাজে কলঙ্কিত করতেও আজও তারা বদ্ধ পরিকর। এক পৈশাচিক ও বর্বরতায় তারা উন্মাদ হয়ে উঠছে। এরা মানুষ নয়, এরা মানুষরূপী দু-পেয়ে জন্তু। এদেরকে দেশবাসী ধীরে ধীরে চিনতে পারছে। বাঙালিরা এদেরকে ঘৃণা করে মনেপ্রাণে। এদের নাম ঘৃণিত নাম। বিবেকবানদের  কলম দিয়ে, মুখ দিয়ে তাদের নাম উচ্চারণ করাও উচিত নয়। এমনকি বাংলা ভাষার অক্ষর দিয়ে এসব বিশ্বাসঘাতকদের নাম লিখে সমালোচনা করাও উচিত নয়। প্রবাদ আছে ‘যাকে ঘৃণা করো, তাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করো’। কাগজে ফলাও করে ছবি ছাপিয়ে (হোক সে ছবি বিকৃত আকারের) বারবার পবিত্র কলমের কালি দিয়ে এদের নাম লিখে সমালোচনা করাও সঠিক কিনা তা বিবেকবানদের ভাববার বিষয়। তাই মনেপ্রাণে ঘৃণার সাথে সাথে বিবেকবানরা তাদেরকে কাগজে কলমে শুধু ঘৃণা করা নয় সব মুদ্রন ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সার্বিক অঙ্গনে তাদের বয়কট করা উচিত বলে চিন্তাবিদরা দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা জোটের একটা অংশ হিসেবে কাজ করছে। স্বাধীনতা উত্তর বিভিন্নভাবে কারো রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণে, কারো অবৈধভাবে জোগাড় করা ক্ষমতাকে সংগঠিত করার কারণে, কারো বা ক্ষমতারোহনের সহায়ক শক্তি হিসাবে সমর্থন আদায়ের কারণে আজ তারা সমাজ ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলা-ফেরা করার অধিকার পেয়েছে। ধর্মের লেবাস পরে ধর্মভীরু মানুষের মাঝে আজ তারা বিস্তৃত। তারা আজও এ দেশকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও গণতন্ত্রকে মেনে নিতে পারেনি, পারেনি স্বাধীনতাকে মেনে নিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর নাখোশ ভাব আজও তারা তাদের চিনৱা থেকে অপসারণ করতে পারেনি। স্বাধীনতাকে নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আজও কটুক্তি করার দুঃসাহস দেখায় তারা।
অপরদিকে নির্লজ্জ দেশপ্রেমিক নামধারী রাজনীতিকরা কেউ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, কেউ জাতির জনকের নাম ভাঙ্গিয়ে,  মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ সেজে গলাবাজি করে সর্বদা দুর্নীতি-লুন্ঠনের কাজে নিজেদেরকে ব্যস্ত রেখে দিন কাটাচ্ছে ক্ষমতার জন্য। তারা কিভাবে দেশপ্রেমের মর্যাদা দেবে এবং কিভাবে জবান বন্ধ করবে ঘৃণিত সেই ধর্মের নামে রাজনৈতিক তথাকথিত ইসলামী দলের। ’৭১-এ এদের চরিত্র আর কার্যক্রম আজ কার কাছে অজানা নয়। ওইসব নরপশুদের বিচার করা হয়নি। বরং ওইসব নরপশুদের নাগরিকত্বসহ রাজনীতি করার অধিকারও ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ তারা নিজেদেরকে নিরাপরাধ হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছে। তাদের কথা, অপরাধই যদি আমরা করে থাকি তাহলে আমরা পুনঃরাজনীতির সুযোগ পাই কি করে এবং নাগরিকত্বই বা ফিরে পাই কি করে? এসব শুনে নতুন প্রজন্মরা হতবাক। সচেতন দেশপ্রেমিকগণ দিশেহারা। মুক্তিযোদ্ধারা লজ্জায় মুখ তুলে তাকাতে পারছে না। প্রশ্ন হলো আইনের ফাঁক গলিয়ে নাগরিকত্ব পেলেই কি এরা নিরাপরাধ এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে? মানবিক আইন বা প্রত্যক্ষদর্শিতার কোনো মূল্য নেই!
সচেতন পাঠক ও নতুন প্রজন্ম ১৯৭১ সনের তৎকালীন পত্রিকার পাতাগুলোতে একটু চোখ বুলালেই দেখতে পাবেন আজকের নাগরিকত্ব ও রাজনৈতিক অধিকার ফেরত পাওয়া ওইসব দু-পেয়ে জন্তুর আসল চেহারা। সংরক্ষণশালাগুলোতে সংরক্ষিত এসব প্রামাণিক দলিল আজকে মুক্তিকামী নতুন প্রজন্মের জন্যই মারণাস্ত্র হাতিয়ার।
নাগরিকত্ব, রাজনৈতিক অধিকার আইনের মাধ্যমে ফিরে পেলেও এরা ভীরু কাপুরুষ। পিছন থেকে ছুরি চালিয়ে অন্ধকারে খুন করে। সামনাসামনি আসতে সাহস পায় না। সচেতনরা কোনোভাবেই এদের দল বা এদের সহযোগিতা করতে পারেন না। ’৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধী তথাকথিত ধর্মীয় দলগুলোর নেতারা দেশ স্বাধীন হবার পর একবার জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতো বা বলতো আমরা ভুল করেছি, আমরা জাতির নিকট ক্ষমাপ্রার্থী এবং আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমাপ্রার্থী অথবা আজও যখন তারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে মিশে সমাবেশে বক্তব্য রাখছে এবং সেই সব সমাবেশে ’৭১ এর ভূমিকার জন্য লজ্জিত হয়ে হাতজোড় করে জাতির নিকট নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতো তাহলে হয়তো জাতি আজ তাদের নিয়ে অন্যরকম চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পেতো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে আজও পর্যন্ত এদের নিকট থেকে জাতির কাছে এমন কোনো আহ্বান আসেনি। নির্লজ্জের মতো এই দেশের পতাকা উড়িয়ে গাড়ি চড়েছে। এরা যে ইসলাম পালন করে তার স্বরূপই এটা যা মুহম্মদী ইসলামের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।
আজও ’৭১ এর ন্যায় তারা ষড়যন্ত্রীর ভূমিকাই পালন করছে। প্রশ্নঃ কেন এদেরকে সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে উৎখাত করা হচ্ছে না? কেন প্রয়োজনে আর একটি একাত্তরের পুনরুত্থান হচ্ছে না? কতটুকু স্পর্ধা থাকলে আজ তারা মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর উপর কটাক্ষ করে বক্তব্য রাখতে পারে। এই স্পর্ধার ভিত্তি কোথায়? চিন্তাবিদ মহলের একটাই ধারণা তা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ক্ষমতার লোভ’ তাদেরকে জিইয়ে রাখছে। একমাত্র ক্ষমতা লোভের কারণেই স্বাধীনতার শত্রু ও প্রথম শ্রেণীর রাজাকাররা ক্ষমতাকে সংহত করেছে। পরবর্তীতে এসব রাজাকারদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন এবং বর্তমান চলমান অবস্থায় এদেরকে নিয়ে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচন করার পরিকল্পনা জাতিকে রাজনীতিকদের উপর বিতশ্রদ্ধ করে তুলছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পাশাপাশি সহাবস্থান করছে রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধা।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য, বাংলাদেশকে তথাকথিত রাজনৈতিক ইসলামের আওতায় আনার জন্য এবং তাদের কসাই চরিত্র প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাংলার মাটিতে, তারা ছলে-বলে-কৌশলে সার্বিক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সুদীর্ঘ পরিকল্পনার নীল নক্সা যে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে তা ক্ষমতালোভী অন্য রাজনীতিকরা ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে থাকার কারণে দেখার সুযোগ পাচ্ছে না। নতুন প্রজন্মের কাছে  নিরীহ ধর্মভীরু জাতি একটাই আবেদন করছে সাময়িক ভোগ, ব্যক্তি স্বার্থ ও সম্পদ বৃদ্ধি করার জন্য বর্তমানে সময় ও পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সংস্কারহীন সমাজ ব্যবস্থায় ও রাষ্ট্র পরিচালনা কাঠামোর মধ্য দিয়ে রাজনীতিকরা দেশটাকে যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে সেখানে প্রতিবাদের ঝড় তুলতে হবে যাতে অগ্রসরমান নতুন প্রজন্ম একশ’ বছর পিছিয়ে পড়তে না পারে। দেশবাসীর কাছে আহ্বান, স্বাধীন সার্বভৌমত্বের জন্য যে দেশপ্রেমিকরা খুনীদের হাতে বুকের তাজা রক্ত এ মাটিতে ঢেলে দিয়েছে সেই খুনী গোষ্ঠীর সাথে সামিল হবেন না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন