বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৫

বাঙালি মানসিকভাবে দারিদ্র্র্যের মধ্যে আছে!


বাঙালি মানসিকভাবে দারিদ্র্র্যের মধ্যে আছে!
শেখ উল্লাস ॥ ‘মান’ শব্দের সাথে ‘হুশ’ শব্দের মিলনে গঠিত শব্দ ‘মানুষ’। এ প্রসঙ্গে হাক্কানী সাধকের অমূল্য বাণী- ‘মানুষ নামের মান-হুশটাকে মরতে দিও না’। স্বাধীনতা ও প্রযুক্তির আশীর্বাদ হিসেবে আজ দেশের মানুষদের একটি অংশ বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে, কিন্তু সেই সব মানুষের চিত্ত কতটুকু বড় হয়েছে, দেশে প্রকৃত মানুষ কত জন আছেন তা নিয়ে চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। গত ২২শে আগষ্ট শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে গণমানুষের অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত লিখিত ‘বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, ‘আমরা মানসিকভাবে দারিদ্র্র্যের মধ্যে আছি। আমাদের মানস কাঠামোয় যে দারিদ্র্য আছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা এখনো সাদা চামড়ার মানুষদের সঙ্গে কথা বলার সময় সোজা হয়ে কথা বলতে পারি না, মানসিকভাবে যেন কিছুটা ভেঙ্গে পড়ি।... ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগার একেবারে খালি থাকা অবস্থায়ও বিশ্বব্যাংকের অনৈতিক শর্তের ঋণের প্রস্তাব অসম সাহসিকতার সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু’। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অবদান তিনি বাঙালির আত্মপরিচয় দিয়েছেন’। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ব্যারিষ্টার এম আমিরুল ইসলাম বলেন,‘বঙ্গবন্ধু সশরীরে বেঁচে না থাকলেও তাঁর মতাদর্শ রয়েছে। সেটার বাস্তবায়ন হলেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত। দেশে এখন জনসংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু প্রকৃত মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে’। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘যারা শোকসভায় বক্তব্য দেন শুধু তাদেরই ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, কিন্তু বঙ্গবন্ধু যাদের জন্য জীবন দিয়েছেন সেই গরীব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। বিদেশি প্রভুদের যোগসাজশে এদেশের তথাকথিত শিক্ষিত তথা কাপুরুষেরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পাকিস্তানী ধারায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধু নামটিকেই নিষিদ্ধ করে রেখেছিল দীর্ঘ একুশ বছর । সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্টের পর তাঁর সরকার বা দলের  কত জন মানুষ সেই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ করেছিলেন? আজ যখন বঙ্গবন্ধুর দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়, বঙ্গবন্ধু ক্রমেই হয়ে উঠছেন সার্বজনীন, সরকারি-বেসরকারি সর্বস্তরেই বঙ্গবন্ধুর নামকে ব্যবহার করে অনেককেই দেখা যাচ্ছে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বৃদ্ধির চেষ্টায় লিপ্ত তখন বঙ্গবন্ধুর ওই বাণীটিই স্মরণ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত-শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে’। সেই শোষিতের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু সংবিধানে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে সমুন্নত রেখেছিলেন যা আজ কারো কারো কাছে স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর আজো যখন এদেশের জনসংখ্যার বিরাট অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, রাজধানীতে বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনী সংস্থার ভাস্কর্যের চাপায় প্রাণ দিতে হয় ভ্যানচালককে এবং এর জন্য কাউকেই জবাবদিহি করতে হয় না বা ক্ষতিপূরণও দিতে হয় না, তখন সেই এই প্রশ্নটিই বড় হয়ে দেখা দেয়, দেশে প্রকৃত মানুষের সংখ্যা কত? এই অবস্থাটিকে দুঃখজনক ছাড়া আর কি বলা যায়?  তাই বাঙালি সাধকের ‘মানুষ হ, মানুষ হ, আবার তোরা মানুষ হ’, বিশ্বমানব হবি যদি তুই কায়মনোবাক্যে বাঙালি হ’-এই বাণীর তাৎপর্যটুকু আবারো নতুন করে উপলদ্ধির সময় এসেছে। সমাজে মানুষ অর্থাৎ প্রকৃত মানুষের সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি পায় সেই চেষ্টায় সকলকে নিয়োজিত হওয়ার সময় বয়ে যাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন